চন্দ্রকোনা, 18 ফেব্রুয়ারি: মানুষ হোক বা পশু ৷ মায়ের কাছে সন্তান সবচেয়ে আপন ৷ একজন মা অতি যত্নে লালন পালন করেন সন্তানকে ৷ বিড়াল ছানাদেরও সেভাবেই সযত্নে বড় করে চলেছেন স্কুল শিক্ষিকা মা ৷ তবে এক-দুই নয়, অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানো 14টি বিড়ালের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন 48 বছরের সবিতা পান ৷ খাওয়ানো থেকে ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তোলা, সবই একাহাতে করছেন এই শিক্ষিকা ৷
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার 2 নম্বর ওয়ার্ডের মিত্রসেনপুর এলাকার বাসিন্দা তিনি । স্বামী ও এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার । স্বামী নিমাইচন্দ্র পান পেশায় উকি ৷ আর ছেলে-মেয়ে স্কুলে পাঠরত । সবিতা চন্দ্রকোনা পৌর এলাকারই অযোধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা । ঘর-পরিবার সামলে শিক্ষকতার জন্য স্কুলে যেতে হয় তাঁকে। এসবের মাঝেও সবিতা তাঁর পশু প্রেমের সত্তা বজায় রেখে চলেছেন ।
জানা গিয়েছে, ছোটবেলা থেকেই তাঁর এই পশু প্রেম । তবে গত 8-9 বছর ধরে মিত্রসেনপুর এলাকার অলিগলি ঘুরে বেড়ানো 14টি বিড়ালের মা হয়ে উঠেছেন সবিতা পান ৷ ভোর চারটে থেকে শুরু হয় তাঁর এই কর্মকাণ্ড ৷ সকালে উঠে সংসারের কাজের পাশাপাশি বিড়ালগুলিকে খেতে দেন তিনি ।
সবিতার কথায়, ভোর চারটে এসে বিড়ালগুলি তাঁর ঘুম ভাঙায় ৷ এরপর গরম জল করে ভাত ও মাখা সন্দেশ, দুধ খেতে দেন বিড়ালগুলিকে ৷ ভোরে মিষ্টি মুখ করার পর এবার আমিষের পালা ৷ মাছ পাতে থাকতেই হবে ৷ সকাল 6টায় সবিতার উঠোনে হাজির হন মাছ বিক্রেতা তুফান পাল ৷ তাঁর কাছ থেকে প্রত্যেকদিন 500 থেকে এক কেজি টাটকা মাছ নেওয়া হয় ৷ সেই মাছ উপভোগ করতে একডাক দিলেই বাড়ির উঠোনে জড়ো হয় বিড়ালগুলি ৷
মাছ খেয়ে সকালের খাবার সারার পর পাড়া ভ্রমণে বেরোন তারা ৷ দুপুরে এক কেজির সরুচালের ভাত হয় ৷ সেই খেয়ে ঘুম দেয় বিড়ালছানারা ৷ তারপর স্কুল থেকে ফিরে আবারও তাদের মাখা সন্দেশ খেতে দেন সবিতা ৷ রাতে বিড়ালদের জন্য কখনও রুটি আবার কখনও ভাতের বন্দোবস্ত করা হয় । রাতের খাবার খেয়ে বাইরে খোলা জায়গায় না থেকে সবিতার বাড়িতেই সোফায় রাত্রিযাপন করে বিড়ালগুলি ।
শুরুর দিকে একজন বিড়ালছানার সঙ্গে আলাপ হয় সবিতার ৷ এরপর ধীরে ধীরে এই স্কুল শিক্ষিকার পশু প্রেমের টানে এবং পরম আদরযত্নে বিড়ালের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে 14টিতে দাঁড়িয়েছে । তবে সবিতার পশু প্রেমে কোনো আপত্তি নেই তাঁর স্বামী ও সন্তানদের । তাঁরাও সঙ্গ দেন সবিতার এহেন কাজে ৷
পাড়ার কাকিমা সবিতার এহেন পশু প্রেমে মুগ্ধ এলাকাবাসীও । স্থানীয় বাসিন্দা বাপি মণ্ডল বলেন, "যেভাবে একটা বাচ্চাকে মা যত্ন করে রাখে ঠিক সেভাবেই কাকিমা বিড়ালগুলোর যত্নও নেন ৷" যেখানে সারমেয় থেকে বিড়ালছানা পিটিয়ে মারা বা হত্যার মতো ঘটনা আকছার ঘটতে দেখা যাচ্ছে, সেখানে চন্দ্রকোনার এই স্কুল শিক্ষিকার পশু প্রেম নজর কাড়ছে ।
আরও পড়ুন: