বরানগর, 14 জুন: নিউটাউনে রেঁস্তোরার মালিকের সঙ্গে তৃণমূলের তারকা বিধায়কের হাতাহাতির ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি । তারই মধ্যে শাসকদলের আরও এক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে 'দাদাগিরি'-র অভিযোগ উঠল । এবার বরানগরে বিজেপির এক বিশেষভাবে সক্ষম কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে । আক্রান্ত কমল সরকার জাতীয় স্তরের একজন ক্রিকেট খেলোয়াড়ও । ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে বাড়ির বাইরে বেরতে পারছেন না তিনি । বিজেপি করার অপরাধে তাঁকে তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু মজুমদারের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছে বলে দাবি কমলের । যদিও অভিযুক্ত কাউন্সিলরের এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ তবে বিষয়টি ভালোভাবে নেননি স্থানীয় শাসকদলের নেতারা । অভিযোগ পেয়ে ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বরানগরে দলের এক সভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন বরানগর পৌরসভার 1 নম্বর ওয়ার্ডের নর্দান পার্কের বাসিন্দা কমল । অভিযোগ, বুধবার রাতে বাড়ি ফেরার সময় বরানগর পৌরসভার 14 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু মজুমদার ওরফে মেজোর অনুগামীরা তাঁকে উত্ত্যক্ত করে । এর জেরে দু'পক্ষের মধ্যে বচসা বাঁধে। সেই বচসা ক্রমশ ধাক্কাধাক্কির রূপ নেয় । তাঁকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করেন কাজু । প্রতিবাদ করতেই তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু এসে তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ।
ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত আক্রান্ত বিজেপি কর্মী । বিজেপি কর্মী-সমর্থক কমল বলেন, "কেন যে আক্রান্ত হলাম, আমি নিজেও বুঝতে পারছি না । রাতে বাড়ি ফিরছিলাম । গলির মোড়ে মেজোর অনুগামীরা আমাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করেন । ওঁদের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ি । ধাক্কাধাক্কি হয় । হঠাৎ কিছুই না জেনেশুনে মেজো আমাকে মারতে আরম্ভ করলেন । ঘটনায় আমি অত্যন্ত আতঙ্কিত ! কোনও দিন ভাবতে পারিনি মেজো আমার গায়ে হাত দেবেন !"
সূত্রের খবর, কমল এলাকায় বিজেপি করলেও তাঁর স্ত্রী কিন্তু ওয়ার্ডে তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত । ফলে ঘটনাটি এক অন্য মাত্রা নিয়েছে । এদিকে মারধরের ঘটনাকে সমর্থন করেনি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব । এই বিষয়ে বরানগর পৌরসভার চেয়ারম্যান ইন-কাউন্সিল অঞ্জন পাল বলেন, "কমলকে আমি চিনি । 14 নম্বর ওয়ার্ডে ওঁর স্ত্রী তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত । কমল শুনলাম বিজেপি করছিলেন । বিজেপি করলেই তাঁকে মারতে হবে, এরকম মানসিকতা তৃণমূলের নেই । আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বার্তা পাঠাচ্ছেন, কোনও অবস্থাতেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসহযোগিতা করা যাবে না । কারও ওপর যেন অত্যাচার না হয় । আমাদের মতো স্থানীয় স্তরের নেতৃত্বকে অবশ্যই সংযত থাকতে হবে । কী হয়েছে আমার জানা নেই। তবে আমাদের কাউন্সিলার শান্তনুর সঙ্গে আমি ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলব । বিষয়টি জানার চেষ্টা করব ।"
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ওই তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বরানগর থানায় মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন আক্রান্ত বিজেপি কর্মীর পরিবার । সেই অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামলেও এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করা হয়নি । পুলিশের কথায়, "সবদিক খতিয়ে দেখার পরই এনিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ।"