বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই পড়াশোনা করে ডিগ্রি লাভ করে। কিন্তু, অসৎ পথ পছন্দ করে যারা, তারা ঝোঁকে ডিগ্রি কেনার দিকে। ভালো করে পড়াশোনা করা, ক্লাসে পূর্ণ সময়ের উপস্থিতি, প্রতিবছর পরীক্ষা দেওয়া, ভালো নম্বর পাওয়া এবং কঠোর পরিশ্রম করে অতিরিক্ত দক্ষতা অর্জন সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি। যাদের এত ধৈর্য্য নেই; কলেজ গিয়ে, পরীক্ষা দিয়ে সফল হওয়ার ধৈর্য্য নেই, তাদের জন্য অনেক অসাধু গ্যাং ভুয়ো ডিগ্রি নিয়ে অপেক্ষা করে। শিক্ষা যখন দেশে লাভদায়ি ব্যবসা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, বাড়ছে এই ধরনের গ্রাহক এবং ব্যবসায়ীর সংখ্যা। ফলস্বরূপ, দেশে ভুয়ো ডিগ্রির বন্যা বইছে।
মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য দেশের প্রতি প্রান্তে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে ভুয়ো প্রতিষ্ঠান। দশ থেকে পনেরো হাজার খরচ করলেই পাওয়া যাবে হাতে গরম ভুয়ো ডিগ্রি। স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট মিলবে কুড়ি হাজার থেকে পঁচাত্তর হাজার খরচ করলে। প্রার্থীদের চাহিদামতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়ো সার্টিফিকেট দিয়ে দেবে সংশ্লিষ্ট দুষ্কৃতীদল। বছরখানেক আগে, তেলুগুভাষী রাজ্যে PhD সার্টিফিকেট সংক্রান্ত দুর্নীতি সামনে আসে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করে ওই সার্টিফিকেট সরবরাহ করছিল ভুয়ো কিছু প্রতিষ্ঠান। দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় হায়দরাবাদের জওহরলাল নেহরু টেকনলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি। ভুয়ো সার্টিফিকেট নিয়ে নিযোগ পেয়েছেন এহেন লেকচারারদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন প্রাক্তন রাজ্যপাল নরসিমহন। তবে তারপর আর তা নিয়ে নতুন করে কিছু এগোয়নি। সম্প্রতি ইনাডু-ইটিভি PhD দুর্নীতির গোপন সত্য খুঁড়ে বের করতে অপারেশন চালায়। খোঁজ মেলে, হায়দরাবাদের প্রায় ১০টি কনসালটেন্সির। যাদের সাহায্যে তামিলনাড়ুর আন্নামালাই ইউনিভার্সিটি ও কর্নাটকের বেঙ্গালুরু ইউনিভার্সিটির নামে নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছিল। প্রত্যাশিত সার্টিফিকেট পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছিল এখান থেকেই। এরপর এম টেক প্রার্থীদের ভুয়ো PhD ডিগ্রির বিষয়ে তদন্ত করে সামনে আসে উত্তরপ্রদেশস্থিত শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর ইউনিভার্সিটির বেআইনি কিছু কার্যকলাপ।
এই ধরনের কনসালটেন্সিগুলি PhD ডিগ্রি কীভাবে দেয় ? লাখ চারেক টাকা দিলেই ইচ্ছুকদের হাতে চলে আসবে সিনোপসিস, ডিসার্টেশন এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের PhD ডিগ্রি। তাও ছয়মাসের মধ্যেই। অন্যান্য ডক্টরেট ডিগ্রির ক্ষেত্রে ফি অবশ্য কম। এই দুর্নীতি সামনে আসার পর কনসালটেন্সিগুলির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। দেশে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান আরও রয়েছে।
ভুয়ো সার্টিফিকেটের বন্যা ! পরিস্থিতি গুরুতর
টাকা ফেললেই ডিগ্রি ! লাখ চারেক টাকা খরচ করলেই হাতে গরম PhD সার্টিফিকেট ! দেশের জ্বলন্ত এক সমস্যা। বিশেষ প্রতিবেদন
ছবিটি প্রতীকী, সৌজন্য পিক্স্যাবে
সরকারি তথ্য বলছে, ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ৭৮ হাজার পড়ুয়া PhD প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। পরের সাত বছরের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৬০,০০০। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতে, গবেষণার গুণমান গ্রাহ্য স্ট্য়ান্ডার্ডের সমতুল নয়।
ভুয়ো সার্টিফিকেট চক্র আর নিম্নমানের শিক্ষা মূল্যহীন করছে দেশের ইমেজ। বিষয়টি রুখতে কোনও অ্যাকশন প্ল্যান আছে বলে মনে হয় না। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ভুয়ো এই সার্টিফিকেট দুর্নীতির কোনও শেষ হবে না।
Last Updated : Oct 24, 2019, 11:56 PM IST