মালদা, 19 অক্টোবর: পশ্চিমবঙ্গের সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একগুচ্ছ নির্দেশিকার প্রভাব পড়েছে মালদা মেডিক্যালে ৷ মেডিক্যাল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিভিক কর্মীদের ৷ তার বদলে খাকি উর্দিধারী পুলিশকর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে ৷ কিন্তু এতে মেডিক্যালের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে ৷
আবার অনেকের অনুমান, সিভিকের পরিবর্তে খাকি উর্দিধারীদের উপস্থিতিতে নিরাপত্তা বাড়বে মেডিক্যালে ৷ যদিও এ নিয়ে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ প্রতিক্রিয়া দেননি কোনও পুলিশকর্তাও ৷
গত আরজি কর মামলার শুনানিতে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে ৷ নির্দেশিকা জারি হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়েও ৷ তারপরেই মালদা মেডিক্যাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সমস্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের ৷ তার পরিবর্তে তিন শিফটের প্রতিটিতে একজন করে রাজ্য পুলিশের এএসআই এবং সাতজন কনস্টেবল মেডিক্যালের পুলিশ ক্যাম্পে নিয়োগ করা হয়েছে ৷ তাঁরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন ৷ নিরাপত্তায় নজর রাখার পাশাপাশি তাঁরা হাসপাতালে আসা রোগীদের সাহায্যও করছেন ৷
কিন্তু প্রশ্ন অন্য জায়গায় ৷ পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এতদিন মালদা মেডিক্যালে প্রতিদিন প্রায় 30 জন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হত ৷ সেখানে এখন নিরাপত্তার দায়িত্ব সামাল দিচ্ছেন মাত্র আটজন পুলিশকর্মী ৷ এত কম পুলিশকর্মী এত বড় ক্যাম্পাসে কি সঠিক নিরাপত্তা দিতে পারবেন?
শনিবার হাসপাতালে উপস্থিত এক রোগীর আত্মীয় শুভ সাহা বলেন, "আদালতের নির্দেশে এখানে আরও বেশি সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে ৷ সঙ্গে থাকছে খাকি উর্দিধারী পুলিশ ৷ এতে মেডিক্যালের নিরাপত্তা বাড়বে বলেই আমার মনে হয় ৷ কারণ, এর আগে বেশি সংখ্যক সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকলেও মাঝেমধ্যে চুরি-ছিনতাই কিংবা হাসপাতালে রোগীর আত্মীয় পরিজনদের অশান্তি লক্ষ্য করা গিয়েছে ৷"
যদিও শুভর বক্তব্য সমর্থন করেননি আরেক রোগীর আত্মীয় ধ্রুব সামন্ত ৷ তাঁর মতে, "খাকি বা নীল ৷ উর্দিধারী দেখলে সবার মনেই খানিকটা ভয় তৈরি হয় ৷ সিভিক ভলান্টিয়াররাই এখন কার্যত পুলিশের কাজ করছেন ৷ কারণ, রাজ্যের কোনও থানাতেই পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী নেই ৷ আগে এখানে যে সংখ্যক সিভিককর্মী মোতায়েন থাকতেন, তাতে গোটা মেডিক্যাল ক্যাম্পাসে তাঁরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিরাপত্তা দেখতেন ৷ হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশকর্মীর পক্ষে সেটা কিছুতেই সম্ভব নয় ৷ হাসপাতালের নিরাপত্তায় এর প্রভাব পড়বেই ৷"
এই ঘটনায় মালদা মেডিক্যালের নিরাপত্তা বাড়ে না কমে, তা পরে বোঝা যাবে ৷ কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে এখানে আরও বেশি সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ চলছে ৷ আগে গোটা মেডিক্যাল চত্বরে 171টি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল ৷ বাড়তি লাগানো হচ্ছে আরও 228টি ৷ ট্রমা কেয়ার ইউনিটে 399টি সিসি ক্যামেরার মনিটারিং সিস্টেমের ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ ইতিমধ্যে 70 শতাংশ নতুন ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ ৷ আগামী সপ্তাহের প্রথমদিকেই নতুন ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে ৷
এ নিয়ে মালদা মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার পুরঞ্জয় সাহাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, "আমি মালদায় নেই ৷ বাইরে রয়েছি ৷ ফলে এ নিয়ে এখন কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ৷ মালদা ফিরে সব খতিয়ে দেখে কিছু বলতে পারব ৷"