সোনারপুর, 22 অগস্ট: সারা গায়ে সিগারেটের ছেঁকার দাগ ৷ মারধরের দাগে কালসিটে পড়েছে গলায় ৷ আঙুল ও হাতের বেশ কিছু অংশ পোড়া ৷ পাঁচ বছরের শিশুকে অমানবিক অত্যাচার করার অভিযোগ ৷ সোনারপুর থানা এলাকায় অভিযোগ দায়ের মাসি-মেসোর বিরুদ্ধে ৷ শিশুটি মা-বাবা বলেই চেনে তাদের ৷
জানা গিয়েছে, নাবালিকা সোনারপুর থানা এলাকার একটি সরকারি স্কুলের নার্সারির ছাত্রী ৷ ছোটবেলায় তার মা-বাবার মৃত্যু হয়েছে ৷ তিনমাস বয়স থেকে সে মাসি-মেসোর কাছেই বড় হয়ে উঠছে ৷ বুধবার সে স্কুলে এলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে ৷ শিশুটির স্কুলের বন্ধুরা তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় । তারাই তাদের বাবা ও মায়ের কাছে পুরো বিষয়টি খুলে বলে । সেসময় শিশুটি জিজ্ঞাসাবাদ করে অভিভাবকরা জানতে পারেন, তাকে মারধর করা হয়েছে ৷ এরপর তাঁরা নাবালিকার সারা শরীরে মারধরের দাগ দেখতে পান ৷ স্কুল কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানান অভিভাবকেরা ৷ তবে তারা নীরব দর্শক হয়েই থাকে ৷ ঘটনায় কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি ৷
এক অভিভাবক বলেন, "শিশুটির ওরকম অবস্থা দেখে আমরা তাকে বাড়ি নিয়ে যাই ৷ সেখানে গিয়ে ওর মাসিকে জিজ্ঞেস করি কেন মারধর করেছেন ৷ তিনি মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে নেয় ৷ মাসি জানায়, বাচ্চাটি তাঁদের বাড়ির মালিকের ঘর থেকে চুরি করেছে ৷ তাই তাঁকে মারধর করা হয়েছে ৷ মাসি আরও জানান যে তিনি শিশুটিকে চিরুনি দিয়ে সর্বত্র মেরেছেন । কিন্তু আমরা বাড়ির মালিককে ফোন করে জানতে পারি, মাসির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ৷ এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি ৷ চিরুনি দিয়ে, বেলুনি দিয়ে শিশুকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে ৷ এমনকী গরম জল দিয়ে তার হাতের আঙুল পুড়িয়ে দিয়েছে ৷ গলায় আঙুলের ছাপ রয়েছে ৷ কান থেকে রক্ত বেরচ্ছিল শিশুটির ৷ স্কুলে এলে বিষয়টি আমাদের নজরে আসে ৷ এরপর মাসিকে বলে কাজ না হওয়ায় আমরা পুলিশের কাছে যাই ৷"
জানা গিয়েছে, বুধবার বাড়িতে গিয়ে মাসিকে সাবধান করে আসেন অভিভাবকরা ৷ এরপরেও মাসি নাবালিকাকে ফের মারধর করে বলে অভিযোগ ৷ অভিভাবকদের দাবি, বৃহস্পতিবার স্কুলে পরীক্ষা দিতে আসে শিশুটি ৷ তখন বন্ধুদের কাছে তাকে ফের মারধরের কথা জানায় সে ৷ তারপরে শিশুটিকে নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন অভিভাবকেরা ৷ শিশুটিকে সোনারপুর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় ।
পুলিশ সূত্রে খবর, শিশুটির প্রাথমিক চিকিৎসার পর আপাতত তাকে একটি সরকারি হোমে রাখা হয়েছে । এই ঘটনায় প্রথমে অভিভাবকরা মৌখিকভাবে সোনারপুর থানায় অভিযোগ করে ৷ পরে তাঁরা লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সোনারপুর থানার পুলিশ । তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি । যদিও স্কুলের পক্ষ থেকে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি থানায় ।
নাবালিকার স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, "শিশুটি আমাদের স্কুলে পড়ে ৷ বুধবার স্কুলে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে ৷ এরপর অভিভাবকরা এসে শিশুটির উপর অত্যাচারের কথা জানায় আমাদের ৷ আমরা শিশুটির বাবাকে স্কুলে ডেকে পাঠাই ৷ তাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে কোনও সদুত্তর পাইনি ৷ এরপর আজকে অভিভাবকরাই ওই শিশুটিকে নিয়ে থানায় যায় ৷ এমনকী স্থানীয় ক্লাবেও ঘটনাটি জানানো হয়েছে ৷ আমরা থানায় অভিযোগ করিনি ৷ তবে অভিভাবকদের পাশে রয়েছি ৷"