ETV Bharat / state

'আমি তাঁর চেয়ে খাঁটি বামপন্থী', বুদ্ধবাবুর প্রয়াণে একগুচ্ছ অভিযোগ তসলিমার - Taslima Nasrin

Taslima Nasrin: "পরলোকে বিশ্বাস করি না তাই অন্য সবার মতো বলতে পারলাম না রেস্ট-ইন-পিস, অথবা যেখানে থাকুন ভালো থাকুন ইত্যাদি। তবে তাঁর জীবনে তিনি ভালো যেসব কাজ করেছেন, তার জন্য বলব, কমরেড, লাল সেলাম!" বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে তসলিমা নাসরিন ৷

Taslima Nasrin
বুদ্ধবাবুর প্রয়াণে একগুচ্ছ অভিযোগ তসলিমার (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 9, 2024, 12:34 PM IST

বাংলাদেশ, 9 অগস্ট: 80 বছর বয়সে পাম অ্যাভিনিউয়ে নিজের বাড়িতেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বুদ্ধবাবুর প্রয়াণে সমাজের সমস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শোকপ্রকাশ করেছেন ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রত্য়েকেই বর্ষীয়ান এই সিপিএম নেতার সততার কথা বলেছেন। তবে, তাঁর প্রয়াণে একগুচ্ছ অভিযোগ তুললেন তসলিমা নাসরিন। বললেন, তিনি বুদ্ধদেবের থেকে খাঁটি বামপন্থী ৷

সোশাল মিডিয়ায় তসলিমা লিখলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গিয়েছেন। খবরটি একজন দিল সকালে। শেষদিকে তাঁর কষ্টের মাত্রা খুব বেশি ছিল। 2003 সালের আগে এরকম খবর শুনলে আমি হয়তো চোখের জল ফেলতাম। কিন্তু তিনি আমার চোখের জল অনেক বছর ঝরিয়েছেন, তিনি বেঁচে থাকাকালীন। তাই চোখ থেকে আজ কোনও জল ঝরল না তাঁর জন্য। আসলে কোনও জল আর অবশিষ্ট নেই।"

পরে লিখেছেন, "2002 পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সখ্য ছিল। তারপর তাঁর কী হল কে জানে, 2003 সালে বলা নেই, কওয়া নেই আমার দ্বিখণ্ডিত বইটি তিনি নিষিদ্ধ করলেন। সেদিনই মনে হয়েছিল আমি তাঁর চেয়ে খাঁটি বামপন্থী। আমি নাস্তিক, আমি নারীবাদী, আমি ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের সমতা এবং সমানাধিকারে বিশ্বাস করি। একটি মৌলবাদী দেশে কিশোর বয়স থেকে আমার আদর্শের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছি। আমার দ্বিখণ্ডিত বইটিতে আমি রাষ্ট্রের কোনওরকম ধর্ম থাকার বিরুদ্ধে লিখেছিলাম।"

তিনি আরও লেখেন, "রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথক করার জন্য লিখেছিলাম বলে তিনি আমার বই নিষিদ্ধ করেছিলেন। ভাবা যায়, একজন বড় বামপন্থী নেতা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকা সমর্থন করতে চান। যুক্তি দেন, তা না-হলে মুসলমানরা রাগ করবে। হাইকোর্টে কলকাতার মানবাধিকার সংস্থা এপিডিআর দ্বিখণ্ডিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মামলা করল। জয়ী হল। দ্বিখণ্ডিত থেকে বুদ্ধবাবুর জারি করা নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল। তিনি আমার ওপর আগুন হয়ে রইলেন রেগে। আরে মামলা তো আমি করিনি, জয়ী তো আমি হইনি, সুজাতবাবুরা হয়েছে ৷"

লেখিকা লিখেছেন, "এরপর থেকেই আমাকে দেশ থেকে, সম্ভব না-হলে কলকাতা থেকে তাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠলেন। 2007 সালে আমাকে সাড়ে চারমাস গৃহবন্দি রেখেছিলেন, যেন অতিষ্ট হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু কোথাও যাইনি আমি। শেষ পর্যন্ত একটা কুৎসিত নাটক করে তাড়িয়েছিলেন। তারপর কী হল? আপদ তো বিদায় হলাম। তিনি নিশ্চয়ই খুব আনন্দে ছিলেন তখন। আর অসহায় নিরীহ নির্বাসিত, নির্যাতিত, সৎ ও আপসহীন মানুষটির জীবন কতটুকু দুর্বিষহ হয়েছিল, সে কথা আজ আর নাই বললাম।"

তাঁর আরও সংযোজন, "শুনেছি পরে একটি বই লিখেছেন তিনি। কী কী ভুল হয়েছিল তাঁর শাসন আমলে, কী কী ভুল তিনি করেছিলেন, সবই লিখেছেন। শুধু আমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিনা দোষে যে তাড়িয়েছিলেন, সেই কথাটা উল্লেখ করেননি। এর মানে এনিয়ে তাঁর কোনও অনুশোচনা ছিল না, তিনি মনে করতেন তিনি যা করেছিলেন ভালো করেছিলেন। আমার স্বপ্ন সাধ সব চুরমার করে দিয়ে তিনি ভালো করেছিলেন। একজন বাংলা-অন্তপ্রাণের কাছ থেকে বাংলাকে ছিনিয়ে নিয়ে তিনি ভালো করেছিলেন।"

তসলিমার কথা, "আমি ইউরোপ থেকে বাংলা ভাষার টানে, প্রাণের টানে, কলকাতায় বাস করতে গিয়েছিলাম, যেহেতু বাংলাদেশের কোনও সরকারই আমাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়নি। কিন্তু আমি কল্পনাও করতে পারিনি নন্দনে যে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে আড্ডা দিতাম, প্যারিস থেকে তাঁর জন্য তিনি যা চাইতেন উপহার এনে দিলাম, সেই মানুষটি একসময় আমার বাংলা মা'কে, বাংলায় আমার শেষ আশ্রয়টিকে চিরকালের মতো টেনে নিয়ে যাবেন আমার পায়ের তলা থেকে। মমতা দিদি আমার ব্যাপারে বুদ্ধবাবুরই পদাংক অনুসরণ করে চলেন, সুতরাং তিনিও আমাকে একই অচ্ছুৎ হিসেবে ট্রিট করবেন, এতে অবাক হই না।"

শেষে তিনি লিখেছেন, "আজ বুদ্ধবাবুর প্রয়াণে পুরনো কথা স্মরণ এল। আমি আত্মায় বিশ্বাস করি না, পরলোকে বিশ্বাস করি না। তাই আজ অন্য সবার মতো বলতে পারলাম না রেস্ট-ইন-পিস, অথবা যেখানে থাকুন ভালো থাকুন ইত্যাদি। তবে তাঁর জীবনে তিনি ভালো যেসব কাজ করেছেন, তার জন্য বলব, কমরেড, লাল সেলাম!

বাংলাদেশ, 9 অগস্ট: 80 বছর বয়সে পাম অ্যাভিনিউয়ে নিজের বাড়িতেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বুদ্ধবাবুর প্রয়াণে সমাজের সমস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শোকপ্রকাশ করেছেন ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রত্য়েকেই বর্ষীয়ান এই সিপিএম নেতার সততার কথা বলেছেন। তবে, তাঁর প্রয়াণে একগুচ্ছ অভিযোগ তুললেন তসলিমা নাসরিন। বললেন, তিনি বুদ্ধদেবের থেকে খাঁটি বামপন্থী ৷

সোশাল মিডিয়ায় তসলিমা লিখলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গিয়েছেন। খবরটি একজন দিল সকালে। শেষদিকে তাঁর কষ্টের মাত্রা খুব বেশি ছিল। 2003 সালের আগে এরকম খবর শুনলে আমি হয়তো চোখের জল ফেলতাম। কিন্তু তিনি আমার চোখের জল অনেক বছর ঝরিয়েছেন, তিনি বেঁচে থাকাকালীন। তাই চোখ থেকে আজ কোনও জল ঝরল না তাঁর জন্য। আসলে কোনও জল আর অবশিষ্ট নেই।"

পরে লিখেছেন, "2002 পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সখ্য ছিল। তারপর তাঁর কী হল কে জানে, 2003 সালে বলা নেই, কওয়া নেই আমার দ্বিখণ্ডিত বইটি তিনি নিষিদ্ধ করলেন। সেদিনই মনে হয়েছিল আমি তাঁর চেয়ে খাঁটি বামপন্থী। আমি নাস্তিক, আমি নারীবাদী, আমি ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের সমতা এবং সমানাধিকারে বিশ্বাস করি। একটি মৌলবাদী দেশে কিশোর বয়স থেকে আমার আদর্শের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছি। আমার দ্বিখণ্ডিত বইটিতে আমি রাষ্ট্রের কোনওরকম ধর্ম থাকার বিরুদ্ধে লিখেছিলাম।"

তিনি আরও লেখেন, "রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথক করার জন্য লিখেছিলাম বলে তিনি আমার বই নিষিদ্ধ করেছিলেন। ভাবা যায়, একজন বড় বামপন্থী নেতা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকা সমর্থন করতে চান। যুক্তি দেন, তা না-হলে মুসলমানরা রাগ করবে। হাইকোর্টে কলকাতার মানবাধিকার সংস্থা এপিডিআর দ্বিখণ্ডিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মামলা করল। জয়ী হল। দ্বিখণ্ডিত থেকে বুদ্ধবাবুর জারি করা নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল। তিনি আমার ওপর আগুন হয়ে রইলেন রেগে। আরে মামলা তো আমি করিনি, জয়ী তো আমি হইনি, সুজাতবাবুরা হয়েছে ৷"

লেখিকা লিখেছেন, "এরপর থেকেই আমাকে দেশ থেকে, সম্ভব না-হলে কলকাতা থেকে তাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠলেন। 2007 সালে আমাকে সাড়ে চারমাস গৃহবন্দি রেখেছিলেন, যেন অতিষ্ট হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু কোথাও যাইনি আমি। শেষ পর্যন্ত একটা কুৎসিত নাটক করে তাড়িয়েছিলেন। তারপর কী হল? আপদ তো বিদায় হলাম। তিনি নিশ্চয়ই খুব আনন্দে ছিলেন তখন। আর অসহায় নিরীহ নির্বাসিত, নির্যাতিত, সৎ ও আপসহীন মানুষটির জীবন কতটুকু দুর্বিষহ হয়েছিল, সে কথা আজ আর নাই বললাম।"

তাঁর আরও সংযোজন, "শুনেছি পরে একটি বই লিখেছেন তিনি। কী কী ভুল হয়েছিল তাঁর শাসন আমলে, কী কী ভুল তিনি করেছিলেন, সবই লিখেছেন। শুধু আমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিনা দোষে যে তাড়িয়েছিলেন, সেই কথাটা উল্লেখ করেননি। এর মানে এনিয়ে তাঁর কোনও অনুশোচনা ছিল না, তিনি মনে করতেন তিনি যা করেছিলেন ভালো করেছিলেন। আমার স্বপ্ন সাধ সব চুরমার করে দিয়ে তিনি ভালো করেছিলেন। একজন বাংলা-অন্তপ্রাণের কাছ থেকে বাংলাকে ছিনিয়ে নিয়ে তিনি ভালো করেছিলেন।"

তসলিমার কথা, "আমি ইউরোপ থেকে বাংলা ভাষার টানে, প্রাণের টানে, কলকাতায় বাস করতে গিয়েছিলাম, যেহেতু বাংলাদেশের কোনও সরকারই আমাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়নি। কিন্তু আমি কল্পনাও করতে পারিনি নন্দনে যে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে আড্ডা দিতাম, প্যারিস থেকে তাঁর জন্য তিনি যা চাইতেন উপহার এনে দিলাম, সেই মানুষটি একসময় আমার বাংলা মা'কে, বাংলায় আমার শেষ আশ্রয়টিকে চিরকালের মতো টেনে নিয়ে যাবেন আমার পায়ের তলা থেকে। মমতা দিদি আমার ব্যাপারে বুদ্ধবাবুরই পদাংক অনুসরণ করে চলেন, সুতরাং তিনিও আমাকে একই অচ্ছুৎ হিসেবে ট্রিট করবেন, এতে অবাক হই না।"

শেষে তিনি লিখেছেন, "আজ বুদ্ধবাবুর প্রয়াণে পুরনো কথা স্মরণ এল। আমি আত্মায় বিশ্বাস করি না, পরলোকে বিশ্বাস করি না। তাই আজ অন্য সবার মতো বলতে পারলাম না রেস্ট-ইন-পিস, অথবা যেখানে থাকুন ভালো থাকুন ইত্যাদি। তবে তাঁর জীবনে তিনি ভালো যেসব কাজ করেছেন, তার জন্য বলব, কমরেড, লাল সেলাম!

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.