দার্জিলিং, 21 ফেব্রুয়ারি: বন্ধ থাকা 16টি চা বাগান ও দু’টি বন্ধ শিল্পতালুকের শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার উদ্যোগ রাজ্য সরকারের ৷ চা বাগান ও শিল্পতালুকের প্রায় 14 হাজার শ্রমিককে 'ফাওলাই' প্রকল্পের আওতায় ওই আর্থিক সহযোগিতা করবে প্রশাসন ৷ 'ফাওলাই' অর্থাৎ, ফিনান্সিয়াল অ্যাসিসট্যান্স ফর দ্য ওয়ার্কার্স লকড আউট ইন্ডাস্ট্রিস ৷ পাহাড় ও তরাই-ডুয়ার্সে গতবছর থেকে বন্ধ ওই চা বাগানগুলির শ্রমিকদের মাথাপিছু 1500 টাকা করে প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে ৷ মার্চ মাস থেকেই ওই সাহায্য পাবেন শ্রমিকরা ৷
উত্তরবঙ্গের বহু চা বাগান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ৷ সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে 16 হয়েছে ৷ সেই সব বাগানে রাজ্যের 'অন্তোদ্যয় অন্ন যোজনা'র অধীনে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কাজ করছে রাজ্য সরকার ৷ কিন্তু, পারিশ্রমিক না দেওয়ার কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছিল শ্রমিকদের ৷ বন্ধ চা বাগান ও ইন্ড্রাস্ট্রির শ্রমিকদের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী একটি কমিটি তৈরি করেছিলেন কয়েকজন মন্ত্রীকে নিয়ে ৷ স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম বা এসওপি তৈরির জন্য শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল ওই কমিটির ৷
তাতে মলয় ঘটক ছাড়াও রয়েছেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী শশী পাঁজা, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী বুলুচিক বরাইক ৷ চা বলয়ের প্রতিনিধি হিসেবে জিটিএ চিফ এগজিকিউটিভ অনিত থাপা এবং রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইককে রাখা হয় ৷ 13 ফেব্রুয়ারি বন্ধ চা বাগান নিয়ে কলকাতায় বৈঠক হয়েছিল ৷ ওই বৈঠকেই 2023 সাল থেকে বন্ধ 16টি চা বাগানকে আর্থিক সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ সোমবার সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার ৷
মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, "রাজ্যে নতুন করে বন্ধ 16টি চা বাগান ও দু’টি অন্য ইন্ডাস্ট্রির শ্রমিকদের ফাওলাই দেওয়া হবে ৷ আগে কোনও চা বাগান বন্ধ হলে, তার একবছর পর থেকে ফাওলাই চালু হত ৷ পরে তা কমিয়ে ছয় মাস করা হয়েছিল ৷ এখন কোনও চা বাগান এক মাস বন্ধ থাকলেই সেই বাগানের শ্রমিকরা ফাওলাইয়ের আওতায় চলে আসবে ৷" জিটিএ'র মুখপাত্র শক্তিপ্রসাদ শর্মা বলেন, "জিটিএ এলাকায় বহু বন্ধ চা বাগান রয়েছে ৷ গতবছর বেশ কয়েকটি চা বাগান বন্ধ হয় ৷ সেজন্য সেসব বাগানের শ্রমিকদের সাময়িকভাবে সাহায্যের জন্য ওই আর্থিক সহযোগিতা করা হবে ৷ তবে, আমাদের লক্ষ্য বন্ধ চা বাগান দ্রুত খোলার ৷ সেই লক্ষ্যে জিটিএ রাজ্য সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করছে ৷"
শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দার্জিলিংয়ের রুঙ্গমুক সিডার, মুন্ডাকোঠি, চুংটুং, নাগরি ও পেশোক চা বাগান বন্ধ রয়েছে ৷ তালিকায় রয়েছে কার্শিয়াংয়ের আম্বোটিয়া, শিলিগুড়ি মহকুমার ত্রিহানা, মালবাজারের বামনডাঙা তন্ডু, সোনালী, সামসিং, বীরপাড়ার রায়মাটাং, দলশীংপাড়া, দলমোড়, কালচিনি, ঢেকলাপাড়া, রামঝোরা চা বাগান ৷ এছাড়া সুরির মিকি মেটালস লিমিটেড ও উলুবেড়িয়ার মারটিনা সার্জিক্যাল প্রাইভেট লিমিটেডের শ্রমিকদের এই দেড় হাজার টাকা করে প্রতি মাসে সাহায্য করবে সরকার ৷
বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ফাওলাইয়ের অধীনে আসতে হলে শ্রমিককে অবশ্যই স্থায়ী শ্রমিক হতে হবে ৷ বন্ধ হওয়ার আগে অন্তত টানা এক বছর কোনও শ্রমিক কাজ করেছে, অবসরপ্রাপ্ত, ইস্তফা, ভলান্টিয়ার রিটায়ারমেন্ট নেওয়া শ্রমিকরা ওই প্রকল্পের আওতায় আসবেন না ৷ পাশাপাশি শ্রমিকের বয়স 60 বছরের উর্ধ্বে হলেও মিলবে না সরকারি সাহায্য ৷
আরও পড়ুন: