কলকাতা, 21 মার্চ: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লাগু হতেই আতঙ্কে নেতাজি নগরে আত্মহত্যা করেছেন এক যুবক। 31 বছরের দেবাশিস সেনগুপ্ত আতঙ্ক থেকেই বুধবার আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে পরিবারের দাবি। মৃতের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, দেবাশিসের বাবা ও মায়ের সিএএর জন্য প্রয়োজনীয় নথি ছিল না। আর সেই আতঙ্ক থেকেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি, এমনই অভিযোগ। এই খবর সামনে আসতেই মৃত যুবকের বাড়িতে যায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল ৷ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, "সিএএ আতঙ্ক থেকেই যুবক আত্মহত্যা করেছেন ৷"
আত্মহত্যার খবর সামনে আসতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত এই অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেস এই শোকার্ত পরিবারের পাশেই রয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল নেতাজিনগরে ওই যুবকের বাড়িতে যায়। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, দলের মুখপাত্র তথা কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী, যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী তথা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এবং দলের রাজ্যসভার সাংসদ নাদিমুল হক।
মৃত যুবকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, "দেবাশিসের আতঙ্ক এটাই ছিল সে দেশছাড়া হয়ে যাবে, মাটি ছাড়া হয়ে যাবে ৷ তার বাবার মুখ থেকেই শুনলাম ৷ সে একদম ভেঙে পড়েছিল ৷ অথচ সে কালীঘাটের কাছে বেসরকারি স্কুলে মেধাবী ছাত্র ছিল ও খেলাধূলাতেও ভালো ছিল ৷ সিএএ নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে ৷ অসমেও করেছে ৷ একের পর এক মানুষের মৃত্যু হয়েছে ৷ যে খেলাটা বিজেপি খেলছে সেটা অত্যন্ত মারাত্মক ৷ যারা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে আর কতদিন লাগবে?"
প্রসঙ্গত, দেশে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লাগু হওয়ার পর সবার আগে এবিষয়ে সরব হন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সময়ই তিনি বলেছিলেন, কোনওভাবেই সিএএর নামে নাগরিকের নাগরিকত্ব হরণের চেষ্টা হলে তিনি রুখে দেবেন। যদিও এরপর বিধি লাগু হয়েছে, এই নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে। কেউ বলছে সিএএ'র পিছু পিছু এনআরসিও লাগু হবে দেশে। নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে ও তাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এদিন এই আত্মহত্যার ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই সিএএ প্রশ্নে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী তথা মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "আমরা বারবারই বলছিলাম এই আইন শুধু জোর করে মানুষের উপর যে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাই নয়, এই আইন জনগণের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে। আমাদের চিন্তা যে অমূলক নয় তা আজ প্রমাণ হয়ে গেল। কলকাতার নেতাজিনগরে যেখানে 31 বছরের একটি ছেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, "তার পরিবারের তরফ থেকে বারবার বলা হয়েছে দেবাশিস সেনগুপ্ত আতঙ্কিত ছিলেন সিএএ ও এনআরসির মতো আইনে তার নাগরিকত্ব চলে যাবে না তো! তিনি ভারতবর্ষের নাগরিক হিসেবে থাকতে পারবেন তো! এটাই তাঁর কারণ আত্মহত্যার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি কী দেখছেন! আপনার রক্ত পিপাসা কি এরপরেও থামবে না?"
আরও পড়ুন: