ত্রিবেণী, 12 ফেব্রুয়ারি: ঝাঁ-চকচকে ঘাট থেকে মিউজিয়াম ৷ উজ্জয়িনীর মডেলে হুগলির ত্রিবেণীকে ধর্ম নগরী হিসেবে দেখতে চায় কুম্ভমেলা পরিচালন সমিতি । আর সে কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে তারা ৷ পাশাপাশি ত্রিবেণীকে 'হেরিটেজ' ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে কুম্ভ মেলা পরিচালন সমিতির তরফে ৷
কুম্ভমেলা কমিটির চিফ পেট্রন কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এখানে শুধু কুম্ভ মেলাই নয়, আগামিদিনে ত্রিবেণীকে হেরিটেজ ঘোষণার জন্য আমরা কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছি । আগামিদিনে কেন্দ্রের তরফেও সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি আমরা । সপ্তগ্রাম থেকে ত্রিবেণীর সাত কিমি এলাকার মধ্যে 24টি ঘাট রয়েছে । সেই ঘাটগুলির সংস্কার, রিসার্চ মিউজিয়াম তৈরি করে উজ্জয়িনীর মডেলে ত্রিবেণীকেও ধর্ম নগরী তৈরি করুক কেন্দ্র সরকার ।"
মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য এ বছর কাটছাঁট করা হয়েছে ত্রিবেণীর কুম্ভমেলা। শর্ত সাপেক্ষে মিলেছে প্রশাসনিক ছাড়পত্র । এবার 11 ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে সোমবার অর্থাৎ 12 ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে শুরু হচ্ছে মেলা ৷ চলবে 13 ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত ৷ লক্ষাধিক মানুষের আগমন হবে এই কুম্ভমেলায়, মনে করছেন আয়োজকরা। সেই উপলক্ষে মেলা ঘিরে আনুষ্ঠানিকভাবে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা জানাল কুম্ভমেলা পরিচালনা সমিতি।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত-সহ বাংলাদেশ, নেপাল থেকে সাধু সন্তরা ভিড় জমাবেন ত্রিবেণীতে। দেড়দিন ব্যাপী চলবে কুম্ভমেলার অনুষ্ঠান ৷ সোমবার বিকেল থেকে শুরু হবে হোম যজ্ঞ ও ধর্ম সম্মেলন । 13 ফেব্রুয়ারি সকালে নগরকীর্তনের পর হবে শাহি স্নান । মঙ্গলবার ভান্ডারাও দেওয়া হবে সাধুদের উদ্দেশে। এরপরেই বিকেলে শেষ হবে অনুষ্ঠান ৷
স্থানীয় ইতিহাসবিদ অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "ভারতে চারটি জায়গায় কুম্ভ হয় । প্রয়াগরাজে যেমন গঙ্গার যুক্তবেণী । বাঁশবেড়িয়ার ত্রিবেণী অর্থাৎ এখানে মুক্তবেণী। আমরা কানাডিয়ান লেখক ও ফিল্ম মেকার এলান মরিনিসের একটি বই থেকে ত্রিবেণী কুম্ভের কথা জানতে পাড়ি। এছাড়াও পুরাণে ত্রিবেণীর নাম পাওয়া গিয়েছে । সপ্তগ্রাম বাণিজ্য বন্দর থাকাকালীন এই স্থানের জনপ্রিয়তা বাড়ে। যদিও পরবর্তীকালে বিদেশী আক্রমণে এর মাহাত্ম্য কমে যায় । কিন্তু মাঘ সংক্রান্তিতে বহু মানুষ ত্রিবেণীতে স্নান করেন। সেই সূত্র ধরে ত্রিবেণী অনুকুম্ভের জন্ম হয়েছে । ভান্ডারা দেওয়া হবে সাধু-সন্তদের ।"
উল্লেখ্য, গবেষক ও সাধুসন্তের তথ্য আনুযায়ী, 704 বছর আগে এই কুম্ভের সূচনা হয়েছিল বাঁশবেড়িয়ার ত্রিবেণীতে। গঙ্গার ঘাটে মাঘ সংক্রান্তি উপলক্ষে বহু পুণ্যার্থী হাজির হত এখানে । প্রয়াগরাজের পর গঙ্গা যমুনা সরস্বতী নদী মুক্ত বেণী হচ্ছে হুগলির বাঁশবেড়িয়ার ত্রিবেণীতে । নানা ইতিহাস খুঁজে মহানির্মানী আখড়ার সাধুসন্তরা কুম্ভের সন্ধান পেয়েছেন । তারই জন্য দু'বছর ধরে সেজে উঠছে ত্রিবেণীর কুম্ভমেলা । কিন্তু এ বছর মাধ্যমিকের জন্য মেলায় বাধ সেজেছে । এছাড়াও ফের প্রশ্ন উঠেছে কুম্ভের ইতিহাস নিয়েও । বাংলা সাহিত্য ও কাব্যের মধ্যেও মিলেছে কুম্ভের কথা ।
1979 সালে বিদেশি এলান মরিনিসের একটি তথ্য অক্সফোর্ডে জমা দেওয়া হয়েছিল । ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালনা সমিতি, সাধুসন্তদের পক্ষ থেকে এই তথ্য অনুসন্ধান করা হয়েছে ও সংরক্ষিত করা রয়েছে । এ বছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে কুম্ভের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। জেলা প্রশাসন সম্মতি না-পেলেও কুম্ভ পরিচালনা সমিতি বিশেষ শর্তে অনুমতি আদায় করেছে । তাই মেলা কমিটির নির্ধারিত দিনের বদলে তার থেকে একদিন পরে শুরু হচ্ছে মেলা । বাঁশবেড়িয়া শিবপুর মাঠের পরিবর্তে শিবপুর ক্যাম্পে কুম্ভমেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে । ব্যবহার করা যাবে না লাউড স্পিকার । 36 ডেসিবেল পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে শব্দমাত্রা ।
আরও পড়ুন: