কৃষ্ণগঞ্জ, 10 সেপ্টেম্বর: শিক্ষিত অসুর নিধনে মা দুর্গার হাতে তুলে দিয়েছেন পেনের ত্রিশূল ৷ যেহেতু সব দুর্ঘটনার পিছনে শিক্ষিত লোকেদের হাত রয়েছে তাই প্রতিবাদস্বরূপ বেছে নিয়েছেন পেন ও পেনসিল ৷ তা দিয়েই গড়েছেন মাতৃমূর্তি ৷ শিক্ষিত অসুর বধ হয়েছে কলমের দ্বারাই ৷ এভাবে ফেলে দেওয়া কালি ফুরানো হাজার হাজার পেন ও পেনসিল দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে তাক লাগিয়েছেন নদিয়ার গৃহবধূ ৷
প্রায় 9 মাসের প্রচেষ্টায় এখন পুরোপুরি সম্পূর্ণ দুর্গাপ্রতিমা । নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত কৃষ্ণগঞ্জ বাজার সংলগ্ন সত্যনগরপাড়ার গৃহবধূ পাপিয়া কর । তিনি একজন পেশায় হস্তশিল্পী ৷ যদিও সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে তাঁর অনেক ৷ সমাজের পিছিয়ে পড়া পরিবারের 30-40টি শিশুর দেখাশোনার পাশাপাশি সময় বের করে তাদের পড়াশোনা শেখান । এছাড়াও অন্নপূর্ণা নামে একটি হোটেলও রয়েছে তাঁর ৷ যেখান থেকে প্রতিদিন বিনামূল্যে দুঃস্থ বাচ্চারা খেতে পায় ৷ এই নিয়েই বর্তমানে দিন কাটে পাপিয়ার ।
প্রায় এক বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় নদিয়ার যুবক স্বপ্নদ্বীপের ৷ একটা তরতাজা প্রাণ চলে যাওয়ার কারণে তার মনে উঠে এসেছিল প্রতিবাদের ভাবনা ৷ ভেবেছিলেন এমন কিছু করে দেখাবেন যেখানে দুর্গামূর্তির মধ্যে দিয়ে প্রতিবাদ তুলে ধরতে পারেন । এরপর থেকেই সংগ্রহ করতে থাকেন কালি ফুরিয়ে যাওয়া পেন ও পেনসিল ৷ তারপর থেকেই শুরু করেন দুর্গাপ্রতিমা তৈরির কাজ । প্রায় 30 হাজার পেন ও পেনসিল দিয়ে তৈরি করে ফেলেন সপরিবার দুর্গাপ্রতিমা ৷ নাম দিয়েছেন কলমকারী দুর্গা ।
এই প্রসঙ্গে গৃহবধূ ও কারিগর পাপিয়া জানান, স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যুতে তিনি খুবই ভেঙে পড়েছিলেন ৷ ভেবেছিলেন হয়তো সবাই প্রতিবাদে নামবে ৷ তারপর ফের আরজি করের ডাক্তারি পড়ুয়ার সঙ্গে নৃশংস ঘটনা । তাই শিক্ষিত অসুরদের বিনাশ করতে তিনি প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে দুর্গাপ্রতিমার নাম দিয়েছেন কলমকারী দুর্গা । শিক্ষিত অসুরদের বধ করতে হবে শিক্ষা ও বুদ্ধি দিয়েই ৷ তাই প্রতিমা তৈরিতে এই পেনকেই বেছে নিয়েছেন তিনি ৷
তাঁর তৈরি দুর্গাপ্রতিমা পাড়ি দেবে নদিয়ার রানাঘাট পাইকপাড়া ব্রতী সংঘের পুজো মন্ডপে ৷ ওই মন্ডপের থিম তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে ৷ এখন শুধু পুজো আসার অপেক্ষা । আর এদিকে প্রতিমাও তৈরি ৷ একটা সময় তার কাজের প্রতিভার মধ্যে দিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন দিদি নম্বর ওয়ান এবং দাদাগিরি, রান্নাঘরের মতো বিখ্যাত রিয়ালিটি শো-তে । তাঁর পরিচিতি এখন গোটা বাংলাজুড়ে ৷