ETV Bharat / state

সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়াই হাতির হানা থেকে বাঁচাচ্ছে আলিপুরদুয়ারের গ্রামকে - Solar Fencing

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 2, 2024, 8:28 PM IST

Solar Fencing: হাতির হানা রুখতে পানবাড়ি গ্রামের চার কিলোমিটার ব্যাসার্ধ জুড়ে পর্দার মতো করে সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত ফেনসিং দেওয়া হয়েছে । সব মিলিয়ে 30 কিলোমিটার ফেনসিং আছে । ফলও মিলেছে হাতেনাতে ৷ গত মার্চ মাসে কাজটা শেষ হয়েছে । তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত গ্রামে হাতি ঢোকেনি । তাই এবার চাষের জমি থেকে বেশি লাভের আশা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ৷

Solar Fencing
সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়াই হাতির হানা থেকে বাঁচাচ্ছে আলিপুরদুয়ারের গ্রামকে (ইটিভি ভারত)

আলিপুরদুয়ার, 2 অগস্ট: জঙ্গল থেকে প্রায় দিনই বেরিয়ে আসত হাতির দল । আর গৃহস্থের বাড়ি ঘর যেমন ভাঙচুর করত, তেমনই ফসল খেয়ে চলে যেত তারা । আলিপুরদুয়ার দুই নম্বর ব্লকের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পূর্ব রাজাভাতখাওয়া রেঞ্জে অবস্থিত গ্রামগুলির এটাই রোজনামচা । হাতির হানার আশঙ্কাতেই দিন শুরু হতো স্থানীয় বাসিন্দাদের ৷ দিন শেষ হতো হাতির হানার আশঙ্কা নিয়েই ৷

সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়াই হাতির হানা থেকে বাঁচাচ্ছে আলিপুরদুয়ারের গ্রামকে (ইটিভি ভারত)

সেই আশঙ্কার মেঘ কাটাতে পুরো এলাকাকে পথ দেখাচ্ছে পূর্ব রাজাভাতখাওয়া রেঞ্জেরই একটি গ্রাম ৷ যার নাম পানবাড়ি ৷ সেখানেই হাতির হানা রুখতে সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়া লাগানো হয়েছে ৷ সৌর বিদ্যুতের সেই ঝুলন্ত বেড়াই এখন হাতির হানা থেকে বাঁচাচ্ছে পুরো গ্রামকে ।

Solar Fencing
হাতির হানা রুখতে সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়া (নিজস্ব চিত্র)

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর অপূর্ব সেন বলেন, ‘‘বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা তাঁদের লভ্যাংশের টাকা দিয়ে এই সৌর বিদ্যুতের বেড়া লাগিয়েছেন । গত মার্চ মাসে পানবাড়ি ও 21 মেইল বস্তি গ্রামে এই কাজ শেষ হয় । তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত গ্রামে হাতি আসার কোনও খবর আমরা পাইনি । চার কিলোমিটার জুড়ে এই ঝুলন্ত বেড়া লাগানো হয়েছে । রাজ্য সরকার পুরস্কৃতও করেছে । বক্সায় ঢোকার গেট ফির টাকা দিয়ে এটা করা হয়েছে । এটা সাধারণ ইলেকট্রিক ফেনসিং নয়, এটা ঝুলন্ত । গত মার্চ মাসে কাজটা শেষ হয়েছে । তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত গ্রামে হাতি ঢোকেনি ।’’

রাজ্যে সম্ভবত প্রথম সৌর বিদ্যুতের বেড়া লাগিয়ে সাফল্য পেল বক্সা টাইগার রিজার্ভের পানবাড়ি গ্রাম । এর ফলস্বরূপ বন মহোৎসবের সময় তাঁদের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা পুরস্কারে স্বীকৃত হয় । রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে 75 হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে পানবাড়ি বন সুরক্ষা কমিটিকে ।

Solar Fencing
হাতির হানা রুখতে সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়া (নিজস্ব চিত্র)

বন সুরক্ষা কমিটির সভাপতি সুজিত সরকার বলেন, ‘‘বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের শীর্ষ বন কর্মকর্তাদের কাছে এই ধরনের একটি সুরক্ষা বেড়া তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং অনুমোদনও মেলে । বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা কোনও ঠিকাদারের সহায়তা ছাড়াই তিন মাস আগে প্রকল্পটি শেষ করেন । আমরা গত ছয় বছরে বন সুরক্ষা কমিটির প্রাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করেছি, প্রায় 12 লক্ষ টাকা জমা হয়েছে । এই তহবিল ব্যবহার করে আমরা পানবাড়ি ধামসি বাঁধ থেকে লোয়ারডাঙ্গি পর্যন্ত একটি বেড়া নির্মাণ করেছি ।’’

Solar Fencing
হাতির হানা রুখতে সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়া তৈরির কাজ চলছে (নিজস্ব চিত্র)

তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রায় তিন মাস লেগেছে । বেড়া তৈরির পর গত তিন মাসে গ্রামে একটিও বন্য প্রাণীর আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি । এই সাফল্যে আমরা রোমাঞ্চিত । গত তিন মাস ধরে, আমরা হাতিদের বেড়ার কাছে আসতে দেখেছি ও তারপর বনে ফিরেও যেতে দেখেছি । হাতি খুব বুদ্ধিমান আগে সাধারণ ফেনসিংয়ের গাছের ডাল ফেলে ফেসনিং ছিঁড়ে ফেলত । এবার সেটা আর করতে পারছে না ।’’

Solar Fencing
হাতির হানা রুখতে সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়া তৈরির কাজ চলছে (নিজস্ব চিত্র)

রাজাভাতখাওয়ার বর্তমান রেঞ্জ অফিসার নুর ইসলাম বলেন, “আমি পানবাড়ির সাফল্যে আনন্দিত । ওই এলাকায় আমার আমলে কাজ শুরু হয় । আশা করি, মানব-হাতি সংঘর্ষ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে ।” নিজেদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তৈরি করা ফসল ও গ্রামবাসীদের প্রাণ বাঁচাতে অভিনব উপায় কাজে লাগিয়ে এই সাফল্যের পর স্বস্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারাও ৷ স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল সরকার, অনিতা সরকার বলেন, ‘‘এই সৌর বিদ্যুতের বেড়া দেওয়ার পর থেকে গ্রামে হাতির হানা হচ্ছে না । আমরা এবার ফসলও ভালো করেছি । এবার লাভের মুখ দেখতে পাব ।’’

ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলোতে নিয়মিত হাতির হানা যেন সেখানকার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের সমস্যা । দিন কিংবা রাত্রি, সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করে ওই সমস্ত গ্রামবাসীদের মনে । একই পদ্ধতি অবলম্বন করে অন্য গ্রামগুলিও সুরক্ষিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷

আলিপুরদুয়ার, 2 অগস্ট: জঙ্গল থেকে প্রায় দিনই বেরিয়ে আসত হাতির দল । আর গৃহস্থের বাড়ি ঘর যেমন ভাঙচুর করত, তেমনই ফসল খেয়ে চলে যেত তারা । আলিপুরদুয়ার দুই নম্বর ব্লকের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পূর্ব রাজাভাতখাওয়া রেঞ্জে অবস্থিত গ্রামগুলির এটাই রোজনামচা । হাতির হানার আশঙ্কাতেই দিন শুরু হতো স্থানীয় বাসিন্দাদের ৷ দিন শেষ হতো হাতির হানার আশঙ্কা নিয়েই ৷

সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়াই হাতির হানা থেকে বাঁচাচ্ছে আলিপুরদুয়ারের গ্রামকে (ইটিভি ভারত)

সেই আশঙ্কার মেঘ কাটাতে পুরো এলাকাকে পথ দেখাচ্ছে পূর্ব রাজাভাতখাওয়া রেঞ্জেরই একটি গ্রাম ৷ যার নাম পানবাড়ি ৷ সেখানেই হাতির হানা রুখতে সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়া লাগানো হয়েছে ৷ সৌর বিদ্যুতের সেই ঝুলন্ত বেড়াই এখন হাতির হানা থেকে বাঁচাচ্ছে পুরো গ্রামকে ।

Solar Fencing
হাতির হানা রুখতে সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়া (নিজস্ব চিত্র)

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর অপূর্ব সেন বলেন, ‘‘বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা তাঁদের লভ্যাংশের টাকা দিয়ে এই সৌর বিদ্যুতের বেড়া লাগিয়েছেন । গত মার্চ মাসে পানবাড়ি ও 21 মেইল বস্তি গ্রামে এই কাজ শেষ হয় । তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত গ্রামে হাতি আসার কোনও খবর আমরা পাইনি । চার কিলোমিটার জুড়ে এই ঝুলন্ত বেড়া লাগানো হয়েছে । রাজ্য সরকার পুরস্কৃতও করেছে । বক্সায় ঢোকার গেট ফির টাকা দিয়ে এটা করা হয়েছে । এটা সাধারণ ইলেকট্রিক ফেনসিং নয়, এটা ঝুলন্ত । গত মার্চ মাসে কাজটা শেষ হয়েছে । তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত গ্রামে হাতি ঢোকেনি ।’’

রাজ্যে সম্ভবত প্রথম সৌর বিদ্যুতের বেড়া লাগিয়ে সাফল্য পেল বক্সা টাইগার রিজার্ভের পানবাড়ি গ্রাম । এর ফলস্বরূপ বন মহোৎসবের সময় তাঁদের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা পুরস্কারে স্বীকৃত হয় । রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে 75 হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে পানবাড়ি বন সুরক্ষা কমিটিকে ।

Solar Fencing
হাতির হানা রুখতে সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়া (নিজস্ব চিত্র)

বন সুরক্ষা কমিটির সভাপতি সুজিত সরকার বলেন, ‘‘বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের শীর্ষ বন কর্মকর্তাদের কাছে এই ধরনের একটি সুরক্ষা বেড়া তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং অনুমোদনও মেলে । বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা কোনও ঠিকাদারের সহায়তা ছাড়াই তিন মাস আগে প্রকল্পটি শেষ করেন । আমরা গত ছয় বছরে বন সুরক্ষা কমিটির প্রাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করেছি, প্রায় 12 লক্ষ টাকা জমা হয়েছে । এই তহবিল ব্যবহার করে আমরা পানবাড়ি ধামসি বাঁধ থেকে লোয়ারডাঙ্গি পর্যন্ত একটি বেড়া নির্মাণ করেছি ।’’

Solar Fencing
হাতির হানা রুখতে সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়া তৈরির কাজ চলছে (নিজস্ব চিত্র)

তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রায় তিন মাস লেগেছে । বেড়া তৈরির পর গত তিন মাসে গ্রামে একটিও বন্য প্রাণীর আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি । এই সাফল্যে আমরা রোমাঞ্চিত । গত তিন মাস ধরে, আমরা হাতিদের বেড়ার কাছে আসতে দেখেছি ও তারপর বনে ফিরেও যেতে দেখেছি । হাতি খুব বুদ্ধিমান আগে সাধারণ ফেনসিংয়ের গাছের ডাল ফেলে ফেসনিং ছিঁড়ে ফেলত । এবার সেটা আর করতে পারছে না ।’’

Solar Fencing
হাতির হানা রুখতে সৌর বিদ্যুতের ঝুলন্ত বেড়া তৈরির কাজ চলছে (নিজস্ব চিত্র)

রাজাভাতখাওয়ার বর্তমান রেঞ্জ অফিসার নুর ইসলাম বলেন, “আমি পানবাড়ির সাফল্যে আনন্দিত । ওই এলাকায় আমার আমলে কাজ শুরু হয় । আশা করি, মানব-হাতি সংঘর্ষ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে ।” নিজেদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তৈরি করা ফসল ও গ্রামবাসীদের প্রাণ বাঁচাতে অভিনব উপায় কাজে লাগিয়ে এই সাফল্যের পর স্বস্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারাও ৷ স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল সরকার, অনিতা সরকার বলেন, ‘‘এই সৌর বিদ্যুতের বেড়া দেওয়ার পর থেকে গ্রামে হাতির হানা হচ্ছে না । আমরা এবার ফসলও ভালো করেছি । এবার লাভের মুখ দেখতে পাব ।’’

ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলোতে নিয়মিত হাতির হানা যেন সেখানকার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের সমস্যা । দিন কিংবা রাত্রি, সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করে ওই সমস্ত গ্রামবাসীদের মনে । একই পদ্ধতি অবলম্বন করে অন্য গ্রামগুলিও সুরক্ষিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.