কলকাতা, 29 সেপ্টেম্বর: 2012 সাল থেকে রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বন্ধ রয়েছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন । দীর্ঘ 12 বছর ধরে বন্ধ রাখা ছাত্র সংসদ নির্বাচন অবিলম্বে শুরু করার দাবি তুলল ভারতের ছাত্র ফেডারেশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি । ছাত্রছাত্রীদের দাবি আদায়, শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা, দুর্নীতি ও দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হওয়া থেকে ক্যাম্পাসকে মুক্ত করার স্বার্থে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার দাবি নয়, বরং চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন ।
আরজি কর-কাণ্ডের আবহে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর দুর্নীতির সঙ্গেই সামনে এসেছে থ্রেট কালচারের অভিযোগ । সেই আবহে এখন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে শাসকদলের বিরুদ্ধে উঠছে অভিযোগ । আর দীর্ঘ 13 বছরেরও বেশি সময় এই থ্রেট কালচারই দস্তুর রাজ্যের সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে । টাকার বিনিময়ে ভর্তির অভিযোগ অহরহ উঠেছে টিএমসিপি'র বিরুদ্ধে । এই আবহে থ্রেট কালচারের অবসান ঘটিয়ে সন্ত্রাস মুক্ত ক্যাম্পাস, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার উন্নত পরিকাঠামোর দাবিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চেয়ে এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রণয় কাৰ্য্যী ও সম্পাদক দেবাঞ্জন দে একটি প্রেস বিবৃতি দেন ৷
তাঁরা দাবি করেন, "সারা রাজ্যজুড়ে 2011 সালের পর থেকেই শাসকদলের প্রত্যক্ষ মদতে প্রতিটা ক্যাম্পাসে থ্রেট কালচার, দুর্নীতির সিন্ডিকেটের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ । বিরুদ্ধমত পোষণ করায় কখনও ক্যাম্পাসের মধ্যে আক্রমণ, র্যাগিং-এর শিকার হতে হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের ৷ আবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় আক্রমণ নেমেছে অধ্যাপক সমাজের উপরেও । ক্যাম্পাসে ধর্ষণের হুমকি, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন বাংলার ছাত্রীরা । ক্যাম্পাসের বাইরে রাজ্যের শাসকদল যেভাবে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে লুঠের সম্পত্তি বৃদ্ধি করেছে, একইভাবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ক্যাম্পাসের ভিতরে ছাত্রছাত্রীদের ভয় দেখিয়ে লুম্পেনরাজ তৈরি করে ইউনিয়নের টাকায় পকেট ভরিয়েছে ।"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, "তিলোত্তমা'র ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে থ্রেট সিন্ডিকেট, দুর্নীতির সিন্ডিকেটের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে । বিরূপাক্ষ বিশ্বাস থেকে শুরু করে অভীক দে, যাঁদের নামই উঠে এসেছে থ্রেট সিন্ডিকেটের মাথা হিসেবে, তাঁরা প্রত্যেকেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য এবং নেতৃত্ব । দীর্ঘদিন ধরে এঁদেরই নেতৃত্বে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের উপর অত্যাচার চলেছে । স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় আরও মদতপুষ্ট হয়েছে এই থ্রেট সিন্ডিকেট । আসলে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে এই ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে এঁরা ছাত্রছাত্রীদের কথা বলার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন । ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাস তাঁদের কাছে নিজেকে বিকশিত করার জায়গা এবং এটাই এঁরা চান না, কারণ ছাত্রছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হলে এঁদের লুটে খাওয়ার ব্যবসায় তালা ঝুলে যাবে ।"
প্রণয় কাৰ্য্যী ও দেবাঞ্জন দে'র কথায়, "ভারতের ছাত্র ফেডারেশন সবসময় ক্যাম্পাসের ভিতরে এবং বাইরে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার দাবিতে লড়াই করেছে । ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা, ক্যাম্পাস শৃঙ্খলা, ক্যাম্পাস গণতন্ত্র, স্বাভাবিক পঠনপাঠনের পরিবেশের দাবিতে আন্দোলন করে চলেছে । আসলে ক্যাম্পাসগুলোতে এই অরাজকতা সৃষ্টির কারণ দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন সরকারি মদতে স্থগিত রাখা । গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে শাসকদল থ্রেট কালচারকে অক্সিজেন জুগিয়ে চলেছে বছরের পর বছর । সমস্ত রকমের দুর্নীতির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান করছি আমরা এবং ক্যাম্পাসে এই নৈরাজ্যের অবসান ঘটাতে সরকারের প্রতি অবিলম্বে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন সংগঠিত করার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি ।"