কলকাতা, 9 ডিসেম্বর: কুলতলির নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনে দোষীর ফাঁসির সাজা দিয়েছে আদালত ৷ এদিকে অগস্ট থেকে ডিসেম্বর- 4 মাস হয়ে গেল আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের বিচার এখনও হল না ৷ এরই মধ্যে আগামিকাল 10 ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি ৷ তার আগে সোমবার সন্ধ্যায় ফের চিকিৎসক থেকে আমজনতা ন্যায়বিচারের দাবিতে পথে নামলেন ৷
আরজি কর হাসপাতালেও আবারও শোনা গেল বিচারের দাবি ৷ জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের তরফে আরজিকর হাসপাতালে ওড়ানো হল ফানুস ৷ সেই ফানুসের গায়ে লেখা ছিল 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' ৷ এরপর সিনিয়র চিকিৎসক সংগঠন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের ডাকে চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষ আরজি কর হাসপাতাল থেকে শ্যামবাজার পাঁচ মাথা পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করেন ৷ তারপর কিছুক্ষণের জন্য শ্যামবাজার পাঁচ মাথা মোড়ে মানববন্ধও করেন তাঁরা ৷
এদিনই শেষ হয়েছে জুনিয়র চিকিৎসকদের লিখিত পরীক্ষা ৷ এরপরই আর জি কর হাসপাতালে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয় ৷ সেখানে যোগ দিয়ে জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো বলেন, "আরজি কর ঘটনার সঙ্গে সরাসরি স্বাস্থ্য-দুর্নীতি জড়িয়ে ৷ আমার দেখলাম, ঘটনার দিন তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য স্বাস্থ্য ভবন-মেডিক্যাল কাউন্সিলের কর্তারা-সহ সবাই সেমিনার ঘরে ঢুকে পড়েছিলেন ৷ আসলে আরজি করের আন্দোলন সিস্টেমের এই কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ৷ তাই হয়তো এত প্রশ্ন উঠছে ৷ কিন্তু আমাদের লড়াই চলছে, বিচার আমরা আনবই ৷"
অন্যদিকে জয়নগরের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ-খুনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে মোস্তাকিন সরদার ৷ তাকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে বারুইপুরের আদালত ৷ কিন্তু জয়নগরের সঙ্গে আরজি করের ঘটনার তফাৎ একাধিক ক্ষেত্রে ৷ সে কথাই বারবার মনে করে দিচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা ৷
এই প্রসঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসক আশফাকুল্লা নাইয়া বলেন, "জয়নগরের ঘটনায় কোনও প্রভাবশালী জড়িত ছিল না ৷ জয়নগরের পুলিশ ক্রাইম সিন প্রটেক্ট করার নাম করে ধামাচাপা দিতে আসেনি ৷ এখানে হাজার হাজার ব্যক্তি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দেখা দিয়েছে ৷ এখন মেডিক্যাল কাউন্সিল অভিযুক্তদের বিভিন্ন পদে বসাচ্ছে ৷ আরজি করের ঘটনার সঙ্গে প্রভাবশালীরা বিভিন্নভাবে জড়িত ৷ আর সেই কারণেই বিচার পেতে দেরি হচ্ছে ৷"
আরজি কর হাসপাতালে নির্যাতিতার আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে ফুল দেওয়া, মোমবাতি জ্বালানো এবং ফানুস ওড়ানোর পর ভিতর থেকেই একটি মৌন মিছিল আরজি কর হাসপাতালের এমার্জেন্সি গেটের সামনে পর্যন্ত আসে ৷ তারপর সেই মিছিল মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার-এর তত্ত্বাবধানে জুনিয়র চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে মোমবাতি হাতে এগিয়ে যায় শ্যামবাজার পাঁচমাথা মোড় পর্যন্ত ৷
মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের রাজ্য সম্পাদক চিকিৎসক বিপ্লব চন্দ্র বলেন, "কলকাতা পুলিশ তথ্য প্রমাণ লোপাট করেছে ৷ সিবিআই দীর্ঘ সময় নিচ্ছে ৷ সুপ্রিম কোর্টের কাছেও মানুষ কিছুটা হতাশ ৷ ওদিকে সরকার আবার চেষ্টা করছে থ্রেট কালচারে অভিযুক্তদের কলেজের মাথায় বসাতে ৷ কিন্তু আমরা তা করতে দেব না ৷ তাই আমরা প্রথম দিন থেকে রাস্তায় আছি। সাধারণ মানুষ আমাদের আন্দোলনের পাশে আছে ৷ থ্রেট কালচার আমরা কিছুতেই ফেরাতে দেব না ৷ ন্যায়বিচার না আসা পর্যন্ত রাস্তাতেই থাকব ৷"