দিল্লি, 20 সেপ্টেম্বর : রবিবার মুখোমুখি হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ৷ ভারত ও অ্যামেরিকার বাণিজ্যিক সম্পর্কে আসতে চলেছে নয়া দিশা ৷ কিন্তু আদানপ্রদান হতে চলেছে যথেষ্ট কৌশলগত ৷ পরস্পরের থেকে সর্বোচ্চ মাত্রার কিছু আদায় করে নেওয়াটা দু'পক্ষের কাছেই খুব একটা সহজ হবে না ৷ ভারত ও অ্যামেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কে এই শতকের অন্যতম সম্ভাবনাময় কৌশলগত অংশীদারিত্বের উদাহরণ হতে চলেছে এই বৈঠক ।
21 থেকে 27 সেপ্টেম্বর অ্যামেরিকা সফরে থাকছেন মোদি ৷ বায়ুসেনাবাহিনী সংক্রান্ত কোনও বড় ঘোষণা করা হতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রবিবারের জনসভায় বড় কোনও ঘোষণা করতে পারেন তিনি ৷ চলতি সপ্তাহেই রাষ্ট্রসংঘের অধিবেশন ৷ সেখানেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দু’বার কথা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৷ 22 সেপ্টেম্বর মোদির সঙ্গে "হাউডি মোদি"-তেযোগ দেবেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ৷
রবিবার কী ঘোষণা হতে চলছে তা জানা নেই, তবে 3 হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে ৷ অ্যামেরিকায় পণ্য রপ্তানি নিয়ে ভারতকে 'জোর ধাক্কা’ দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প । অ্যামেরিকায় পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতকে দেওয়া বিশেষ সুযোগ সুবিধা বাতিল করে দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন । কথা হতে পারে এই বিষয়েও ৷ অ্যামেরিকায় ভারতের রপ্তানির পরিমাণ 2017-2018 অর্থবর্ষে ছিল প্রায় 4800 কোটি ডলার ৷
সোমবার পীযুষ গোয়েল বলেন, ''একটি চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে ৷'' তবে সেটি কী, তা জানা যায়নি ৷ ঘরোয়া রাজনীতির দিকে চোখ রাখলে স্থানীয় চাকরি ও ব্যবসায় জোর দিচ্ছেন ট্রাম্প ৷ দিল্লির চাপানো 'অতিরিক্ত মাশুল'-এ নাস্তানাবুদ অ্যামেরিকা ৷ ট্রাম্প ভারতকে 'মাশুল রাজা' বলেও উল্লেখ করেন ৷ চলতি বছরের জুনে 'জেনারেলাইজ়ড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্স'-এ (GSP) অস্থিরতা আরও বেড়েছে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ৷
GSP-র ফলে করমু্ক্ত হয়ে কোনও দ্রব্য লাভবান দেশের থেকে প্রবেশ করতে পারে অন্য দেশে ৷ অর্থনীতিও চাঙ্গা হয় ৷ এর ফলে প্রায় 129টি দেশ থেকে 4,800টি দ্রব্য আনা হয়েছে অ্যামেরিকার বাজারে ৷ পণ্য রপ্তানির সুবিধা বাতিলের আগে ভারতই GSP-র অধীনে সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ ছিল ৷ পণ্য রপ্তানির সুবিধা বাতিলের ফলে দেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কমছে ৷
এত দিন ভারতও সেই সুবিধা পেত। দীর্ঘ দিনের পুরোনো অ্যামেরিকার বাণিজ্য নীতির সুবিধা পেত অন্তত দু’হাজার ভারতীয় পণ্য। শুল্ক ছাড়ের ফলে, ২০১৭ সালে ৫৭০ কোটি ডলারের ভারতীয় পণ্য অ্যামেরিকার বাজারে ঢুকেছিল। কিন্তু এ বছর মার্চ মাসে প্রথম বার ভারতকে সেই প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর যুক্তি ছিল, GSP প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পায় ভারত। অথচ ভারতের বাজারে মার্কিন পণ্যের উপর চড়া হারে শুল্ক চাপানো হয় ৷ কম আয়সম্পন্ন দেশ বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের প্রসঙ্গ উঠে আসছে এ বিষয়ে ৷ কাজেই মোদি-ট্রাম্প বৈঠকের মূল প্রাপ্তি হতে পারে GSP ফিরিয়ে আনা ৷ দিল্লি কাঠবাদাম ও আপেলে মাশুল বৃদ্ধি করায় তা উঠিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন ট্রাম্প ৷
2018 সালের শুরুতে ওয়াশিংটন স্টিলে 25 শতাংশ ও অ্যালুমিনিয়ামে 10 শতাংশ লেভি চাপানোয় দিল্লি জানিয়েছিল, এটা অনৈতিক ৷ সরকারি স্তরে কথাবার্তা চলছিল এ নিয়ে ৷ এমন সময় ফ্রান্সের বিয়াত্রিজে চলতি বছরের অগাস্টে মিনিট 40 কথা হয় মোদি-ট্রাম্পের ৷ 800 কোটির আমদানি পাইপলাইনে রয়েছে ৷ ট্রাম্প মাশুল কমালেই খুশি, এমনটা মনে করা হচ্ছে ঠিকই, তবে মেডিকেল ও ডেয়ারি শিল্পের কথা ধরলে ডেয়ারি শিল্পের বিষয়টি যথেষ্ট জটিল ৷ তবে এটা ঠিক, আমদানিকৃত ওষুধ ও মেডিকেল ডিভাইসে দিল্লির দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি যথেষ্ট জরুরি ৷ 2016 সালে কার্ডিয়াক স্টেন্টস, 2017 সালের অগাস্টে নি ইমপ্ল্যান্টের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য ৷ অ্যামেরিকা চায়, ভারতে তৈরি কার্ডিয়াক স্টেন্টস, নি ইমপ্ল্যান্টের ক্ষেত্রে মূল্য নিয়ন্ত্রণ যেন তাদের তৈরি যন্ত্রপাতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই করা হয় ৷ মোদি এই বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলতে পারেন ৷
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির অপর দিক হল ভারতের তথ্য স্থানীয়করণ নীতি ৷ যে কোনও সংবেদনশীল তথ্যের স্থানীয়করণে নয়া নীতির কথা জানিয়ে নোটিশ দিয়েছে ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ৷ কার্ড পেমেন্ট পরিষেবা, ভিসা ও মাস্টার কার্ড, এছাড়াও পেটিএম, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগলের মতো সংস্থাও ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনের সুবিধা দিচ্ছে ৷ এরমধ্যে অ্যামেরিকার সংস্থা গুগল, মাস্টার কার্ড, ভিসা, আমাজ়ন এই নয়া নীতি নিয়ে ভাবনাচিন্তার স্তরে রয়েছে ৷ যদিও জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে দেশের বাইরে কোথাও তথ্য সঞ্চয় রাখা সম্ভব নয় ৷ কিন্তু তথ্য সঞ্চয়কে হাতিয়ার করেই স্থানীয় স্টার্ট আপ সংস্থার বিষয়টিও রয়েছে ৷ সার্ভার, UPS, জেনারেটর-সহ কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে ৷ হিউস্টনে এ সবকিছুরই একটা ইতিবাচক দিক লক্ষ্য করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ GSP-তে ভারত ফের অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, সেই দিকেই তাকিয়ে আন্তর্জাতিক মহল ৷