ঝাড়গ্রাম, 4 সেপ্টেম্বর: নাবালিকাকে ধর্ষণ করার দায়ে স্বঘোষিত গুরুদেবকে 22 বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিল ঝাড়গ্রাম আদালত ৷ বুধবার দুপুরে পকসো আদালতের বিচারক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় এই সাজা ঘোষণা করেন ৷ সাজাপ্রাপ্ত ধর্মগুরুর নাম বাসুদেব পাতর ৷ বয়স 51 ৷ বাড়ি ঝাড়গ্রাম থানা এলাকায় ৷ ধর্মশিক্ষার নামে মাদক খাইয়ে 16 বছরের ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ছিল তার নামে ৷ যার জেরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে নাবালিকা ৷
এই বিষয়ে ঝাড়গ্রাম আদালতের সরকারি আইনজীবী শুভাশীষ দ্বিবেদী বলেন ,"নাবালিকাকে ধর্ষণ করে অন্তঃসত্ত্বা করার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত স্বঘোষিত ধর্মগুরুকে 22 বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে ঝাড়গ্রামের পকসো আদালত । এছাড়াও, 25 হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও 6 মাস জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক । এর পাশাপাশি নাবালিকাকে 3 লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকারকে ।"
জানা গিয়েছে ,বাসুদেবের কীর্তনের দল ছিল । এলাকার লোকজনকে ধর্মশিক্ষা দিতেন তিনি । স্কুল পড়ুয়া নাবালিকাটিও বাসুদেবের বাড়িতে ধর্মশিক্ষার পাঠ নিতে যেত । অভিযোগ ওঠে, ধর্মশিক্ষার নামে বাড়িতে ডেকে মাদক খাইয়ে নাবালিকাকে আচ্ছন্ন করে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করত বাসুদেব । নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে পরিবারের নজরে আসে বিষয়টি । বাসুদেব তখন দাবি করে নাবালিকার পেটে টিউমার হয়েছে । এরপর নাবালিকাকে ঝাড়গ্রাম গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায় ধর্মগুরু । পরীক্ষার পর ধরা পড়ে নাবালিকা প্রায় 9 মাসের অন্তঃসত্ত্বা রয়েছে । 2023 সালের 21 সেপ্টেম্বর নাবালিকাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় । পুত্রসন্তান প্রসব করে নাবালিকা ।
অসুস্থতার জন্য 7 দিন চিকিৎসাধীন থাকে নাবালিকা । এরপর গত 28 সেপ্টেম্বর ঝাড়গ্রাম মহিলা থানায় বাসুদেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন নাবালিকার বাবা । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সেদিনই বাসুদেবকে গ্রেফতার করে ঝাড়গ্রাম মহিলা থানার পুলিশ । ধৃতের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও পকসো আইনের 6 ধারায় মামলা রুজু করা হয় । পুলিশ প্রথম দফায় গত বছর 24 নভেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেয় । বিচারের জন্য আদালত চলতি বছরের 9 জানুয়ারি চার্জ গঠন করে । চলতি বছরের 31 জানুয়ারি থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় । এর মধ্যেই অভিযুক্তের ডিএনএ পরীক্ষায় পিতৃত্বের প্রমাণ মেলে । এরপর 8 জুলাই পুলিশ অতিরিক্ত চার্জশিট আদালতে জমা দেয় । তদন্তকারী অফিসার প্রতিভা হালদার-সহ মোট 17 জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত । মঙ্গলবার বাসুদেবকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক । বুধবার সাজা ঘোষণা হয় ।
এই বিষয়ে ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেড কোয়ার্টার সৈয়দ মহম্মদ মাহমুদুল্লাহ হাসান সাংবাদিক সম্মেলনে করে বলেন,"গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের 28 তারিখে ঝাড়গ্রাম মহিলা থানায় নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ হয়েছিল । অভিযোগের 24 ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয় । পুলিশ খুবই গুরুত্ব সহকারে মামলার তদন্ত করে এবং দোষীকে দোষী সাব্যস্ত করে নির্যাতিতাকে বিচার পাইয়ে দিয়েছে ।"
ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকাকে ওষুধ দিয়ে গর্ভপাত, দোষী মা-ছেলের 10 বছরের কারাদণ্ড