জলপাইগুড়ি, 3 এপ্রিল: জেলাতেই রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এরই মাঝে ত্রাণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিড়ম্বনায় পড়ল জেলাপ্রশাসন ৷ ময়নাগুড়ির বার্নিসে টর্নেডোয় ক্ষতিগ্রস্থদের সরকার থেকে ত্রাণ দেওয়া হলেও পর্যাপ্ত ত্রাণ না-পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৷ যদিও মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে জেলাশাসক- সবাই বলছেন ত্রাণ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই ৷ এদিকে প্রশ্ন, ত্রাণ যাচ্ছে কোথায় ? সেই উত্তর খুঁজছে প্রশাসনও ৷
দুর্যোগের পরদিন থেকে জেলাপ্রশাসনের কর্তা, কর্মীরা ত্রাণ দিতে শুরু করেছেন ৷ কিন্তু অভিযোগ, একদিন পর থেকেই ত্রাণের খাবারে ভাটা পড়তে শুরু করেছে ৷ এদিকে জেলাপ্রশাসনের ত্রাণ দেওয়ার কথা না ভেবে ময়নাগুড়ির সমাজসেবী মনোজ সাহা নিজেই দুর্গতদের দু'বেলা খাবারের ব্যবস্থা করছেন ৷ শুধু তাই নয়, সুস্তির হাটের সমাজসেবী নবিউল আলমও চারটি জায়গায় রান্নার ব্যবস্থা করে খাওয়াচ্ছেন ৷ এখানেই প্রশ্ন উঠছে, বেসরকারি উদ্যোগে দুর্গতদের খাওয়ানো হলে, প্রশাসনের তরফে এই কাজ কেন করা যাচ্ছে না ৷ যদিও এর উত্তরে জেলাশাসক শামা পারভিন বলেন, "এক জায়গা থেকেই সেন্ট্রালি খাবারের ব্যবস্থা করেছিলাম ৷ কিন্তু মানুষজন সেখানে খাবার নিতে আসছিল না ৷ তাই আমরা এগারোটি জায়গায় খাবারের ব্যবস্থা করেছি ৷"
রবিবার দুপুরে কয়েক মিনিটের টর্নেডোয় জলপাইগুড়িতে প্রায় 2 হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ তছনছ হয়ে যাওয়া চাষের জমির পরিমাণ 165 হেক্টর, জানিয়েছেন জেলাশাসক শামা পারভিন ৷ তিনি আশ্বস্ত করেছেন, পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী আছে ৷ বুধবার জেলার বার্নিস এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কিট দেওয়া হবে ৷
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজ বার্নিস গ্রামে বিধ্বস্ত এলাকায় ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন ৷ তাঁর অভিযোগ, সেখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই ৷ ত্রাণ বিলি নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি ৷ অনন্ত মহারাজ বলেন, "এখানে কিছু গোলমাল আছে ৷ ত্রাণ কেন পাবে না ? জেলাশাসক, বিডিও, এসডিওরা কী করছে তাহলে ? তাঁদেরই তো দেখার কথা!" অন্যদিকে জেলাশাসকের সাফাই, "ত্রাণের সামগ্রীর অভাব নেই ৷ সবাইকে সব কিছুই দেওয়া হচ্ছে ৷"
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিন বলেন, "জেলায় ঝড়ে প্রায় 2 হাজার বাড়ির ক্ষতি হয়েছে ৷ কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে 165 হেক্টর ৷ তবে সামগ্রিক ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা যাবে না ৷ বুধবার সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের ডিএম কিট বণ্টন করা হবে ৷ আদর্শ নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু আছে ৷ ফলে আমাদের এমসিসি কমিটি থেকে যে নির্দেশ দেওয়া হবে, আমরা সেটাই করব । এখুনি বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কোন নির্দেশিকা আমাদের কাছে আসেনি ৷ বুধবার ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুকনো খাবার-সহ তাদের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কিট সরবরাহ করা হবে ।"
এদিকে ময়নাগুড়ির সমাজসেবী মনোজ সাহা বলেন, "সবাইকে বলব সবাই আসুন ৷ এখানে বিপর্যস্তদের সাহায্য করুন ৷ আমরা চেষ্টা করছি, যাতে দু'বেলা খাবার দেওয়া যায় ৷ আরও লোকবল দরকার ৷ কারণ, প্রত্যন্ত এলাকায় খাবার পৌঁছে দিতে হচ্ছে ৷ লোকবল বাড়লে কাজটা সহজ হবে ৷" ময়নাগুড়ি পিপিএসের সদস্য পীযূষ সরকার বলেন, "প্রথম দিন থেকেই আমরা উদ্ধার কাজে করে যাচ্ছি ৷ উদ্ধারের পাশাপাশি মানুষের যা দরকার, তা দিয়ে আমরা সহযোগিতা করছি ৷"
আরও পড়ুন: