গঙ্গাসাগর, 4 অগস্ট: ক্রমশ এগিয়ে আসছে সমুদ্র ৷ যেকোনও সময় ভাঙনের কবলে পড়তে পারে গঙ্গাসাগরের কপিলমুনি মন্দির ৷ তাই এবার মন্দিরকে রক্ষা করতে তড়িঘড়ি নয়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য সরকার ৷ ভাঙন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এমনটাই জানালেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা ৷
তিনি বলেন, "গঙ্গাসাগরের কপিলমুনি মন্দিরের সামনে সমুদ্রের ভাঙন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে । বেশ কয়েকবার বাঁধের মাধ্যমে ভাঙন আটকানো চেষ্টা চালানো হয়েছে, কিন্তু কোন লাভ হয়নি ৷ কোটালের আর বড় বড় ঢেউয়ের দাপটে সব প্রচেষ্টাই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে । এবারও আইআইটি চেন্নাইয়ের শরণাপন্ন হয়েছি আমরা এবং সেচ দফতরের পক্ষ থেকে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করার পর ভাঙন রোধ করার জন্য একটি ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা হবে । ভাঙন প্রতিরোধের জন্য একাধিকবার উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করা হবে । পাশাপাশি খুব শীঘ্রই বাঁধ মেরামতি করার কাজ শুরু হবে ।"
রবিবার গঙ্গাসাগর মেলা চত্ত্বর ও কপিলমুনি ভাঙন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এখানে আসেন রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী তথা সাগরের বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা । এখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের সেচ দফতরের একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরাও । ভয়ানক ভাঙন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে গঙ্গাসাগরের কপিলমুনি মন্দিরের সামনে । একটু একটু করে ভাঙনের ফলে সমুদ্র ক্রমশ এগিয়ে এসেছে কপিলমুনি মন্দিরের কাছে ৷ বর্তমানে কপিলমুনি মন্দির থেকে সমুদ্রের দূরত্ব কমে প্রায় 100 থেকে 150 মিটার এসে দাঁড়িয়েছে । নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার ভরা কোটাল ও অমাবস্যার কোটালের জেরে কার্যত কপিলমুনি মন্দিরের সামনের নদী বাঁধ প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে ।
গত নিম্নচাপ আর পূর্ণিমার ভরা কোটালে সাগরমেলার 1 থেকে 5 নম্বর স্নানঘাট পর্যন্ত সমুদ্রতটে ভয়াবহ ভাঙন হয় । পূর্ত দফতরের একটি কংক্রিটের রাস্তা, বিদ্যুতের খুঁটি, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলের লাইন, অস্থায়ী দোকান, গাছ পর্যন্ত সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে । এই মুহূর্তে ভাঙন রুখতে না পারলে কিছুদিনের মধ্যে কপিলমুনির আশ্রমও তলিয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে । ভাঙন এলাকা থেকে মাটি ও বালি সংগ্রহ করা হয়েছে । জোয়ার ও ভাঁটার সময় কতটা জলস্ফীতি হচ্ছে তাও পরিমাপ করার কাজ চলছে । এই কারণে সেচ দফতরের পক্ষ থেকে উপগ্রহ-চিত্র সংগ্রহ করা হয়েছে ।
আগামী সাগরমেলার আগে কীভাবে এই ভাঙন রোধ করা যায়, সেই পরিকল্পনা করছে সেচ দফতর । এই দু'দিনের বিস্তারিত রিপোর্ট জমা করা হবে সেচ দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারির কাছে । তবে এলাকার ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক বাড়ছে আরও দুটি বড় কোটাল নিয়ে । দুটি কোটালে আরও বেশ কিছুটা এলাকা সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাঁদের ।
যদিও এই বিষয় এলাকাবাসী শেখ সামিরুল বলেন,"পূর্ণিমার কোটাল আর সমুদ্রের বড় বড় ঢেউয়ের কারণে একের পর এক নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছে ৷ এলাকা প্লাবিত হয়েছে ৷ বহু দোকান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে । সম্প্রতি কোটালের জেরে কার্যত এক নম্বর থেকে পাঁচ নম্বর স্নান ঘাট পর্যন্ত রাস্তা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গিয়েছে । প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি নদী ভাঙন রোধে করা ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে আগামিদিনে এই কপিলমুনি মন্দির নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে ।"
যদিও ভাঙন নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর ৷ এ বিষয়ে বিজেপি নেতা অরুনাভ দাস বলেন,"সংবাদমাধ্যমে বারবার খবরের ফলে অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন ৷ বাঁধ পরিদর্শন করতে গিয়েছে স্বয়ং মন্ত্রী । এর আগে বহু নাটক চলেছে ৷ কিন্তু সনাতন ধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তীর্থ ভূমি কপিলমুনি মন্দির ও গঙ্গাসাগরকে রক্ষা করার জন্য এবার যদি কোন স্থায়ী ব্যবস্থা রাজ্য সরকার না নেয়, তাহলে আগামিদিনে কপিলমুনি মন্দির সাগরের জলে নিমজ্জিত হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা ।"
আগামিদিনে গঙ্গাসাগর মেলা কীভাবে রাজ্য সরকার করবে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন । ইতিমধ্যেই গঙ্গাসাগরের এই ভয়াবহ নদী ভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে এলাকার বাসিন্দা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা । এলাকাবাসীদের মনে একটাই প্রশ্ন, কবে মিলবে স্থায়ী সমাধান ৷ গঙ্গাসাগরের ভয়াবহ নদী ভাঙন রোধ করতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য সরকার, সেদিকেই চাতক পাখির মতো তাকিয়ে রয়েছে দেশের লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীরা ।