রামেশ্বপুর (হুগলি), 25 অগস্ট: পোশাকি নাম লাফা ৷ বরবটির উপপ্রজাতি ৷ বরবটির চেয়ে একটু লম্বা, কোমল এই শুটি কাঁচা বা রান্না করে, দু’ভাবেই খাওয়া যায় ৷ লন্ডন, দুবাই, কাতার-সহ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় এই সবজি রফতানি হচ্ছে বাংলা থেকেই । কয়েকবছর ধরেই বিদেশে লাফার চাহিদা বিপুল বেড়েছে, যা যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কলকাতার এক্সপোর্টারা । এতেই লাভের মুখ দেখছেন হুগলির কৃষকরা ৷
আগামিদিনে লাফা চাষের পরিধি বাড়ালে আমদানি বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণও ৷ কিন্তু হঠাৎ বছর তিনেক ধরে লাফার চাহিদা বাড়ল কেন ? কী গুণাগুণ আছে এতে ? বাংলার বাজারে মাঝেমধ্যেই দেখা মেলে লাফার । কৃষি বিজ্ঞান বলছে, বরবটির উপপ্রজাতি এই সবজি । শুধুই কি খেতে সুস্বাদু ? নাকি অন্য গুণ আছে এই সবজিতে ৷ বিদেশে কী কী রেসিপিতে লাফা ব্যবহার হয় ?
কী এই লাফা ?
লাফা বরবটির একটি উপপ্রজাতি ৷ যার বিজ্ঞানসম্মত নাম ভিগনা আনগুইকুলাটা (Vigna Unguiculata subsp. Sesquipedalis) ৷ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর, প্রায় সারা বছর চাষ করা যায় ৷ শীতকালের আগে থেকে এর ফলন বাড়তে থাকে । কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এই সবজির নিউট্রিশিয়াস ভ্যালু বেশি এবং কম ক্যালোরি ইনটেক । এটি প্রোটিন, ভিটামিন ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থে ভরপুর । সেই কারণে আরব ও ইউরোপিয়ান দেশগুলিতে লাফার চাহিদা বেড়েই চলেছে ।
চাইনিজ, মালয়েশিয়ান ডিস থেকে শুরু করে তরকারি ও স্যালাড হিসাবে এই সবজির ব্যবহার রয়েছে । চাহিদার কথা মাথায় রেখে হুগলির ধনেখালি, পোলবা, পাণ্ডুয়া-সহ বর্ধমান, নদিয়াতেও বিপুল চাষ হচ্ছে । প্রতিদিন কলকাতা থেকে 8 মেট্রিক টন লাফা বিদেশে যাচ্ছে । প্রতি মাসে দেড় কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে বাংলায় । কৃষকরা মাঠে 50 থেকে 70 টাকা প্রতি কেজি ধরে বিক্রি করেন । বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রা 15 রিয়াল (প্রতি কেজি) অনুযায়ী ভারতীয় প্রায় 345 টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হয় । হুগলির রামেশ্বরপুর ফার্মার প্রডিউসার কৃষক কোম্পানি ছাড়াও অন্যান্য জেলার চাষিরা এই লাফা সাপ্লাই দিতে কার্যত হিমশিম খাচ্ছেন । জেলা উদ্যান পালন দফতর উদ্যোগ নিচ্ছে, কৃষক ও কৃষক কোম্পানিগুলিকে লাফা চাষের উদ্যোগী করে তোলার ।
আগামিদিনে কী পরিকল্পনা ?
আগামিদিনে সমস্ত রকম সবজি এক্সপোর্ট করার চিন্তাভাবনা করছে হুগলির গ্রামীণ কৃষক কোম্পানিগুলি । লাফা চাষ করে মাসে প্রায় 15 হাজার টাকা লাভ করছেন কৃষকরা । রামেশ্বপুরের এক কৃষক সুজয় কুমার মাঝি বলেন, ‘‘ফার্মার প্রডিউসার কোম্পানির তরফে ধনেখালি, পান্ডুয়া ও রামেশ্বরপুর এলাকায় কয়েকশো কৃষককে দিয়ে লাফা চাষ করানো হচ্ছে । এর ফলে অনেকটাই লাভবান হচ্ছেন তাঁরা । এই সবজি এক্সপোর্টারের মাধ্যমে দুবাই এবং কাতারে রফতানি হচ্ছে । আগামিদিনে আমাদের চিন্তাভাবনা আছে চিচিঙ্গা ও লাউয়ের মত সবজিগুলি বিদেশে পাঠানোর । এর জন্য জৈব পদ্ধতিতে সবজি চাষের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের ।’’
বাংলাদেশে চাষ হলেও পশ্চিমবঙ্গে লাফা অনেক সুস্বাদু । সেই কারণে সঠিক সময়ে সাপ্লাই দিতে পারছেন না এক্সপোর্টারা ৷ কলকাতার এক্সপোর্টার অঙ্কুশ সাহা বলেন, ‘‘হুগলি জেলা থেকে মাসে দেড় কোটি টাকার লাফা বিদেশে যায় । যে পরিমাণে চাহিদা রয়েছে তাতে যোগান দেওয়া যাচ্ছে না । আমরা প্রধানত লন্ডন, ম্যানচেস্টার ও কাতারে পাঠাই । এছাড়াও অন্যান্য এক্সপোটাররা একাধিক দেশে ভারতের সবজি পাঠান । বিদেশে আগামিদিনে আর বেশি পরিমাণে লাফা এক্সপোর্ট করতে চাই । আগামিদিনে আমাদের পরিকল্পনা আছে লাফা ছাড়াও লঙ্কা, কাকরোল ও করলা-সহ বিভিন্ন ধরনের সবজির বিদেশে প্রচুর পরিমাণে চাহিদা রয়েছে । কিন্তু আমরা পাঠাতে পারি না, কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিভিন্ন সবজি সার্টিফায়েড করতে হয় । আইনি জটিলতার কারণে আমাদেরও সমস্যা মুখে পড়তে হচ্ছে ৷ রাজ্য ও কেন্দ্র যদি লাফার উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগী হয়, তাহলে আরও এক্সপোর্ট ক্ষেত্রে সুবিধা বাড়বে । আখেরে কৃষকরা উপকৃত হবেন ।’’
জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক ড: শুভদীপ নাথ বলেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি ও লন্ডনের এশিয়ান জনবসতির মধ্যে ভারতীয় সবজি খাবার প্রবণতা রয়েছে । লাফা বছরের অধিকাংশ সময় চাষ হয় । লাফার সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, এর খাদ্য গুণাগুণ অনেক বেশি । এই ফসলের মধ্যে কম ক্যালোরি, প্রচুর প্রোটিন, খনিজ লবণ ও ভিটামিন রয়েছে । যা গর্ভবতী মহিলা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষভাবে উপকারী ।’’