মালদা, 23 অগস্ট: দু’জনেই পঞ্চায়েত প্রধান ৷ একজন বর্তমান, একজন প্রাক্তন ৷ দু’জনেই কংগ্রেসের গ্রামীণ নেতা ৷ নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর নাম ভাঙিয়ে এলাকায় তোলাবাজি করার দায়ে তাঁদের দু’জনকেই গ্রেফতার করেছে কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷ এই খবর চাউর হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় ৷ বিব্রত কংগ্রেস শিবির ৷
ধৃতদের নাম মতিউর রহমান ও রাবণ মণ্ডল ৷ মতিউর কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের চরি অনন্তরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান ৷ রাবণ ওই ব্লকেরই শাহবাজপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান ৷ স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরেই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরের নোটিশ পাচ্ছিলেন ৷ সেসব নোটিশে হেরোইন বা ব্রাউন সুগার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারকোটিক্স ব্যুরোর কলকাতা অফিসে নির্দিষ্ট দিন এবং সময়ের মধ্যে হাজির হওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল ৷ সেই নোটিশ কিন্তু সরাসরি ব্যবসায়ীদের কাছে যাচ্ছিল না ৷ নোটিশেই উল্লেখ থাকত, শাহবাজপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের কাছে নোটিশ পাঠানো হচ্ছে ৷ তিনি নিজে বা পঞ্চায়েত কর্মীদের মাধ্যমে নোটিশে নাম থাকা ব্যক্তিদের বাড়িতে সেই চিঠি পৌঁছে দেবেন ৷
কারও বাড়িতে নোটিশ পৌঁছনোর পর কী হত ? এলাকার এক ব্যবসায়ী আসিরুদ্দিন শেখ জানাচ্ছেন, “আমিও এমন নোটিশ পেয়েছি ৷ প্রধান রাবণ মণ্ডল নিজে আমার বাড়িতে সেই নোটিশ পৌঁছে দিয়ে এসেছেন ৷ সেই সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না ৷ আমার স্ত্রীর হাতে তিনি নোটিশ ধরিয়ে যান ৷ বাড়ি ফিরে সব জেনে প্রথমে ভয় পেয়ে যাই ৷ আমি কোনওদিন এসব কাজের সঙ্গে জড়িত নই ৷ তাহলে আমার নামে নোটিশ কেন ? যোগাযোগ করি প্রধানের সঙ্গে ৷ তিনি আমাকে জানান, নারকোটিক্স ব্যুরোর সঙ্গে মতিউর রহমানের খুব ভালো পরিচয় ৷ তিনি আমাকে সাহায্য করতে পারেন ৷ আমি মতিউরের সঙ্গে দেখা করি ৷ কিন্তু তিনি প্রথমেই আমার কাছে দু’লাখ টাকা চেয়ে বসেন ৷ তখনই আমার সন্দেহ হয় ৷”
শাহবাজপুরের বাসিন্দা অজিত মণ্ডল বলেন, “আমি দিনমজুর ৷ কোনওরকমে সংসার চালাই ৷ আমার নামেও নোটিশ আসে ৷ প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, লাখখানেক টাকা দিলে আমাকে আর নারকোটিক্স ব্যুরোয় যেতে হবে না ৷ তিনি ম্যানেজ করে নেবেন ৷ প্রধানের কথা শুনে আমার খটকা লাগে ৷ আমি বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করি ৷ তাঁরা আমাকে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেন ৷”
এই ঘটনায় স্থানীয় গোলাপগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন উৎপল মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসী ৷ অভিযোগ পেয়েই তদন্তে নামে পুলিশ ৷ গ্রেফতার করা হয় রাবণ মণ্ডল ও মতিউর রহমানকে ৷ এ প্রসঙ্গে কালিয়াচকের এসডিপিও ফয়সাল রাজা জানিয়েছেন, “নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর নামে ভুয়ো নোটিশ পাঠিয়ে সাধারণ গ্রামবাসীদের কাছে তোলাবাজি চালানোর অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ দু’জনের কারও নারকোটিক্স ব্যুরোর সঙ্গে সম্পর্ক নেই ৷ এই জালিয়াতির জন্য ভারতীয় ন্যায়সংহিতার নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ধৃতদের মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷ 10 দিনের আবেদন জানানো হলেও দু’জনকে সাতদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ৷ আপাতত তাঁদের জেরা করা হচ্ছে ৷ এই জালিয়াতি চক্রে আরও কে কে জড়িত, তা জানার চেষ্টা চলছে ৷”
এই ঘটনায় বিব্রত জেলা কংগ্রেস শিবির ৷ এলাকার কংগ্রেস সাংসদ ইশা খান চৌধুরী জানিয়েছেন, “ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে তা এখনও জানি না ৷ তবে ঘটনার কথা জানতে পেরেছি ৷ কংগ্রেস এসব কাজকে কখনও প্রশ্রয় দেয় না ৷ আইন আইনের মতো চলবে ৷ তবে এর পিছনে তৃণমূলের কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না সেটাও পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে হবে ৷”