ETV Bharat / state

'প্রাত্যহিক জীবনে বাংলা ভাষার মৃত্যু ঘটছে', ধ্রুপদী তকমায় ভিন্নমত বিশিষ্টদের - Classical Language

বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতিতে উচ্ছ্বসিত হচ্ছেন না ভাষাবিদদের একাংশ ৷ মীরাতুন নাহারের মতো বিশিষ্ট ভাষাবিদদের মতে, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা তার গৌরব হারাচ্ছে ৷

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 2 hours ago

CLASSICAL LANGUAGE
বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি ৷ (নিজস্ব চিত্র)

কলকাতা, 4 অক্টোবর: বাংলা ভাষাকে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই খবর রাজ্যবাসীর সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন ৷ বাংলা ভাষার এই স্বীকৃতি অত্যন্ত ন্যায্য বলে উল্লেখ করেছেন তিনি ৷ কিন্তু, বিশিষ্টজনেরা ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়াকে কীভাবে দেখছেন ? মীরাতুন নাহার থেকে শুরু করে পবিত্র সরকার, প্রাক্তন আমলা তথা প্রাক্তন সাংসদ জহর সরকার এই স্বীকৃতিকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করছেন ৷

এ নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার ইটিভি ভারতকে বলছেন, "আমার বয়স এখন 70 বছর ৷ জ্ঞানত আমি জানি বাংলা একটি ধ্রুপদী ভাষা ৷ এর জন্য কোনও সরকারের স্বীকৃতির অপেক্ষা রাখে না ৷ বাংলা ভাষা যে অবহেলিত হচ্ছে, তা শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের কারণে নয় ৷ বা বর্তমান সরকারের বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতার কারণে অবস্থার বদল হয়েছে এমনটাও নয় ৷ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে বাংলা ভাষার একধরনের মৃত্যু ঘটছে ৷ 'জীবিকা অর্জনের জন্য ভাষা'- এই বিষয়টি আজকে মানুষের জীবনে খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ৷ ফলে একমাত্র ইংরেজি ভাষা ছাড়া সব ভাষাই প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব হারাচ্ছে ৷"

তিনি বলছেন, "কেন্দ্র এবং রাজ্যের যাবতীয় উদ্যোগে বাংলা ভাষায় লেখাপড়া করে চাকরি জীবনে সফল হওয়া যাবে একথা বলা যাচ্ছে না ৷ আসলে আজকে ভাষা জীবিকা কেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে ৷ কাজেই সেই জায়গায় বাংলা ভাষাকে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে ৷ বাংলা ভাষাকে কী স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে বাকিদের সঙ্গে খুব বেশি আনন্দিত হতে আমি রাজি নই ৷ বরং বাংলা ভাষার প্রয়োগকে আরও কার্যকরী করে তোলার উদ্যোগ নিলে সুবিধা হবে বলে আমি মনে করি ৷"

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারও মীরাতুন নাহারের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন ৷ বাংলা ভাষার এই সম্মানে খুব বেশি আনন্দিত হতে রাজি নন তিনি ৷ ইটিভি ভারতকে তিনি বলেন, "ভাষা বেঁচে থাকে তার প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে ৷ ভাষা কোনও বিশেষণ দিয়ে বাঁচে না ৷ ফলে, প্রতিদিন আমরা কথা বলার সময় কতটা বাংলা ভাষা বলছি, নাকি খিচুড়ি ভাষা বলছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ ৷ মনে রাখতে হবে, এই খিচুড়ি ভাষা বলতে বলতেই আমরা কখন ইংরেজির দিকে চলে যাব, বুঝতেও পারব না ৷ তকমা দিয়ে কোনও চরিত্র বদলাবে না ৷"

এইসব বিষয়গুলি এড়িয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ জহর সরকার ৷ সাংসদ থাকাকালীন তিনি বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে সংসদে সরব হয়েছিলেন ৷ আজ যখন কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা ভাষাকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে, তখন তিনি বলছেন, "এটা বাংলা ভাষার জন্য একটা সম্মান ৷ আমাদের দেশে 24টি ভাষা আছে ৷ তার মধ্যে মাত্র আটটি ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ৷ বিষয়টা অবশ্যই গর্বের ৷ এই আটটি ভাষাকে আদি ভাষা, পুরনো ভাষা হিসাবে বলা হয়েছে ৷

তবে, প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেকদিন বাংলা ভাষার মৃত্যু হচ্ছে, এমনটা মানতে রাজি নন প্রাক্তন এই আমলা ৷ বাংলা ভাষার প্রয়োগের দিক বিকাশে সরকারের একটা বিশেষ ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ ৷

এক্ষেত্রে জওহর সরকার বলেছেন, "সরকারি করসপন্ডেন্স করা ভালো ৷ মানুষ বাংলা ভাষায় কিছু লিখলে খুব সহজেই তা বুঝবে ৷ তবে, ভাষাটি বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব একা সরকারের নয় ৷ তা অনেক বেশি করে সমাজেরও ৷ ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সরকারের ঘাড়ে ফেললে হবে না ৷ বিশ্বায়নের পর প্রত্যেকটি বড় ভাষার এমন অবস্থা হয়েছে ৷ প্রত্যেকটি ভাষাকে অন্য ভাষা থেকে শব্দ নিতে হচ্ছে ৷ আমরা মোবাইল ব্যবহার করি ৷ সেখানে 'রিচার্জ' বা 'টপ আপ'-এর কোনও বাংলা নেই ৷ অন্য ভাষা থেকে আমাদের শব্দ ধার করতে হচ্ছে ৷ এর মানে আমাদের ভাষার মৃত্যু হয়ে গেল, এমন কথা ঠিক নয় ৷"

কলকাতা, 4 অক্টোবর: বাংলা ভাষাকে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই খবর রাজ্যবাসীর সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন ৷ বাংলা ভাষার এই স্বীকৃতি অত্যন্ত ন্যায্য বলে উল্লেখ করেছেন তিনি ৷ কিন্তু, বিশিষ্টজনেরা ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়াকে কীভাবে দেখছেন ? মীরাতুন নাহার থেকে শুরু করে পবিত্র সরকার, প্রাক্তন আমলা তথা প্রাক্তন সাংসদ জহর সরকার এই স্বীকৃতিকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করছেন ৷

এ নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার ইটিভি ভারতকে বলছেন, "আমার বয়স এখন 70 বছর ৷ জ্ঞানত আমি জানি বাংলা একটি ধ্রুপদী ভাষা ৷ এর জন্য কোনও সরকারের স্বীকৃতির অপেক্ষা রাখে না ৷ বাংলা ভাষা যে অবহেলিত হচ্ছে, তা শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের কারণে নয় ৷ বা বর্তমান সরকারের বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতার কারণে অবস্থার বদল হয়েছে এমনটাও নয় ৷ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে বাংলা ভাষার একধরনের মৃত্যু ঘটছে ৷ 'জীবিকা অর্জনের জন্য ভাষা'- এই বিষয়টি আজকে মানুষের জীবনে খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ৷ ফলে একমাত্র ইংরেজি ভাষা ছাড়া সব ভাষাই প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব হারাচ্ছে ৷"

তিনি বলছেন, "কেন্দ্র এবং রাজ্যের যাবতীয় উদ্যোগে বাংলা ভাষায় লেখাপড়া করে চাকরি জীবনে সফল হওয়া যাবে একথা বলা যাচ্ছে না ৷ আসলে আজকে ভাষা জীবিকা কেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে ৷ কাজেই সেই জায়গায় বাংলা ভাষাকে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে ৷ বাংলা ভাষাকে কী স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে বাকিদের সঙ্গে খুব বেশি আনন্দিত হতে আমি রাজি নই ৷ বরং বাংলা ভাষার প্রয়োগকে আরও কার্যকরী করে তোলার উদ্যোগ নিলে সুবিধা হবে বলে আমি মনে করি ৷"

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারও মীরাতুন নাহারের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন ৷ বাংলা ভাষার এই সম্মানে খুব বেশি আনন্দিত হতে রাজি নন তিনি ৷ ইটিভি ভারতকে তিনি বলেন, "ভাষা বেঁচে থাকে তার প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে ৷ ভাষা কোনও বিশেষণ দিয়ে বাঁচে না ৷ ফলে, প্রতিদিন আমরা কথা বলার সময় কতটা বাংলা ভাষা বলছি, নাকি খিচুড়ি ভাষা বলছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ ৷ মনে রাখতে হবে, এই খিচুড়ি ভাষা বলতে বলতেই আমরা কখন ইংরেজির দিকে চলে যাব, বুঝতেও পারব না ৷ তকমা দিয়ে কোনও চরিত্র বদলাবে না ৷"

এইসব বিষয়গুলি এড়িয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ জহর সরকার ৷ সাংসদ থাকাকালীন তিনি বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে সংসদে সরব হয়েছিলেন ৷ আজ যখন কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা ভাষাকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে, তখন তিনি বলছেন, "এটা বাংলা ভাষার জন্য একটা সম্মান ৷ আমাদের দেশে 24টি ভাষা আছে ৷ তার মধ্যে মাত্র আটটি ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ৷ বিষয়টা অবশ্যই গর্বের ৷ এই আটটি ভাষাকে আদি ভাষা, পুরনো ভাষা হিসাবে বলা হয়েছে ৷

তবে, প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেকদিন বাংলা ভাষার মৃত্যু হচ্ছে, এমনটা মানতে রাজি নন প্রাক্তন এই আমলা ৷ বাংলা ভাষার প্রয়োগের দিক বিকাশে সরকারের একটা বিশেষ ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ ৷

এক্ষেত্রে জওহর সরকার বলেছেন, "সরকারি করসপন্ডেন্স করা ভালো ৷ মানুষ বাংলা ভাষায় কিছু লিখলে খুব সহজেই তা বুঝবে ৷ তবে, ভাষাটি বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব একা সরকারের নয় ৷ তা অনেক বেশি করে সমাজেরও ৷ ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সরকারের ঘাড়ে ফেললে হবে না ৷ বিশ্বায়নের পর প্রত্যেকটি বড় ভাষার এমন অবস্থা হয়েছে ৷ প্রত্যেকটি ভাষাকে অন্য ভাষা থেকে শব্দ নিতে হচ্ছে ৷ আমরা মোবাইল ব্যবহার করি ৷ সেখানে 'রিচার্জ' বা 'টপ আপ'-এর কোনও বাংলা নেই ৷ অন্য ভাষা থেকে আমাদের শব্দ ধার করতে হচ্ছে ৷ এর মানে আমাদের ভাষার মৃত্যু হয়ে গেল, এমন কথা ঠিক নয় ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.