মালদা, 4 জানুয়ারি: অবশেষে মুখ খুললেন নিহত তৃণমূল নেতা দুলাল সরকারের স্ত্রী চৈতালি ঘোষ সরকার ৷ স্বামীর নৃশংস মৃত্যুর পর প্রথমবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানালেন, এক বা দু'জন নয়, এই ঘটনার পিছনে একাধিক মানুষের গভীর চক্রান্ত রয়েছে ৷ এদিকে শুক্রবারই এই খুনের ঘটনায় ধৃত তিন জনকে 14 দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে জেলা আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷ জেলা আদালতের মুখ্য দায়রা বিচারক পুলিশের আবেদন মেনে নিয়ে তিন দুষ্কৃতীকে 14 দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ৷
নিহত দুলাল সরকারের স্ত্রী চৈতালি এদিন বলেন, "ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে, তা আমি এখনও বুঝে উঠতে পারিনি ৷ কারণ, মানুষটা সবসময় মানুষের মধ্যেই মিশে থাকত ৷ তার আশেপাশে সবসময় লোকজন থাকত ৷ সেই লোকজনের মধ্যে অবশ্য ভালো ও মন্দ মিশে থাকে ৷ অবশ্যই এর পিছনে বড় চক্রান্ত রয়েছে ৷ কিছু মানুষ অবশ্যই চক্রান্ত করেছে ৷ নইলে এই ঘটনা ঘটত না ৷ রাস্তায় কোনও দুর্ঘটনা কিংবা অসুস্থ হয়ে মারা গেলে কিছু বলার ছিল না ৷ কিন্তু যেভাবে একাধিক জন নৃশংসভাবে ওকে গুলি করেছে, তারা নিশ্চয়ই বিশেষ কোনও জায়গা থেকে সেই সাহসটা পেয়েছে ৷"
তাঁর আরও সংযোজন, "একাধিক জন পিছন থেকে তাদের সেই সাহসটা দিয়েছে ৷ এটা এক বা দু'জনের কাজ নয় ৷ একাধিক মানুষের চক্রান্তের শিকার হয়েছে ও ৷ ওরা হয়তো ভেবেছিল, এই মানুষটা থাকলে ওদের সুবিধে হচ্ছে না ৷ সেই জন্য একে সরিয়ে দেওয়া জরুরি ৷ সেকারণেই তারা এই চক্রান্ত করেছে ৷ তবে কে বা কারা এই চক্রান্ত করেছে সেটা আমার জানা নেই ৷ পুলিশ আর মুখ্যমন্ত্রীর উপর আমার বিশ্বাস আছে ৷ পুলিশ নিশ্চয়ই তদন্ত করে চক্রান্তকারীদের খুঁজে বের করবে ৷"
ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলর চৈতালি আরও বলেন, "দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে ৷ তখনও জানি না, ও কী অবস্থায় রয়েছে ৷ তিনি যা বললেন, আমি শুনলাম ৷ জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে আমার আবেদন, তাঁরা যেন আমাকে সঠিক বিচার দেন ৷ আমার স্বামীকে কিছু করার ব্যাপারে বিহারের লোকের কোনও মতলব থাকতে পারে না ৷ তাদের কেউ নিশ্চয়ই ভাড়া করেছে ৷ নিজেদের আঁতে ঘা-লাগার জন্যই তারা তাদের ভাড়া করেছে ৷ এটা পরিষ্কার ৷ এর আগেও ওর উপর হামলা হয়েছিল ৷ একটি ছেলে কুকর্ম করতে গিয়েছিল ৷ বাধা দেওয়ায় সে হামলা চালায় ৷ সেবার প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল ৷ কিন্তু এবার ওকে পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ এটা মেনে নেওয়া যায় না ৷"
অন্যদিকে, মালদা জেলা আদালতের সিজেএম কোর্টের সহকারী সরকারি আইনজীবী দেবজ্যোতি পাল জানিয়েছেন, এই ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার 103 ধারায় খুন ও 61 ধারায় সমাজবিরোধী কাজ করার চক্রান্তের মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ একইসঙ্গে অস্ত্র আইনেও মামলা রুজু হয়েছে ৷ তবে এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ডের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি ৷ এনিয়ে তদন্ত চলছে ৷ ঘটনার পর সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ আপাতত 3 জনকে গ্রেফতার করেছে ৷ তারা আপাতত 14 দিনের পুলিশি হেফাজতে ৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি ৷"