উত্তরপাড়া, 17 অগস্ট: ঠিক এক দশক আগে ‘হোক কলরব’ স্লোগানে গর্জে উঠেছিল কলকাতা ৷ ছাত্র আন্দোলনের আঁচে ফুটতে শুরু করেছিল গোটা শহর ৷ সেবার শ্লীলতাহানির অভিযোগ ঘিরে সংগঠিত ছাত্র আন্দোলন কতটা শক্তিশালী হতে পারে, ভালোভাবেই বুঝেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী ৷ আর এক্ষেত্রে আরজি করের নিহত ছাত্রী ডাক্তার হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু তাঁকে যে এভাবে লালসার দাঁত-নখের শিকার হতে হবে, কল্পনাতেও আসেনি কারও ৷ একটি মেয়ের জীবন এভাবে চলে গেলেও এখনও অধরা মূল চক্রীরা ৷ মেয়ের এই পরিণামে মায়ের পুজোর জৌলুস কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল উত্তরপাড়ার একটি পুজো কমিটি ৷ কমিটির সিদ্ধান্ত, এবার তারা রাজ্য সরকারের পুজোর অনুদান গ্রহণ করবে না ৷ নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা আগেই সামাজিক মাধ্যমে জানিয়ে দেয় পুজো কমিটি ৷ শনিবার সকালে ক্লাবের কর্মকর্তারা এই ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন ৷
আরজি কর মেডিক্যালের চিকিৎসক ছাত্রীকে খুন ও ধর্ষণের নৃশংসতায় কেঁপে উঠেছে গোটা দেশ ৷ রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে প্রতিবাদের ঝড় আছড়ে পড়েছে আমেরিকার বোস্টনেও ৷ পথে নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ ৷ প্রতিবাদে মুখর আট থেকে আশি ৷ ন্যক্কারজনক এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে একাধিক ক্লাব, সংগঠন ৷ তার মধ্যে রয়েছে উত্তরপাড়ার শক্তি সংঘও ৷
ক্লাব সদস্যরা দাবি করছেন, তাঁদের সিদ্ধান্তের পিছনে কোনও রাজনৈতিক কারণ নেই ৷ তাঁদের ক্লাবের গায়েও কোনও রাজনৈতিক রং নেই ৷ আরজি কর কাণ্ডে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারি আর কঠোর শাস্তির দাবিতেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত ৷ এক ক্লাব সদস্য জ্যোৎস্না পাত্র বলছেন, “অনেক কষ্ট করেই আমরা দুর্গাপুজো করি ৷ রাজ্য সরকারের অনুদান না নিলে এ বছর হয়তো আমাদের পুজো করতে কিছুটা অসুবিধে হবে ৷ কিন্তু পুজোর আগেও আমাদের কাছে একজন নারীর অবস্থান ৷ আমরা আরজি কর কাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ৷ দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি ৷ ঘটনার প্রতিবাদেই আমরা ক্লাবের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার আমরা দুর্গাপুজোর সরকারি অনুদান নিচ্ছি না ৷”
শক্তি সংঘের সম্পাদক বাসুদেব ঘোষ বলেন, “কোনও রাজনৈতিক কারণে যে আমরা সরকারি অনুদান নিতে অস্বীকার করছি সেটা নয় ৷ আমাদের ক্লাব আর্থিকভাবে যে খুব সবল, সেটাও নয় ৷ সরকারি অনুদান না নিলে আমাদের নিশ্চিতভাবেই পুজো করতে সমস্যা হবে ৷ কিন্তু তবু আমাদের মনে হয়েছে, যতক্ষণ না আরজি করের ঘটনায় দোষীদের শাস্তি না হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের যে কোনও উপায়ে প্রতিবাদ জানিয়ে যাওয়া উচিত ৷ তাই আমরা এবার পুজোর সরকারি অনুদান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের প্রতিবাদ জানিয়েছি ৷ এভাবেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে যাব ৷”
শক্তি সংঘের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে উত্তরপাড়া শহর তৃণমূলের সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেন, “আরজি করের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পথে নেমেছেন ৷ দোষীদের গ্রেফতার করতে সরকার সবরকম চেষ্টা করছে ৷ সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে ৷ এখন যদি কোনও ক্লাব এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তবে সেটা সম্পূর্ণ তাদের সিদ্ধান্ত ৷ এই সিদ্ধান্তের কথা লিখিতভাবে তাদের জেলা প্রশাসনকে জানানো প্রয়োজন ৷ তবে মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানোর প্রতিবাদে আমরাও আগামিকাল উত্তরপাড়ায় একটি মিছিলের ডাক দিয়েছি ৷”
এনিয়ে বিজেপি নেতা পঙ্কজ রায় বলেন, “যদি কোনও ক্লাব এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তবে আমি তাদের বলব, রাজ্যের এই অনুদান ফিরিয়ে না দিয়ে সেই টাকায় নারীদের নিরাপত্তা বাড়াতে এলাকায় আরও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হোক ৷ বেহাল পুলিশ কোয়ার্টারের সংস্কার করা হোক ৷ তবে মানুষ এই ক্লাবকে মনে রাখবে ৷”