বোলপুর, 23 অক্টোবর: বাংলাদেশের তত্ত্ববধায়ক সরকার যোগাযোগ করেনি, মেলেনি ভারত সরকারের ইঙ্গিত বা নির্দেশ, তাই বিশ্বভারতীতে আন্তর্জাতিক 'বাংলাদেশ ভবনের' সংগ্রহশালা খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে । এই নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনোরকম ঝুঁকি নিতে নারাজ ৷
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, "বাংলাদেশের নতুন সরকার এখনও পর্যন্ত কোনও যোগাযোগ করেনি ৷ ভারত সরকার থেকেও কোনও নির্দেশ আসেনি ৷ এই পরিস্থিতিতে সর্বসাধারণের জন্য বাংলাদেশ ভবনের মিউজিয়াম খুলে দেওয়া হয়নি ৷ দেখা যাক কবে খোলা সম্ভব হয় ।"
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ইস্যুতে উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশ । ছাত্র আন্দোলন রূপ নিয়েছিল গণ আন্দোলনে ৷ এরপরই গত 5 অগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুসের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার চলছে ।
সেই সরকারের দু’মাস অতিক্রান্ত হয়েছে । কিন্তু, এখনও পর্যন্ত বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবন সংক্রান্ত কোনও কাজের জন্য ওপার থেকে বার্তা আসেনি ৷ অর্থাৎ, বিশ্বভারতীর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বাংলাদেশের নতুন সরকার ৷ এমনকি, ভারত সরকারের তরফেও মেলেনি কোনও ইঙ্গিত বা নির্দেশিকা ৷ দুই দেশের বিদেশনীতি বা আন্তজার্তিক সম্পর্ক কোন পথে, তা এখনও স্পষ্ট নয় ।
তাই কবে আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবনের সংগ্রহশালা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে, তা কার্যত বিশবাঁও জলে ৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশ ভবনের সংগ্রহশালা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার ঝুঁকি নিতেই নারাজ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । কারণ, বিশ্বভারতীর এই বাংলাদেশ ভবন ওপার বাংলার অর্থানুকূল্যেই নির্মিত ৷ সংগ্রহশালায় রয়েছে 71-এর মুক্তিযুদ্ধের যাবতীয় তথ্য, নথি, নিদর্শন । রয়েছে মুজিবর রহমান-সহ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্য, স্থাপত্য শৈলী প্রভৃতি ।
এমনকি, বাংলাদেশ ভবনে সংরক্ষণের জন্য গত 15 জুলাই মুজিবর রহমানের একটি বৃহৎ ভাস্কর্য হাসিনা সরকার বিশ্বভারতীর হাতে তুলে দিয়েছিল ৷ সেটিও রয়েছে আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবনে । তাই কবে খুলবে বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবনে সংগ্রহশালা, তার কেউ জানে না । যদিও, অফিস ও গ্রন্থাগার খোলা রয়েছে পড়ুয়াদের জন্য ৷
আন্তর্জাতিক 'বাংলাদেশ ভবন'
বাংলাদেশ সরকারের 40 কোটি টাকা ব্যায়ে বিশ্বভারতীর ইন্দিরা গান্ধি জাতীয় সংহতি কেন্দ্রের মাঠে 40 হাজার স্কোয়ার ফুট জায়গা জুড়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক 'বাংলাদেশ ভবন' । 2018 সালের 25 মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন । উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ।
এই ভবনের নক্সা তৈরি করেছিলেন খোদ বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই । পরে এই ভবন পরিচালনা জন্য বাংলাদেশ সরকারের তরফে 10 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল । চুক্তি হয়েছিল এই টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে রেখে তার সুদের অঙ্ক দিয়ে বাংলাদেশ ভবন রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে ৷ আর ভবনের দায়িত্ব বিশ্বভারতীর ।
এই ভবনে সংগ্রহশালা ছাড়াও রয়েছে গ্রন্থাগার, সভাকক্ষ, প্রেক্ষাগৃহ প্রভৃতি । দুই বাংলার ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণার সুব্যবস্থা রয়েছে বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবনে ৷ আর বিশ্বভারতীতে প্রতি বছর 30 থেকে 40 জন বাংলাদেশের পড়ুয়া ভর্তি হন ৷ বর্তমানে বিশ্বভারতীতে 35 জন বাংলাদেশী পড়ুয়া রয়েছেন ৷