কলকাতা, 23 নভেম্বর: কুণাল ঘোষের ভবিষ্য়দ্বাণী ছিল, ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল একশো শতাংশ তৃণমূলের পক্ষে যাবে ৷ সেই মতো 6-0 ফলাফলই হয়েছে তৃণমূলের পক্ষে ৷ তবে, এই ফলাফলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপির রাজ্য সভাপতি ৷ সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, 2026-এর নির্বাচনের পর বিজেপিই ক্ষমতায় আসছে ৷ যার পাল্টা জবাবে তৃণমূলের কুণালের কটাক্ষ, বিজেপি 3026 সালেও রাজ্যে পদ্ম ফোটাতে পারবে না ৷
শনিবার বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফলে মাদারিহাট, সিতাই, তালডাংরা, মেদিনীপুর, নৈহাটি ও হাড়োয়া কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা ৷ যেখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মাদারিহাট বিধানসভা ৷ 2011 সালে ক্ষমতার আসার পর প্রথমবার এই আসনটি শাসকদলের হাতে এসেছে ৷ তাও আবার, 2016 ও 2021 নির্বাচনে জেতা বিজেপির কেন্দ্র ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল ৷ তবে, এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷
এ দিন সুকান্ত বলেন, "উপনির্বাচনে ফলাফল এমনই হয় ৷ কালিয়াগঞ্জ উপনির্বাচন যদি দেখেন, 2019-এ লোকসভায় জেতার পর, উপনির্বাচনে ওখানে হেরে গিয়েছিলাম আমরা ৷ অথচ সেই কালিয়াগঞ্জে 2021-এর নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতেছি ৷ 2024-এর লোকসভা নির্বাচনেও জিতেছি, 2026-এ বিধানসভা নির্বাচনেও জিতে, আমরা সরকার গড়ব ৷"
সুকান্তর এই বক্তব্যের জবাবে কুণাল ঘোষ বলেন, "সুকান্ত মজুমদার 2026-এর কথা বলছেন ৷ উনি জেনে রাখুন, বাংলায় 3026 সালেও বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না ৷ যুগের পর যুগ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তৃণমূল বাংলায় ক্ষমতায় থেকে সেবা করে যাবে ৷ আগামী এক হাজার বছরে অন্তত বিজেপিকে এরাজ্যে মানুষ ক্ষমতায় আনবে না ৷"
নিজের দাবির ব্যাখ্যায় কুণাল ঘোষ বলেন, "এর কারণ হল, বিজেপির প্রতিনিয়ত বাংলাকে অবহেলা করা ৷ তা সে একশোদিনের কাজের টাকা হোক বা আবাস যোজনা ৷ বাংলার উন্নয়নের জন্য প্রাপ্য থেকে সবসময় বঞ্চিত হয়েছে কেন্দ্রের বিজেপির সরকারের থেকে ৷ আর সেই সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কুৎসা করেছে ৷ যার জবাব ভোটবাক্সে পেয়েছে বিজেপি ৷"
যদিও, তৃণমূলের এই জয়কে স্বচ্ছ ভোট না-হওয়ার ফল হিসেবে দাবি করেছেন দিলীপ ঘোষ ৷ তাঁর কথায়, "এই রাজ্যে এভাবেই ভোট হয় ৷ তৃণমূলের সরকার আসার পর থেকে এক তরফা উপনির্বাচন হয় ৷ 70, 80 থেকে 90 শতাংশ ভোট শাসকদল পায় ৷ সরকার, পুলিশ, প্রশাসন ও গুন্ডাদের নিয়ে ভয় দেখিয়ে ভোট হয় ৷ মানুষ ভোট দিতে পারে না ৷ এবারেও সেটাই হয়েছে ৷"
উপনির্বাচনের ফলাফলকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও ৷ এই নির্বাচনে তাঁদের প্রায় সকল প্রার্থীর জমানতই বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৷ তবুও সুজনের বক্তব্য, ‘‘উপনির্বাচনের ফলাফল সবসময়ই শাসকদলের পক্ষে যায় ৷ এটাই স্বাভাবিক ৷ পশ্চিমবঙ্গে এর আগে 80-85 শতাংশ ভোট পাওয়ার নজির আছে ৷ বিজেপির ভোট কমেছে ৷ আর আমরা এর থেকে ভালো ফল আশা করেছিলাম ৷ দাপট কার থাকবে, সেই নিয়ে রোজ লড়াই চলবে ৷’’
আজকের ফলপ্রকাশের পর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবারও নিশানা করেছেন কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ৷ তিনি বলেন, "মমতা দেখানোর চেষ্টা করবে ছ’টা আসনে জিতেছি মানেই, আরজি করে যা হয়েছে সব সঠিক ৷ ফল দেখে আরজি করের ঘটনা মমতা অস্বীকার করতে পারেন ৷ কিন্তু, মানুষ প্রতিবাদ জানাবে ৷ এই ফল দেখে বিচার করবেন না ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী ফল ভুগতে হবে ৷"