দুর্গাপুর, 5 জুন: দুর্গাপুরের 43টি ওয়ার্ডের সকলে তাকিয়ে ছিল লোকসভা ভোটের ফলাফলের দিকে । কারণ 2017 সালে দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচন হওয়ার পরে তা হওয়ার কথা ছিল 2023 সালে । কিন্তু সেই নির্বাচন আজ দীর্ঘদিন পরেও হয়নি ৷ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রবল চাপ থাকা সত্ত্বেও রাজ্যের শাসক দল কিছুতেই দুর্গাপুর নগর নিগম-সহ রাজ্যের আরও বেশ কয়েকটি জেলার পৌর নিগমের নির্বাচনগুলি করায়নি । স্বাভাবিকভাবেই চাপ বাড়ছিল রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপরে ।
লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের আশানরূপ ফলের দিকেই হয়তো তাকিয়ে ছিল ঘাসফুল শিবির । 2023 সাল থেকে দুর্গাপুর নগরনিগম পরিচালিত হচ্ছে 5 জন প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্যদের দ্বারা । 43টি ওয়ার্ডের মধ্যে 2017 সালে 43-0 ফলাফল হয়েছিল । বিরোধী শূন্য দুর্গাপুর পৌর নিগামের একজন কাউন্সিলর চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় মাঝপথে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন । ইতিমধ্যে সেই নির্বাচনে জয়ী প্রাক্তন মেয়রপারিষদ সদস্য পবিত্র চট্টোপাধ্যায়, বিদায়ী চেয়ারম্যান মৃগেন্দ্রনাথ পাল, প্রাক্তন চিফ হুইপ পবিত্র মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন ৷ বর্তমানে চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের পৌরহিত্যে মোট 5 জন সদস্য পরিচালনা করছেন প্রশাসক মন্ডলীকে ।
লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের আশানুরূপ ফলের পর এবার কী তাহলে দুর্গাপুর পৌর নিগমের নির্বাচন আসন্ন ? বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের এই পৌর নিগমের 43টি ওয়ার্ডের ফলাফলের বিন্যাস যদি দেখা যায় তাহলে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কীর্তি আজাদ । দুর্গাপুর নগর নিগমের 2, 12 ও 14 নম্বর ওয়ার্ডে আশানরূপ ফল করেছে শাসক শিবির । সবচেয়ে বেশি ভোটে 12 নম্বর ওয়ার্ড থেকে লিড পেয়েছেন কীর্তি । এই ওয়ার্ড থেকে প্রায় দুই হাজার ভোটে লিড পান তিনি । তবে অধিকাংশ ওয়ার্ডেই পরাজিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের কাছে । তারপরও সূত্রের খবর, আগামী অগস্ট মাসে নোটিফিকেশন হতে চলেছে দুর্গাপুর নগর নিগম-সহ রাজ্যের বাকি পৌরনিগমগুলির নির্বাচনের জন্য ।
জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে এবারে বেশ কিছু নতুন মুখকে নিয়ে আসার কথা বারবার বলা হয়েছে । বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের যে ঘোষিত নীতি কলকাতা পৌরসভার নির্বাচনে পালন করা হয় সেই নিয়ম মেনেই 65 বছর বয়সের উর্ধ্ব কোনও প্রতিনিধিকে এই নির্বাচনে টিকিট দেওয়া হবে না বলে জানা গিয়েছে । এছাড়াও বেশ কিছু বিদায়ী কাউন্সিলরকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হবে না, সে খবরও পাওয়া গিয়েছে দলীয় সূত্রে ৷
সূত্রের দাবি, অগস্ট মাসের প্রথমদিকেই নির্বাচনের দিনক্ষণ স্থির হয়ে যাবে । পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, "আমরা প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলব । তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি যাদের অভিমান রয়েছে তাদেরকে আমরা ফিরিয়ে নিয়ে আসব । কোথায় ভুল ত্রুটি রয়েছে, সেগুলিরও সংশোধন করব । উন্নয়নের কাজ দুর্গাপুর নগর নিগমে ধারাবাহিকভাবে হয়েছে । তারপরেও কেন অনেকগুলি ওয়ার্ডে এই রকম ফলাফল তার বিশ্লেষণ আমরা করব ।"
সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, "দুর্গাপুর নগর নিগমের স্বচ্ছ নির্বাচন হলে আগামী দিনে তৃণমূল কংগ্রেসের এই বোর্ড থাকবে না । লোকসভার ফল যাই হোক না কেন তার কোন প্রভাব পড়বে না দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচনে ।" দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই বলেন, "দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে যে কটি ওয়ার্ড পড়ে তাতে আমরা প্রায় 12 হাজার ভোটে লিড পেয়েছি । অধিকাংশ ওয়ার্ডগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেস হেরে গিয়েছে । দুর্গাপুর পুরসভার নির্বাচন হলে এবার বিজেপির বোর্ড হবে । লোকসভা ভোটের কোনও প্রভাব পড়বে না ।"