পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

বাড়ছে বায়ুদূষণ, তবু উদাসীন দেশ!

প্রতিবছর 12 লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বায়ুদূষণে। বাতাসের মানের দিক থেকে 180 টি দেশের তালিকায় একেবারে নিচের দিকে রয়েছে ভারত। এই অবস্থায় ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল জরুরি নির্দেশ দিলেও মাত্র 4 টি রাজ্যের 46 টি শহর কিছু উদ্যোগ নিয়েছে৷

Increasing air pollution,
বায়ুদূষণ

By

Published : Sep 2, 2020, 4:33 AM IST

দিল্লি, 2 সেপ্টেম্বর: সরকারি তথ্য বলছে, ভারত হল এমন একটি দেশ যেখানে লাগাতার বায়ুদূষণের জেরে প্রতিবছর 12 লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। NCAP (ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম)-র লক্ষ্য প্রাণসংশয় ঘটানো এই বায়ুদূষণকে রোধ করা। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (NGT) অতীতে এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য 2017 সালের দূষণমাত্রার তুলনায় 2024 সালের মধ্যে 20-30 শতাংশ কমাতে বলে। সঙ্গত কারণেই সম্প্রতি NGT কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রকের একটি বিবৃতির সমালোচনা করেছে৷ যেখানে বলা হয়েছে, এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন এবং একটা মাত্রার পর দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করা বাস্তবসম্মত নয়।

বাতাসের মানের দিক থেকে 180 টি দেশের তালিকায় একেবারে নিচের দিকে রয়েছে ভারত। এই কলঙ্কমোচনের উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল নভেম্বর 2020-র মধ্যে 122টি শহরে এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং সেন্টার তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিল। তারা চাইছে যে অন্তত আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ করা হোক। ট্রাইব্যুনাল ধৈর্য হারাচ্ছে, কারণ 4 টি রাজ্যের মাত্র 46 টা শহর কিছু উদ্যোগ নিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও ওড়িশার বহু শহর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করেছে। এটা ক্ষমারও অযোগ্য যে সময়ের চাহিদা মেনে সংশোধনের বদলে পরিবেশ দপ্তর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা সম্পর্কে উদাসীন। সংবিধানের ভাবনার পরাজয় হচ্ছে বলে ট্রাইব্যুনালের যে অসন্তোষ, তা সম্পূর্ণ সমীচীন। শুধুমাত্র সময়সীমা বাড়ালেই যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, এমন কোনও সুযোগ নেই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেছেন, জীবন সংশয় ঘটানো দূষণ "আর বরদাস্ত করা হবে না"; আপৎকালীন অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে নীতি আয়োগ। দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শহর গ্যাস চেম্বারকে মনে করিয়ে দিলেও কেন 122টি শহরের কোথাও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রূপায়ণ করা হল না? CPCB (সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড) যারা শহরগুলোর দূষণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা অনুমোদন করে তারা প্রয়োগের দায়িত্ব রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডগুলোর ওপর ঠেলেছে। যদিও বর্তমানে দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে তারা, শহরগুলোতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর কী করতে হবে তা নিয়ে স্বচ্ছ্বতার অভাব রয়েছে, বিশেষ আইনি নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং বিভিন্ন দফতরের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাও দেখা যাচ্ছে। এধরণের ক্ষেত্রে সময়ে কাজ শেষ করতে NGT-র নির্দেশের তাহলে অর্থ কী? আমেরিকা, যারা একসময়ে ‘CAA’ (ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট) নামের আইন এনেছিল, তারা সবসময় নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণবিধি সংশোধন করে গেছে৷ বিধিভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নিয়েছে। সাতের দশক থেকে ছয় ধরণের দূষকপদার্থ নির্গমণের পরিমাণ 77 শতাংশ কমেছে সেখানে৷ যার মধ্যে রয়েছে কার্বন মনোক্সাইড এবং সালফার ডাই-অক্সাইড। এর মূল কারণ সরকারের দায়বদ্ধতা। অস্ট্রিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স ও সিঙ্গাপুরের ধাঁচে দূষণ ছড়ানো গাড়িকে বিপুল জরিমানা, বনাঞ্চল বাঁচাতে বিশেষ ব্যবস্থা, চিনা মডেলে দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্পগুলোকে নিয়ন্ত্রণ...বহু ক্ষেত্রে ভারতে পরিকল্পনা রূপায়ণ শুধু কাগজ-কলমেই থেকে যায়৷ সংবিধানে উল্লিখিত জীবনের অধিকারের পরাজয় হয়।

একমাত্র যদি দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্পগুলোকে শহরের প্রান্তে সরানো যায়, যদি বসতি অঞ্চল অফিসগুলোর কাছাকাছি চলে আসে, এবং পরিবহণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ সুনিশ্চিত হয়, তাহলেই দেশে বাতাসের মান আরও উন্নত হবে।

ABOUT THE AUTHOR

...view details