হায়দরাবাদ, 13 এপ্রিল:নয়াদিল্লিতে আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনে মার্গদর্শী চিট ফান্ডের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করা হয় ৷ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক সম্মেলনটি করেছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশ সিআইডির এডিজিপি এন সঞ্জয় ৷ মার্গদর্শীর বিরুদ্ধে একটি মামলার কথা উল্লেখ করে সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যাবলী পেশ করেন তিনি ৷ তবে, অন্ধ্রপ্রদেশ সিআইডির তরফে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি ৷ তার মধ্যে যেগুলি রয়েছে, সেগুলি হল- এখনও পর্যন্ত মার্গদর্শীর বিরুদ্ধে মোট কতগুলি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ? তথাকথিত যে জালিয়াতির উল্লেখ করা হচ্ছে, তার পরিমাণ কত ? এমন কোনও গ্রাহক কি রয়েছেন, যিনি অভিযোগ করেছেন যে নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি তাঁর প্রাপ্য অর্থ ফেরত পাননি ? নিয়মলঙ্ঘনের প্রশ্নে মার্গদর্শীর বিরুদ্ধে কতগুলি অভিযোগ জমা পড়েছে ? সিআইডি আধিকারিকের মতে মার্গদর্শী কোন কোন আইন ভঙ্গ করেছে ? কতজন উপভোক্তা তাঁদের বিনিয়োগ করা অর্থ খুইয়েছেন ?
সাংবাদিকদের লাগাতার প্রশ্নে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে যান সঞ্জয় ৷ উলটে তিনি প্রশ্ন করেন, "যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষ কাঁদতে কাঁদতে সরকারের কাছে আসবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কি আমাদের অপেক্ষা করে বসে থাকতে হবে ?" সিআইডি আধিকারিকের বক্তব্য হল, মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব ৷ তিনি বলেন, যখন 'দুর্নীতি' হবে, তখন আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না ৷ এই ধরনের মামলায় সরকারকেই হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয় !
নতুন বিতর্ক:
এই প্রসঙ্গে অ্যাগ্রিগোল্ড প্রকল্পের সমান্তরাল সমস্যার কথা বলেন সিআইডি আধিকারিক ৷ তাঁর মতে, বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি দিতে এই ঘটনা মানুষকে আন্দোলনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে ৷ আমরা কি ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করব ? যেই হোক না কেন, বড় অথবা ছোট, আমরা কি কোনও সংস্থা ধসে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব ?
সিআইডি আধিকারিক জানান, স্ট্যাম্পস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশনসের আইজি তাঁদের কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷ তার ভিত্তিতেই মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ একইসঙ্গে, ওই আধিকারিকের দাবি, এই ঘটনায় কত টাকার দুর্নীতি হয়েছে, তা তার জানা নেই ! তবে, তদন্তের মাধ্যমে তাঁরা সেটা জানার চেষ্টা করবেন ৷
সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক সম্মেলনের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল:
সিআইডি তরফে এই সম্মেলনের ভূমিকায় বলা হয়, অন্ধ্রপ্রদেশে প্রকাশ্য়ে আসা একটি আর্থিক অপরাধ এবং জালিয়াতি সম্পর্কে কথা বলতে আমরা এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছি ৷ এই দুর্নীতি শুধুমাত্র অন্ধ্রপ্রদেশেই সীমাবদ্ধ নেই ৷ বরং তা প্রতিবেশী তেলাঙ্গানা, তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকেও ছড়িয়ে পড়েছে ৷ তাই আমাদের মনে হয়েছে, এটি জাতীয় স্তরেই তুলে ধরা উচিত ৷
1982 সালে চিট ফান্ড আইন আসে ৷ 1970-এর দশকে বেশ কিছু জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছিল ৷ তার প্রেক্ষিতেই এই আইন আনা হয় ৷ কিন্তু, এই আইন তৈরির অনেক আগেই একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে 1962 সালে মার্গদর্শী প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ যদিও তাদের 1982 সালের আইন মেনে চলারই কথা ৷ আইনকে অবহেলা করা যাবে না ৷ 2008 সালে অন্ধ্রপ্রদেশে প্রয়োজনীয় আইন কার্যকর করা হয় ৷ কিন্তু, মার্গদর্শী সংস্থা কেবলমাত্র কোম্পানি আইনের নিরিখেই নিজেদের পক্ষে তাদের ব্যালেন্স শিট পেশ করতে থাকে ৷
যদিও মার্গদর্শী কখনও চিট ফান্ড আইন অনুসারে তাদের ব্যালেন্স শিট পেশ করেনি, তবুও তারা একেবারে 'মাঠে নেমে' চিট ফান্ডের ব্যবসা চালিয়ে যায় ৷ উল্লেখিত রাজ্যগুলিতে তাদের শাখা কার্যালয় রয়েছে ৷ এই শাখাগুলিতে 30-40 জনের দল কাজ করে ৷ এবং এই দলের মাধ্যমেই টাকা সংগ্রহ করা হয় ৷ এই টাকা শাখা কার্যালয়েই থাকার কথা ৷ সেই শাখার ম্যানেজারের এই টাকা সামলে রাখার কথা ৷ এই টাকা প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর কথা নয় ৷ কিন্তু, মার্গদর্শীতে সেটাই করা হয় ৷ অন্ধ্রপ্রদেশে গত 2 বছর ধরে স্ট্য়াম্পস অ্য়ান্ড রেজিস্ট্রেশনস বিভাগ এই অনিয়ম লক্ষ করছে ৷ তাদের এই কর্মকাণ্ডে আইন ভাঙার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে ৷
এ নিয়ে অডিট হওয়ার পর মার্গদর্শী দাবি করেছে, তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ ও সম্পদ রয়েছে ৷ যার মাধ্যমে তারা বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য ফিরিয়ে দিতে সক্ষম ৷ কিন্তু, বিষয় হল শ্রীরাম চিটস ইনভেস্টমেন্ট বনাম কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্য়ে চলা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছিল ৷ চিট ফান্ড আইন আদতে একটি আর্থসামাজিক আইন ৷ উপভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যই এই আইন তৈরি করা হয়েছে ৷ দুর্নীতি ঠেকানো সরকারেরই কর্তব্য ৷
অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারবে না ৷ স্ট্যাম্পস অ্য়ান্ড রেজিস্ট্রেশনস বিভাগের আইজি অন্ধ্রপ্রদেশ সিআইডির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ৷ তিনি সিআইডিকে বিস্তারিত তথ্য পেশ করেছেন ৷ তাতে বলা হয়েছে, অন্তত 500 কোটি টাকা 'ম্যানুয়ালি' নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ৷ অন্ধ্রপ্রদেশে অবস্থিত মার্গদর্শীর 37টি শাখায় এই টাকা তোলা হয়েছিল ৷ দুই তেলুগু রাজ্য বাদ দিলে কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ুতেই মার্গদর্শীর 108টি শাখা রয়েছে ৷ অন্ধ্রেপ্রদেশে মার্গদর্শীর উপভোক্তা সংখ্যা 1 লক্ষ ৷ সব মিলিয়ে 2 হাজার 351টি চিট-গোষ্ঠী কার্যকর রয়েছে ৷ 2021-22 অর্থবর্ষে শুধুমাত্র অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলাঙ্গানাতেই এদের 'টার্নওভার' ছিল 9,677 কোটি টাকা ৷
এক্ষেত্রে আয়কর, সিবিডিটি, সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেটিং অফিস, কর্পোরেট বিষয়ক দফতর এবং ইডি-র আওতাধীন নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে ৷ ওদের সতর্ক করে দেওয়া আমাদের কর্তব্য ৷ তাই গতমাসে আমরা তাদের চিঠি লিখি ৷ এখন আমরা পুরো বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করছি ৷
প্রশ্নোত্তর পর্ব:
প্রশ্ন: মার্গদর্শীর কার্যালয়গুলিতে কি এখনও তল্লাশি চলছে ?
উত্তর: শাখা স্তরে চিট ফান্ড রয়েছে ৷ তাই কোথাও যদি সেই স্তরে কোনও তথ্যভাণ্ডার থাকে, আমাদের সেটুকু খতিয়ে দেখতেই হবে ৷ কিন্তু, ওরা যদি কোনও তথ্যপ্রমাণই না রাখে, তাহলে আমরা সেটা করতে পারব না ৷ 37টি শাখার তথ্যভাণ্ডার খতিয়ে দেখার জন্য আমরা বিশেষ দল তৈরি করেছি ৷ ওরা আগাম জামিন নিয়ে রেখেছে ৷ কাউকে গ্রেফতার করা আমাদের উদ্দেশ্য নয় ৷ আমাদের উদ্দেশ্য, আর্থিক অপরাধ একেবারে বন্ধ করা ৷
প্রশ্ন: কত পরিমাণ অর্থের দুর্নীতি হয়েছে ? আপনারা কি মোটামুটি একটা আন্দাজ দিতে পারবেন ?
উত্তর: বছরে 506 কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয় (তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি সঞ্জয় ৷ অথচ, তিনি নিজেই আগে বলেছিলেন, সংস্থা অন্তত 500 কোটি টাকা ক্লায়েন্টদের সাবক্রিপশন হিসাবে সংগ্রহ করে) ৷
প্রশ্ন: আপনারা কি শুধুমাত্র মার্গদর্শী নিয়েই মনোনিবেশ করছেন ? না কি অন্য়ান্য সংস্থাও নজরে রয়েছে ?
উত্তর: আমরা কোনও কিছু নিয়েই মনোনিবেশ করছি না ৷ আমরা তদন্ত করছি ৷ গত 14 মাসে 17টি চিট ফান্ডের কাজে অনিয়ম দেখা গিয়েছে ৷ তার মধ্য়ে সবথেকে বড় হল মার্গদর্শী ৷ বাকিদের নিয়মভঙ্গের বিষয়গুলিও আমরা খতিয়ে দেখছি ৷