ETV Bharat / state

কেন্দ্রীয় বাজেট সরকার টিকিয়ে রাখার, বিহার-অন্ধ্রপ্রদেশ অভিমুখী, মত অর্থনীতিবিদদের একাংশের - Budget 2024

Economists on Budget 2024: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের পেশ করা বাজেট কুর্সি বাঁচিয়ে রাখার বলে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি ৷ একই মত অর্থনীতিবিদদের একাংশেরও ৷ এই বাজেটে তেমন নতুন কিছু নেই বলে মনে করছেন তাঁরা ৷

Budget 2024-25
বাজেট পেশ করছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন (ছবি সৌজন্য: সংসদ টিভি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 23, 2024, 7:58 PM IST

Updated : Jul 23, 2024, 9:30 PM IST

নয়াদিল্লি, 23 জুলাই: বিজেপি-র নেতৃত্বে গঠিত তৃতীয় এনডিএ সরকারের প্রথম বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ৷ 2024-25 অর্থবর্ষের বাজেট অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক বাজেট বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ ৷

অর্থনীতিবিদ ব্যাসদেব দাশগুপ্ত জানান, এই বাজেটে কর কাঠামোর বিন্যাস দেখলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে যেন পরিবর্তন আনা হয়েছে ৷ তবে ঠিক করে যদি অঙ্ক কষলে দেখা যাবে, এই বাজেটে নতুন কিছু নেই ৷ কারণ স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন মাত্র 25 হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে ৷ বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে দেখলে এই ছাড়ে কিছুই এসে যাবে না ৷ পাশাপাশি চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে যে খুব একটা সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তেমনটা মনে হচ্ছে না ৷ কারণ যিনি বছরের 16 লক্ষ টাকা আয় করছেন তাকেও যেমন 30 শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে, তেমনই যিনি বছরে 16 কোটি টাকা আয় করছেন তাকেও ওই 30 শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে ৷ এর ফলে একটা বৈষম্য থেকেই যাচ্ছে এই বাজেটে ৷

তিনি আরও বলেন, "যে কোনও বাজেটেই কিছুটা রাজনীতি প্রভাব থাকে ৷ আর এবারের বাজেটে যে তা বিশেষভাবে থাকবে, সেটা তো পরিষ্কার ৷ কারণ এই কেন্দ্র সরকার হল 'মিলি ঝুলি' সরকার ৷ বিশেষত বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সমর্থনে এই সরকার টিকে রয়েছে ৷ আর সেই দিক থেকে দেখতে গেলে দেশের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যগুলি উপেক্ষিত থেকে গেল ৷ তাই এককথায় বললে এটা পুরোদস্তুর রাজনৈতিক বাজেট ৷ অর্থনৈতিক বাজেট নয় ৷"

অর্থনীতিবিদের মতে, এই প্রথমবার বাজেটে কোনও অঙ্গরাজ্যর প্ল্যান প্রস্তাব করা হল ৷ এর আগে কোনও বাজেটে এমনটা হয়েছে কি না, সেটা জানা নেই ৷ বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বিশেষ বরাদ্দ করা হয়েছে এই বাজেটে ৷

অন্যদিকে শিক্ষা স্বাস্থ্য কিংবা গ্রামোন্নয়ন খাতে প্রায় কিছুই বরাদ্দ করা হয়নি ৷ বাজেটে শতাংশের হিসাবে এই ক্ষেত্রগুলিতে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মানুষ বহুদিন ধরে অপেক্ষা করে রয়েছে ৷ তবে এই বাজেটে তেমনটা হল না ৷ বরং দেশের সমস্ত অঞ্চলগুলি একেবারে পরিষেবা পরিকাঠামোর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে, সেই সব অঞ্চলগুলিকে আরও উন্নত করার দিকে নজর দেওয়া উচিত ছিল ৷

এর পাশাপাশি অর্থনীতিবিদরা এও মনে করছেন যে, একাধিক ক্ষেত্রে পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট বা সরকারি বিনিয়োগ করা উচিত ছিল, নাহলে মেক ইন ইন্ডিয়া বা আত্মনির্ভর ভারত এবং বিকশিত ভারত স্বপ্নই থেকে যাবে ৷

অর্থনীতিবিদ দেবাশিস সরকার বলেন, "বাজেটের শুরুতে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন 9টি বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। কিন্তু শেষমেশ দেখলাম অন্ধ্র ও বিহারকে মাথায় রেখে বাজেট পেশ হল । যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এরকম হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। এই দুটি রাজ্যের সাংসদদের নিয়ে জোট সরকার চলছে বলে একেবারেই রাজনৈতিক প্রয়োজনে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। আর তাই এই সরকারকে সমালোচিত হতে হচ্ছে। অন্যদিকে, রেলের সুরক্ষা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা আশা করেছিলাম । কিন্তু সেটা হল না । 2047 সালে স্বাধীনতার একশো বছর হবে । এটা মাথায় রেথে বাজেট পেশ হয়েছে। এখান থেকেই বোঝা যায় বাজেটের কোনও দিশা নেই। সরকার ইন্টার্নশিপ আর ইন্সেনটিভের কথা বলছে । কিন্তু ভারতের মতো দেশের বেকার সমস্যা এভাবে মেটানো যাবে না।"

অর্থনীতিবিদ শান্তনু বসু মনে করছেন, যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার এখন অনেকগুলি অঙ্গ রাজ্যের উপর নির্ভরশীল, ফলে তাঁদের দিকে যে বিশেষ নজর থাকবে সেটা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না ৷ আর এই বাজেটে সেটাই হল ৷ বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন ৷ তিনি বলেন, "আমার মনে পড়ে না যে স্বাধীন ভারতে কেন্দ্রীয় বাজেটে এর আগে কখনও দু'টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে বিশেষ 'প্ল্যান' ঘোষণা করা হয়েছে কি না ?"

তিনি এই বিষয় আরও বলেন, "অন্ধ্রপ্রদেশের নীচেই তামিলনাড়ু ৷ কিন্তু তামিলনাড়ুকে নেওয়া হল না কারণ, লোকসভায় তামিলনাড়ু থেকে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি ৷ একেবারে রাজনৈতিক কারণের জন্য পরিকল্পনা অন্ধ্রপ্রদেশে এসে আটকে গেল ৷ এই বাজেটের মধ্যে যত না অর্থনীতি রয়েছে, তার থেকে বেশি রাজনীতি ৷ আর টিকে থাকার দায়ে কেন্দ্র সরকার বিহারকে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়েছে ৷ এমনকী বিহার বিদেশি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিলে, সেই ঋণের উপর সম্পূর্ণ ছাড় দেবে কেন্দ্র ৷"

ঠিক একইভাবে নতুন আয়কর কাঠামোয় যাঁরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের সামান্য স্বস্তি দেওয়া হয়েছে ৷
তবে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনে আয়কর জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন বৈষম্য তৈরি হচ্ছে না ৷ তবে পুরনো আয়কর কাঠামোয় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কিছু অংশে বঞ্চিত করা হয়েছে ৷ এবারের বাজেটের ন'টি পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে ৷ তবে একটিও তেমনভাবে বিস্তারিত বলা হয়নি ৷ বেশ অনেকটাই ধোঁয়াশা থেকে গিয়েছে ৷ ঠিক একইভাবে এই বাজেটের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কিছুই বরাদ্দ করা হল না, কর্মসংস্থান নিয়েও তেমন কথা বলা হয়নি ৷

নয়াদিল্লি, 23 জুলাই: বিজেপি-র নেতৃত্বে গঠিত তৃতীয় এনডিএ সরকারের প্রথম বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ৷ 2024-25 অর্থবর্ষের বাজেট অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক বাজেট বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ ৷

অর্থনীতিবিদ ব্যাসদেব দাশগুপ্ত জানান, এই বাজেটে কর কাঠামোর বিন্যাস দেখলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে যেন পরিবর্তন আনা হয়েছে ৷ তবে ঠিক করে যদি অঙ্ক কষলে দেখা যাবে, এই বাজেটে নতুন কিছু নেই ৷ কারণ স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন মাত্র 25 হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে ৷ বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে দেখলে এই ছাড়ে কিছুই এসে যাবে না ৷ পাশাপাশি চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে যে খুব একটা সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তেমনটা মনে হচ্ছে না ৷ কারণ যিনি বছরের 16 লক্ষ টাকা আয় করছেন তাকেও যেমন 30 শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে, তেমনই যিনি বছরে 16 কোটি টাকা আয় করছেন তাকেও ওই 30 শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে ৷ এর ফলে একটা বৈষম্য থেকেই যাচ্ছে এই বাজেটে ৷

তিনি আরও বলেন, "যে কোনও বাজেটেই কিছুটা রাজনীতি প্রভাব থাকে ৷ আর এবারের বাজেটে যে তা বিশেষভাবে থাকবে, সেটা তো পরিষ্কার ৷ কারণ এই কেন্দ্র সরকার হল 'মিলি ঝুলি' সরকার ৷ বিশেষত বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সমর্থনে এই সরকার টিকে রয়েছে ৷ আর সেই দিক থেকে দেখতে গেলে দেশের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যগুলি উপেক্ষিত থেকে গেল ৷ তাই এককথায় বললে এটা পুরোদস্তুর রাজনৈতিক বাজেট ৷ অর্থনৈতিক বাজেট নয় ৷"

অর্থনীতিবিদের মতে, এই প্রথমবার বাজেটে কোনও অঙ্গরাজ্যর প্ল্যান প্রস্তাব করা হল ৷ এর আগে কোনও বাজেটে এমনটা হয়েছে কি না, সেটা জানা নেই ৷ বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বিশেষ বরাদ্দ করা হয়েছে এই বাজেটে ৷

অন্যদিকে শিক্ষা স্বাস্থ্য কিংবা গ্রামোন্নয়ন খাতে প্রায় কিছুই বরাদ্দ করা হয়নি ৷ বাজেটে শতাংশের হিসাবে এই ক্ষেত্রগুলিতে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মানুষ বহুদিন ধরে অপেক্ষা করে রয়েছে ৷ তবে এই বাজেটে তেমনটা হল না ৷ বরং দেশের সমস্ত অঞ্চলগুলি একেবারে পরিষেবা পরিকাঠামোর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে, সেই সব অঞ্চলগুলিকে আরও উন্নত করার দিকে নজর দেওয়া উচিত ছিল ৷

এর পাশাপাশি অর্থনীতিবিদরা এও মনে করছেন যে, একাধিক ক্ষেত্রে পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট বা সরকারি বিনিয়োগ করা উচিত ছিল, নাহলে মেক ইন ইন্ডিয়া বা আত্মনির্ভর ভারত এবং বিকশিত ভারত স্বপ্নই থেকে যাবে ৷

অর্থনীতিবিদ দেবাশিস সরকার বলেন, "বাজেটের শুরুতে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন 9টি বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। কিন্তু শেষমেশ দেখলাম অন্ধ্র ও বিহারকে মাথায় রেখে বাজেট পেশ হল । যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এরকম হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। এই দুটি রাজ্যের সাংসদদের নিয়ে জোট সরকার চলছে বলে একেবারেই রাজনৈতিক প্রয়োজনে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। আর তাই এই সরকারকে সমালোচিত হতে হচ্ছে। অন্যদিকে, রেলের সুরক্ষা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা আশা করেছিলাম । কিন্তু সেটা হল না । 2047 সালে স্বাধীনতার একশো বছর হবে । এটা মাথায় রেথে বাজেট পেশ হয়েছে। এখান থেকেই বোঝা যায় বাজেটের কোনও দিশা নেই। সরকার ইন্টার্নশিপ আর ইন্সেনটিভের কথা বলছে । কিন্তু ভারতের মতো দেশের বেকার সমস্যা এভাবে মেটানো যাবে না।"

অর্থনীতিবিদ শান্তনু বসু মনে করছেন, যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার এখন অনেকগুলি অঙ্গ রাজ্যের উপর নির্ভরশীল, ফলে তাঁদের দিকে যে বিশেষ নজর থাকবে সেটা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না ৷ আর এই বাজেটে সেটাই হল ৷ বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন ৷ তিনি বলেন, "আমার মনে পড়ে না যে স্বাধীন ভারতে কেন্দ্রীয় বাজেটে এর আগে কখনও দু'টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে বিশেষ 'প্ল্যান' ঘোষণা করা হয়েছে কি না ?"

তিনি এই বিষয় আরও বলেন, "অন্ধ্রপ্রদেশের নীচেই তামিলনাড়ু ৷ কিন্তু তামিলনাড়ুকে নেওয়া হল না কারণ, লোকসভায় তামিলনাড়ু থেকে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি ৷ একেবারে রাজনৈতিক কারণের জন্য পরিকল্পনা অন্ধ্রপ্রদেশে এসে আটকে গেল ৷ এই বাজেটের মধ্যে যত না অর্থনীতি রয়েছে, তার থেকে বেশি রাজনীতি ৷ আর টিকে থাকার দায়ে কেন্দ্র সরকার বিহারকে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়েছে ৷ এমনকী বিহার বিদেশি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিলে, সেই ঋণের উপর সম্পূর্ণ ছাড় দেবে কেন্দ্র ৷"

ঠিক একইভাবে নতুন আয়কর কাঠামোয় যাঁরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের সামান্য স্বস্তি দেওয়া হয়েছে ৷
তবে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনে আয়কর জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন বৈষম্য তৈরি হচ্ছে না ৷ তবে পুরনো আয়কর কাঠামোয় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কিছু অংশে বঞ্চিত করা হয়েছে ৷ এবারের বাজেটের ন'টি পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে ৷ তবে একটিও তেমনভাবে বিস্তারিত বলা হয়নি ৷ বেশ অনেকটাই ধোঁয়াশা থেকে গিয়েছে ৷ ঠিক একইভাবে এই বাজেটের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কিছুই বরাদ্দ করা হল না, কর্মসংস্থান নিয়েও তেমন কথা বলা হয়নি ৷

Last Updated : Jul 23, 2024, 9:30 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.