আসানসোল, 30 মে: দূরপাল্লার বেশিরভাগ ট্রেনে শৌচাগারে ঢুকতেই দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়ে যাত্রীদের। আর শৌচাগারের দুর্গন্ধে বিরক্ত যাত্রীদের বারবার অভিযোগে কপালে ভাঁজ পড়ে রেল কর্তৃপক্ষের। কী করে এই সমস্যা থেকে সমাধান মেলে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল। এই প্রথমবার ট্রেনের শৌচাগারগুলির 'রিয়েল টাইম' পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য পূর্ব রেল নিয়ে আসছে আইওটি ভিত্তিক ব্যবস্থা বা রিয়েল টাইম হাইজিন মনিটরিং সিস্টেম। রেলের ভাষায় এই সিস্টেম বা ব্যবস্থার নাম 'গন্ধভেদ'। সম্প্রতি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে পূর্ব রেলের জনসংযোগ বিভাগ।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই 'গন্ধভেদ' প্রক্রিয়া পরীক্ষামূলকভাবে ইতিমধ্যে মধ্য রেলের মুম্বই জোনের কয়েকটি স্টেশন টয়লেটে ব্যবহার করা হয়েছে। তা পরীক্ষালব্ধভাবে সফল হয়েছে। এরপরেই রেল বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী পূর্ব রেল এই রিয়েল টাইম হাইজিন মনিটরিং সিস্টেম 'গন্ধভেদ'-এর ফিল্ড ট্রায়াল করতে চলেছে। হাওড়া ডিভিশনের 3টি ট্রেন, শিয়ালদা ডিভিশনের 3টি ট্রেন, আসানসোল ডিভিশনের 2টি ট্রেন এবং মালদা ডিভিশনের 2টি ট্রেনে 'গন্ধভেদ' ডিভাইস দিয়ে ফিল্ড ট্রায়াল হবে।
- কীভাবে কাজ করবে এই 'গন্ধভেদ' ডিভাইস?
এই গন্ধভেদ ডিভাইসটি ট্রেনের টয়লেটে লাগানো থাকবে ৷ সেখানে নোংরা, দুর্গন্ধে স্বাস্থ্যবিধি অবস্থার অবনতি হলেই ডিভাইস সিগন্যাল দেবে। স্বচ্ছতা ও সাফাইয়ের দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন রেলে তাঁদের কাছে এসএমএসেও ওয়েব ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় বার্তা চলে যাবে। রেলের স্বচ্ছতার কর্মীরা গিয়ে শৌচাগারকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে তুলবে ৷
জানা গিয়েছে 'গন্ধভেদ' একটি আইওটি ভিত্তিক বৈদ্যুতিক ডিভাইস। যা দুর্গন্ধ, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পর্যবেক্ষণ এবং শনাক্ত করে। এগুলোর কোনও একটার ক্ষেত্রে যদি কোনও পরিমাপ 'থ্রেশহোল্ড' মান অতিক্রম করে, তবে তা সতর্কবার্তা হিসেবে মোবাইল এবং ওয়েব অ্যাপে চলে যাবে। পাশাপাশি কিছু সুরক্ষা এবং সমাধান টিপস দিয়ে টয়লেটগুলি পরিষ্কার এবং দুর্গন্ধ মুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার কথা বলা হবে। এই 'গন্ধভেদ' ডিভাইসে বেশকিছু সেন্সরও রয়েছে ৷ এই সেন্সর অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন, ট্রাইমিথাইল অ্যামাইন, মিথাইল মারক্যাপ্টান, ইথানল ইত্যাদি শনাক্ত করবে।
আরেকটি সেন্সর টোটাল ভোলাটাইল অর্গানিক পদার্থ শনাক্ত করতে পারে। যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সমানভাবে ক্ষতিকর। পাশাপাশি জীবাণুনাশক ও এয়ার ফ্রেশনারের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ শনাক্ত করার সেন্সরও রয়েছে এই ডিভাইসটিতে। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই সেন্সর তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টয়লেটে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা শনাক্ত করা অপরিহার্য। 'গন্ধভেদ' যন্ত্র বা ডিভাইসটি এইসব প্যারামিটারগুলিও পর্যবেক্ষণ করবে।
রেল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এই ডিভাইসের সফল ফিল্ড ট্রায়ালের পরে, ট্রেনের শৌচাগারগুলির স্বয়ংক্রিয় স্বাস্থ্যবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য পুরো পূর্ব রেলে আস্তে আস্তে সিস্টেমটি গ্রহণ বা কার্যকর করা হবে ৷