পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

গালওয়ানে মৃত কত জন PLA সেনা ? উত্তর এড়ালেন চিনা রাষ্ট্রদূত

ভারতে উপস্থিত চিনা রাষ্ট্রদূত সান উইডং বৃহস্পতিবার দাবি করেন যে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC)-এর বেশির ভাগ অঞ্চলে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে ৷ ‘তাপমাত্রা’ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে । কিন্তু তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, 15 জুন গালওয়ানে PLA-এর কত জন সেনার মৃত্যু হয়েছে, উইডং সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান— সিনিয়র জার্নালিস্ট স্মিতা শর্মার রিপোর্ট ।

Chinese envoy deflects question on PLA soldiers killed in Galwan
গালওয়ানে মৃত কত জন PLA সেনা ? উত্তর এড়ালেন চিনা রাষ্ট্রদূত

By

Published : Aug 4, 2020, 3:24 PM IST

নয়াদিল্লি, 4 অগাস্ট : গালওয়ান উপত্যকায় 15 জুন মধ্যরাতের লড়াইয়ে, যেখানে 20 জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে চিনের তরফে ঠিক কত জন সেনার মৃত্যু হয়েছে ? ভারতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত সান উইডংকে সরাসরি এই প্রশ্ন করা হয় । দিল্লিতে ইনস্টিটিউট ফর চাইনিজ স্টাডিজ (ICS) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়েছিলেন তিনি । কিন্তু এই প্রশ্নের জবাবে সান একটি শব্দও খরচ করেননি । প্রসঙ্গত বেজিং এখনও এই বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি যে, সে দিন PLA-এর ঠিক কত জন সেনার মৃত্যু হয়েছিল । প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টে তিনি সে দিনের সংঘর্ষের ঘটনার জন্য ভারতীয় সেনাদেরই দায়ী করেন । চিন যে কোনও অবস্থাতেই ভারতের কৌশলগত ভয়ের জায়গা নয় তা দাবি করে সান বলেন, “গালওয়ান উপত্যকায় যে ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনায় সঠিক ও বেঠিকের বিষয়টি একেবারে পরিষ্কার । সে দিনের ঘটনার জন্য চিন কোনও ভাবেই দায়ী নয় ।” শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের জন্য চিন সদা প্রস্তুত বলেও দাবি করেন তিনি ।

এর আগে তিনি বলেন, “দুই প্রান্তেই যৌথ প্রয়াসের ফলে বেশির ভাগ অঞ্চল থেকেই সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে । ওই এলাকা এখন প্রায় শান্ত এবং বেশিরভাগ জায়গাতেই উত্তেজনা কমতে শুরু করেছে ।”

গালওয়ান নিয়ে সাম্প্রতিককালে চিনের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠে এসেছে, সে সব উড়িয়ে দিয়ে তিনি দাবি করেন, “প্যাংগং হ্রদের উত্তর প্রান্তে চিনের চিরাচরিত সীমান্ত রেখা ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC)-এর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই । কোনও এলাকাকেই চিন নতুন করে দখল করেনি ।”

2002 সাল থেকে LAC বরাবর মানচিত্র তৈরি ও সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা নিয়ে চিনের গা ছাড়া মনোভাব প্রসঙ্গে চিনা রাষ্ট্রদূত বলেন, “আলোচনার সময় যদি এক পক্ষ নিজের ইচ্ছামতো LAC-র পুনর্বিন্যাস করে, তখন তা নতুন সমস্যার জন্ম দেয় । এর ফলে LAC প্রকৃত উদ্দেশ্যই শুধুমাত্র বিনষ্ট হয় ।”

ভারত ও চিনের সীমান্ত সমস্যাই ছিল এ দিনের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু । এই আলোচনার ফাঁকে অস্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনার ব্যারি ও ফ্যারেল বিদেশমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলাদা ভাবে মুখোমুখি আলোচনায় বসেন । প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শান্তি ফিরিয়ে আনার আর্জি জানিয়ে তিনি ওই এলাকায় উত্তেজনা কমাতে ভারতের পাশে থাকার বার্তা দেন । সংবাদ মাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়ে অস্ট্রেলীয় দূত বলেন, “বিনা প্ররোচনায়, একক সিদ্ধান্তে স্থিতাবস্থা নষ্ট করার যে কোনও পদক্ষেপের বিরোধিতা করে অস্ট্রেলিয়া । এর ফলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় ও স্থায়িত্ব নষ্ট হয় । এই বিষয়ে আমার সঙ্গে ভারতের বিদেশমন্ত্রীর সবিস্তার আলোচনা হয়েছে । এলাকার শান্তি রক্ষার জন্য বহু বছর ধরে চলে আসা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি মেনে চলা উচিত ।” ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে, “দক্ষিণ চিন সাগরে ঘটে চলা সাম্প্রতিক বহু কাজকর্ম নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তিত অস্ট্রেলিয়া । এই সব কার্যকলাপের ফলে ওই এলাকার স্থিতাবস্থা নষ্ট হতে পারে ।”

ICS-এর ওই অনুষ্ঠানে অবশ্য সান উইডং দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন এবং দাবি করেন, চিনের গায়ে সাম্রাজ্যবাদের তকমা সেঁটে দেওয়া একেবারেই উচিত নয় । উল্টে ভারতের ঘারে দোষ চাপিয়ে তাঁর দাবি, অভ্যন্তরীণ সম্পর্কে রদবদল করে বেজিংয়ের উপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে নয়াদিল্লি । ভারতের আগে পাকিস্তানে রাষ্ট্রদূত হিসাবে কাজ করা সান কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, “তাইওয়ান, হংকং, জিনজিয়াং এবং জিজ্যাং একেবারেই চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয় । এর সঙ্গে চিনের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার বিষয় জড়িত । চিন যেমন অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না, তেমনই তারা চায় অন্য কেউ যেন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে ।”

অন্য দিকে ব্রুকিংসের এক সেমিনারে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি লিজা কার্টিস বলেন, “প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে সাম্প্রতিক সঙ্ঘাত এশিয়ার সাপেক্ষে চিন ও ভারতের সম্পর্কের মাত্রায় বদল এনেছে । দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির প্রতি চিনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং এই অবস্থানের বিবর্তনের ব্যাখ্যায় আমি গত কয়েক মাস ধরে ভারতের সঙ্গে তাদের সীমান্ত সমস্যার বিষয়টির দিকে নজর দেওয়ার কথা বলব । তবে সবচেয়ে ভাল খবর এই যে, কয়েক সপ্তাহের টেনশনের শেষে দুই পক্ষই সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এটা খুবই ভাল পদক্ষেপ । আমরা আশা করি এই প্রক্রিয়া থেমে যাবে না । কিন্তু আমার মনে হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতের উপর যে প্রবল চাপ চিন দিয়েছে, তাতে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে ভারতের চিন্তা ভাবনায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে ।” এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলেও দাবি করেন আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অধিকর্তা কার্টিস ।

তিনি আরও বলেন, “ভারত দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারা চিনের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে । চিনা অ্যাপে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং বিভিন্ন চিনা বিনিয়োগে স্থগিতাদেশ জারি করে ভারত অবশ্য অর্থনৈতিক তাস খেলেছে । আমি নিশ্চিত যে, গোটা ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকা এই বিষয়টির দিকে সতর্ক নজর রাখছে । তবে আমার মনে হয় বাকি সবাই ভারতের এই চাল থেকে উদ্বুদ্ধ হবে ।”

সামগ্রিক ভাবে দক্ষিণ এশিয়ার উপর ভারত ও চিনের এই অবস্থার প্রভাবের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে কার্টিস বলেন, “ বহু বছর আগেই এটা বোঝা গিয়েছিল যে, চিন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা এত সহজে মেটার নয় । একই সঙ্গে এটাও বোঝা গিয়েছিল যে, দুই রাষ্ট্রের যে কোনও একটির উত্থান অন্য রাষ্ট্রের পক্ষে অস্বস্তির বিষয় হবে । আমরা এটা দেখেছি যে, ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র, যেমন নেপাল এবং শ্রীলঙ্কায় নিজেদের প্রভাব বাড়িয়েছে চিন । বেজিং যে শুধুমাত্র এই দেশগুলিকে অর্থনৈতিক নাগপাশে আবদ্ধ করছে তা-ই নয়, তার এই সব দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও নাক গলাচ্ছে । বাংলাদেশ বরং এ বিষয়ে যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে এবং আমি মনে করি ভারসাম্যের বিদেশনীতি নিয়ে তাদের আরও ভাবনাচিন্তা করা উচিত । পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক শক্তিশালী নিরাপত্তার বন্ধনে আবদ্ধ । এর একটা বড় অংশ জুড়ে অবশ্য রয়েছে ঋণের মাধ্যমে চিনের প্রতি পাকিস্তানের অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) ।”

ABOUT THE AUTHOR

...view details