কুলপি, 25 জুলাই: দু'জনের জন্মের তারিখ আলাদা ৷ বয়সের ব্যবধান দু'বছরের ৷ একজনের বয়স 18 এবং আরেকজনের 20 ৷ এ সব আলাদা হলেও আধার নম্বর এক ৷ আধার কার্ড বিভ্রাটের ছবি দক্ষিণ 24 পরগনার কুলপি ব্লকের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বিজলী পরিবারের ৷ এই সমস্যার জেরে সাত বছর ধরে সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত দুই বোন জয়শ্রী বিজলী ও বনশ্রী বিজলী ৷
যদিও এই ঘটনা শোনার পর কুলপির বিডিও সুভাষ গুপ্তা আশ্বাস দিয়েছেন, "এই প্রথম এরকম ঘটনার কথা শুনলাম ৷ একই আধার নম্বর নিয়ে আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি ৷ এটা অদ্ভুত ব্যাপার ৷ কারণ আধার কার্ড যাচাইয়ের জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আধার কার্ড করা হয় ৷ বেশিরভাগ প্রক্রিয়াটাই অনলাইনে সম্পন্ন হয় ৷ পুরোটাই বায়োমেট্রিক দিয়ে আধার কার্ড করতে হয় ৷ এরপরেও দু'জন মেয়ের নামে একই আধার নম্বর কী করে ইস্যু হল, সেটা বোঝা খুব কঠিন ৷ তবে যদি তাঁরা আমাদের কাছে আসেন, আমরা অবশ্যই সাহায্য করব এবং চেষ্টা করব সমস্যার সমাধান করার ৷ এর জন্য তাঁদের আমাদের কাছে আসতে হবে ৷"
জানা গিয়েছে, রত্নাকর বিজলীর তিন মেয়ে ৷ জয়শ্রী বড় ও বনশ্রী মেজো মেয়ে ৷ জয়শ্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে ৷ বনশ্রী এখনও ছাত্রী ৷ 2013 সালে বনশ্রীর আধার কার্ড তৈরি করা হয়েছিল ৷ পরে 2017 সালে তাঁর দিদি জয়শ্রীর আধার কার্ড তৈরি করা হয় ৷ জয়শ্রীর আধার কার্ড তৈরি করার পর থেকেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে ৷ দুই বোনের আধার কার্ড দু'টি আলাদা হলেও তাতে নম্বর একই রয়েছে ৷ আধার কার্ডে বনশ্রীর আঙুলের ছাপ মিলছে ৷ তবে আধার নম্বর দিলে আসছে জয়শ্রীর নাম ও ছবি ৷ আর এই বিষয় নিয়েই তৈরি হয়েছে জটিল সমস্যা ৷
দিদির বিয়ে হয়ে গেলেও আধার কার্ডের এই সমস্যার জর্জরিত বনশ্রী ৷ এ বছর বনশ্রী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে ৷ কলেজেও ভর্তি হতে পারেনি ৷ এমনকী আধার কার্ডের সমস্যার জন্য সরকারি প্রকল্পের কোনও সাহায্য পায় না বনশ্রী ৷ এখনও পর্যন্ত সে কন্যাশ্রী প্রকল্পেরও টাকাও পায়নি ৷ রেশনও তাঁর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ কোভিডের সময় পরিবারের বাকি সকলে ভ্যাকসিন পেলেও আধার কার্ডের সমস্যার জন্য বনশ্রীর কপালে ভ্যাকসিন পর্যন্ত জোটেনি ৷ আধার কার্ড সংশোধনের জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে যোগাযোগ করেছে বনশ্রী ও তাঁর পরিবার ৷ তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে দাবি ওই ছাত্রীর ৷
এ বিষয়ে বনশ্রীর মা স্বপ্না ও বাবা রত্নাকর বিজলী বলেন, "দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ধরে দুই মেয়ের আধার কার্ডের এই সমস্যা নিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েছি ৷ আধার কার্ড সংশোধনের জন্য বিভিন্ন দফতরে গিয়েছি ৷ এমনকী কলকাতার আধার কার্ডের অফিসে গিয়েছি ৷ সেখানেও কোনও কাজ হয়নি ৷ আধার কার্ড সংশোধনের জন্য এখনও পর্যন্ত প্রায় 60 হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে ৷ দিনমজুরের কাজের টাকায় সংসার চলে আমাদের । দরিদ্র পরিবারে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে বুঝে উঠতে পারছি না ।"