কলকাতা, 25 মে: ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে বঙ্গোপসাগরে উপরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ৷ ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হওয়ার আগে তা ধীরে ধীরে ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে । আগামী রবিবার গভীর রাতে স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পাড়ে ঘূর্ণিঝড় ৷ এখনও পর্যন্ত আবহাওয়াবিদদের অনুমান অনুযায়ী, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমাল পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের উপকূলের মাঝের কোনও জায়গায় গিয়ে আছড়ে পড়তে পারে । ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপক প্রভাব পড়ার তুমূল আশঙ্কা এ রাজ্যেও । ইতিমধ্যে তাই ঘূর্ণিঝড় রেমালকে মোকাবিলার প্রস্তুতি জোরকদমে শুরু করে দিয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জেলা প্রশাসন ।
দক্ষিণ 24 পরগনার উপকূল তীরবর্তী এলাকায়গুলিতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম । গঙ্গাসাগরের তীরে চলছে মাইকিং ৷ সুন্দরবনের উপকূল তীরবর্তী ত্রাণ শিবিরগুলিতে প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষের মুখে ৷ মজুত রাখা হচ্ছে শুকনো খাবার ও পানীয় জল । সাগর ব্লকের বিডিও কানাইয়াকুমার রায় বলেন, "ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা জন্য সবরকমভাবে আমরা প্রস্তুত ৷ মাইকিং চলছে ৷ ত্রাণ শিবিরগুলিকে প্রস্তুত রেখেছি ৷ দূর্বল নদীবাঁধে কাজ চলছে ৷" আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তা পাওয়ার পর শনিবার থেকেই ঘূর্ণিঝড় রেমালের মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু করে দিল উত্তর 24 পরগনা জেলা প্রশাসন।ইতিমধ্যে জেলার সুন্দরবন ঘেঁষা বসিরহাটের উপকূলবর্তী এলাকাতে জেলা প্রশাসনের তরফে মাইকিং শুরু হয়েছে। আগামী রবিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের নদী এবং সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। মাইকিং প্রচারের মাধ্যমে সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা পর্যটকদের সতর্ক করার কাজ শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন:
রবিবার মধ্যরাত নাগাদ সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝে উপকূলের কোনও একটি এলাকায় প্রবল শক্তি নিয়ে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আছড়ে পড়তে পারে । শনিবার সকাল 9টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি ক্যানিং থেকে 670 কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল । সময় যত এগোচ্ছে ততই শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসছে এই ঘূর্ণিঝড় ।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় রাজ্যের উপকূলের দুই জেলায় চূড়ান্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে । পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে স্থানীয়দের সতর্ক করতে চলছে মাইকিং । দক্ষিণ 24 পরগনার নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, কাকদ্বীপ ,রায়দিঘি ও সাগরে উপকূলে বাড়ছে জলোচ্ছ্বাস । সকাল থেকেই বড়-বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাড়ে ।
দক্ষিণ 24 পরগনার পর্যটক কেন্দ্রগুলিতে ঘূর্ণিঝড়ের সর্তকতা জারি করে পর্যটক শূন্য করে রাখার কাজ চলছে । সাগরদ্বীপ, কাকদ্বীপ, নামখানা-সহ সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন প্রান্তেও চলছে সতর্কতামূলক প্রচার । উপকূলের এলাকাগুলি থেকে বাসিন্দাদের সরানোর কাজ চলছে জোরকদমে । প্রতিনিয়ত আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতির উপর নজর রাখছেন প্রশাসনের কর্মীরা । সব মিলিয়ে আরও একটা ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পুরোদস্তুর তৈরি প্রশাসন ।
আরও পড়ুন:
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় শনিবার কাকদ্বীপ মহকুমার শাসকের দফতরে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে উচ্চপর্যায়ে বৈঠক করলেন দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা । এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার ৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কাকদ্বীপের মহকুমা শাসক-সহ একাধিক জেলা প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকেরা । এ বিষয় দক্ষিণ 24 পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, "ব্লক প্রশাসন থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ে বৈঠক ইতিমধ্যেই সেরে নেওয়া হয়েছে । বিভিন্ন ত্রাণ শিবির গুলিতে মজুদ করে রাখা হচ্ছে শুকনো খাবার ও পানীয় জল ৷ এছাড়াও প্রতিটি ত্রাণ শিবিরে চিকিৎসকদের একটি দল মজুদ রাখা হবে । প্রস্তুত রাখা হচ্ছে জেলা প্রশাসনের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে ।"
এর পাশাপাশি সুন্দরবনের উপকূল তীরবর্তী এলাকাগুলি থেকে সাধারণ মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে । ইতিমধ্যেই দক্ষিণ 24 পরগনার সাগর, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, ক্যানিং বাসন্তী প্রকৃতি জায়গায় ব্লক প্রশাসনের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখার কাজ চলছে । সুন্দরবনের উপকূল তীরবর্তী এলাকার মাটির নদী বাঁধগুলিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতির কাজ চালানো হচ্ছে । বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুত জেলা প্রশাসন । ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের সরকারি আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে । জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের উপর নজর রাখা হচ্ছে ।
এমনিতেই পূর্ণিমার কোটালের জেরে নদী এবং সমুদ্রের জলস্তর বেড়েছে।নদী এবং সমুদ্র উত্তাল হতে থাকায় পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে কড়াকড়ি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল নিয়ে ইতিমধ্যে সতর্কবার্তা দিয়েছে নবান্ন। সূত্রের খবর,নবান্নের তরফে উপকূলবর্তী তিন জেলা উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। রেমালের দাপটে প্রাণহানি এড়াতে সুন্দরবনের দ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দাদের উঁচু এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যেতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন।প্রয়োজন অনুয়ায়ী সরকারি ফ্লাড সেন্টারগুলোও তৈরি রাখা হয়েছে।
এদিকে,বসিরহাটের দ্বীপ এলাকায় এখনও বেশিরভাগ বাঁধই কাঁচা।ফলে,বেহাল বাঁধে কোথাও কোনও সমস্যা দেখা দিলে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বাঁধ মেরামতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।আপদকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং ব্লক অফিসগুলোতে শুকনো খাবার ও ত্রিপল মজুত করা হয়েছে। তবে,এতকিছুর পরেও আশঙ্কা কিন্তু রয়েই গিয়েছে সুন্দরবন ঘেঁষা দ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দাদের।বিশেষত,রেমালের প্রভাবে কাঁচা বাঁধ ভেঙে প্লাবনের শঙ্কা করছেন সুন্দরবনবাসী।এই আশঙ্কায় রাতের ঘুম উড়েছে তাঁদের।
আরও পড়ুন: