সন্দেশখালি, 8 ফেব্রুয়ারি: বেলা গড়াতেই গ্রামবাসীদের থানা ঘেরাও আন্দোলন ঘিরে বৃহস্পতিবার আবারও উত্তাল হয়ে উঠল সন্দেশখালি । বাঁশ, লাঠিসোঁটা এবং ঝাঁটা নিয়ে এ দিন বিকালে কয়েকশো আদিবাসী মহিলা জড়ো হন সন্দেশখালি থানার সামনে । তাতে সামিল হন গ্রামের পুরুষেরাও । রীতিমতো পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও বেঁধে যায় আন্দোলনকারীদের । পরিস্থিতি সামাল দিতে থানা চত্বরে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয় । বসিরহাটের এসডিপিও আমিনুল ইসলামকে হস্তক্ষেপ করতে হয় পরিস্থিতি সামাল দিতে । প্রত্যেক গ্রামবাসীরই একটাই দাবি,"শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতা শিবু হাজরা এবং উত্তম সরদারকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে । নইলে তাঁরাই যা শাস্তি দেওয়ার তা দেবেন ৷"
শুধু তাই নয় এ দিন গ্রামের মহিলারা সন্দেশখালির দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারের দাবিতেও সরব হন । পথে নেমে এ দিন মহিলারা আওয়াজ তুলেছেন, 'শিবু হাজরা, উত্তম সরদারদের মতো তৃণমূল নেতারা নিপাত যাক ।' তাঁদের 'কালো হাত,ভেঙে দেওয়ার' স্লোগানও উঠেছে আন্দোলনকারীদের মিছিল থেকে । ফলে সন্দেশখালির পরিস্থিতি ক্রমশই উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে । আধাঁর নেমে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে । তবু, নাছোড়বান্দা গ্রামবাসীদের একাংশ ত্রিমোহনী মোড়, বাজার-সহ বিভিন্ন এলাকা এখনও নাকাবন্দি করে রেখেছেন । পুলিশও সজাগ রয়েছে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে । তবে, যেভাবে গ্রামবাসীদের মধ্যে জনবিস্ফোরণ বেড়ে চলেছে, তাতে বড়সড় ঘটনা ঘটার আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না ।
এ দিন সন্দেশখালির স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের পাশাপাশি সাধারণ গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মূলে ছিল পুলিশ প্রশাসনও । কারণ,বারবার শেখ শাহজাহানের লেঠেল বাহিনীর অন্যায় এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ । উলটে পুলিশের একাংশ শাহজাহানের বেআইনি কাজে প্রশ্রয় দিয়ে গিয়েছেন দিনের পর দিন । জোর করে জমি দখল করে মাছের ভেড়ি করা হোক, কিংবা জমিতে নোনাজল ঢুকিয়ে কৃষকদের সেখান থেকে বের করে দেওয়া, সবেতেই নিশ্চুপ থেকেছে স্থানীয় পুলিশ মহলের একাংশ । যার ফলস্বরূপ সন্দেশখালিতে গণজাগরণ হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের ৷
এই ঘটনার পর অনেকের উপলদ্ধি,সন্দেশখালির সাধারণ মানুষ কতটা ক্ষিপ্ত হলে শেখ শাহজাহান ও তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ নেতা শিবু হাজরা এবং উত্তম সরদারের বিরুদ্ধে পথে নেমে মুখ খুলতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এই উলটপুরাণ সম্ভব হয়েছে সন্দেশখালি কাণ্ডের 'মাস্টারমাইন্ড' তৃণমূলের বাহুবলী নেতা শেখ শাহজাহান 'ফেরার' হতেই ।
অন্যদিকে, থানা ঘেরাওয়ের মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকেলে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতা শিবু হাজরা এবং উত্তম সরদারের বিরুদ্ধে সন্দেশখালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন গ্রামবাসীরা । পুলিশ অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি তখনকার মতো স্বাভাবিক হয় । এ বিষয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী বলেন, "বুধবারও আমরা এই দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলাম । কিন্তু,পুলিশ বলছে সেই অভিযোগপত্র নাকি নিয়ম মেনে করা হয়নি । তাই,নতুনভাবে বৃহস্পতিবার আবারও এই দুই তৃণমূল নেতার অভিযোগ দায়ের করলাম । পুলিশের উপর আমাদের কোনও ভরসা নেই । তবু তদন্তের স্বার্থে ভরসা করতে হচ্ছে । যদি পুলিশ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরাই ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব ।"
ওই মহিলার কথায়,"বুধবার এলাকায় মিছিল করার সময় তাঁর উপর চড়াও হয় শিবু হাজরা এবং উত্তম সরদারের দলবল । মারধরের পাশাপাশি তাঁর শ্লীলতাহানিও করা হয় । অথচ পুলিশ মিথ্যা মামলায় পাঁচ নিরীহ গ্রামবাসীকে তুলে নিয়ে এসেছে । এঁদের মুক্তি দিতেই হবে । নইলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব আমরা ।"
অন্যদিকে, গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দু'জনকে গ্রেফতার করেছে বলে খবর সূত্রের । যদিও তাঁদের নাম জানাতে রাজি হননি বসিরহাটের এসডিপিও আমিনুল ইসলাম ।
আরও পড়ুন: