আসানসোল, 27 জানুয়ারি: কথায় বলে, চেষ্টা করলে সফলতা আসবেই ৷ টুয়েলভথ ফেল সিনেমার কথা মনে আছে নিশ্চই ৷ মনোজও চেষ্টা করেছিলেন ৷ তাই শেষ পর্যন্ত সফলতা মিলতে বাধ্য হয় ৷ এরকমই চাকরি করার ইচ্ছে রয়েছে ৷ কিন্তু বড় কোচিং সেন্টারে পড়ার ক্ষমতা নেই ৷ সেরকমই একদল ছাত্র সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন । আসানসোলের ধ্রুবডাঙা এলাকায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ছাত্ররা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে একটি পাঠচক্র গড়ে তুলেছেন । যেখানে নিজেরাই শিক্ষক, নিজেরাই ছাত্র । একে অন্যকে সহায়তা করে কারও সাহায্য ছাড়াই নিজেরাই এগিয়ে চলেছে তাঁরা । 2009 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত 180 জন সরকারি চাকরি পেয়েছে এই টালির ঘরের পাঠ কেন্দ্র থেকে ।
আসানসোল আদ্রা রুটের রেললাইনের পাশেই রয়েছে এই টালির ঘর । যেখানে গেলেই দেখা মিলবে ঘরের ভিতরে তো বটেই, বাইরেও ইতিউতি চারিদিকে বইমুখে বসে আছে একদল ছাত্র । পাশেই ক্রিকেট মাঠে টুর্নামেন্ট চলছে । মাইকে অনর্গল বাজছে ধারা বিবরনী । পাশের রেল লাইন দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে জোরে হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন । কিন্তু তাতে এই সমস্ত যুবকদের কোনও পরোয়া নেই । একাগ্র চিত্তেই চলছে সেখানে পড়াশুনো । তাঁদের একটাই লক্ষ্য, সরকারি চাকরি তাদের পেতেই হবে ।
সকাল সাতটা থেকে এই কমপেটেটিভ পরীক্ষার লাইব্রেরি খুলে যায় । চলে রাত দশটা পর্যন্ত । যে যখন খুশি আসতে পারে । যতক্ষণ খুশি পড়তে পারে । অনেকের বাবা নেই । সংসারে চালাতে নিজেকে টিউশন করতে হয়, কাউকে আবার বেছে নিতে হয়েছে নাইট গার্ডের কাজ । তবু পড়ার বিরাম নেই । সবকিছুর পরেও এই টালির ঘরে এসে অংকের সমস্যা সমাধান থেকে সাধারণ জ্ঞান নিয়ে চর্চা করাটাই ছাত্রদের নেশা ।
এই পাঠকেন্দ্রের সিনিয়র ছাত্র তথা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পঙ্কজ কুমার মণ্ডল বলেন, "আমাদের মতন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছাত্র-ছাত্রীদের যাদের বিরাট বড় কোচিং সেন্টারে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার মত ক্ষমতা নেই । তারাও স্বপ্ন দেখি যে আমাদের সরকারি চাকরি হবে । আর সেই স্বপ্ন দেখা থেকে এই টালির ঘরে আমরা শুরু করেছিলাম 2009 সালে এই পাঠকেন্দ্র । ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে । বর্তমানে প্রায় দেড়শো জন ছাত্রছাত্রী আছে এখানে । সক্রিয়ভাবে 100 জন প্রতিদিন এসে পড়াশোনা করে । এখনও পর্যন্ত 180 জন সরকারি চাকরি পেয়েছে আমাদের এই টালির ঘরের পাঠকেন্দ্র থেকে । আগামীর স্বপ্ন দেখছে বাকিরাও । চলছে মরণকামড় করে প্রস্তুতি । লক্ষ্য সরকারি চাকরি পেতেই হবে ।"
প্রতি ছাত্র পিছু মাত্র 40 টাকা করে মাসে নেওয়া হয় । আর সেই টাকাতে কেনা হয় পরীক্ষার প্রস্তুতির বই ও অন্যান্য কিছু । কোনও সরকারি সাহায্য বা বাড়তি সহায়তা কোথাও মেলে না । তাতেই বা কী? নিজেরাই নিজেদের ভরসা । আবার যারা আরও হতদরিদ্র তাদের কাছে সেই 40 টাকাও নেওয়া হয় না । বরং তাদের প্রয়োজনে বই কিনে দেওয়া বা সহযোগিতা করে সিনিয়র ছাত্ররা । এমন কথাই শোনা গেল সেখানকার ছাত্র গুড্ডু কুমার যাদব কিংবা কুশল কুমারের মুখে ।
প্রতিদিন তো ভুরিভুরি কত ব্যর্থতার গল্প শোনা যায় ৷ কিন্তু তার মাঝেও আসানসোলের ধ্রুবডাঙার এই ভাঙা টালির ঘরের পাঠকেন্দ্র যেন অনেক আশার কথা শুনিয়ে যায় ৷ অনেকের চোখে নতুন স্বপ্ন এঁকে দিয়ে যায় ।
আরও পড়ুন: