মালদা, 1 ফেব্রুয়ারি: নৃশংসভাবে গলা কেটে নাবালিকাকে খুনের অভিযোগে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল মালদা শহর ৷ উত্তেজিত জনতা বৃহস্পতিবার ধৃত যুবকের বাড়ির সামগ্রী বাইরে বের করে আগুন ধরিয়ে দেয় ৷ সেখানে সংবাদমাধ্যমকে ছবি তুলতেও বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ৷ জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত নাবালিকার তুতো দাদা ৷ অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে শহরের ফোয়ারা মোড় ও রথবাড়িতে টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করা হয় ৷ সবার দাবি, এই নৃশংস ঘটনায় দোষীকে ফাঁসির সাজা দিতে হবে ৷ ফোয়ারা মোড়ে প্রায় 45 মিনিট অবরোধ করা হলেও পুলিশের দেখা মেলেনি ৷ তবে রথবাড়ি এলাকায় জাতীয় সড়ক অবরোধ হতেই ময়দানে নামে পুলিশ । অবশেষে পুলিশি আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা ।
মালদায় নিজের বোনকে গলা কেটে খুনের অভিযোগ ওঠে এক যুবকের বিরুদ্ধে ৷ মুণ্ডহীন নাবালিকার দেহ উদ্ধার হয় ৷ জানা গিয়েছে, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে নাবালিকাকে খুনের কথা স্বীকার করেছে অভিযুক্ত ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার রাত থেকে তোলপাড় হয়ে ওঠে মালদা শহর ৷ বৃহস্পতিবারও মালদা শহর জুড়ে চলছে মানুষের প্রতিবাদ ৷
জানা গিয়েছে, 29 জানুয়ারি সন্ধেয় মালদা শহরের এক এলাকা থেকে 11 বছরের নাবালিকার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের হয় ইংরেজবাজার থানায় ৷ নিখোঁজ নাবালিকার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ৷ ফুটেজে দেখা যায়, ওই নাবালিকা এক যুবকের মোটরবাইকে উঠে চলে যাচ্ছে ৷ ক্যামেরার ফুটেজ দেখে রাতেই এক যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ ৷ প্রথমে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে ওই যুবক ৷ কিন্তু তার সমস্ত বয়ান যাচাই করে পুলিশ নিশ্চিত হয়, নাবালিকা নিখোঁজের ঘটনায় ওই যুবক জড়িত ৷
এ দিকে বুধবারই মালদা শহরে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জাতীয় যুব কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন রাহুল গান্ধি ৷ দুই ভিভিআইপির উপস্থিতিতে গতকাল পুলিশ এই ঘটনার তদন্তে খুব একটা এগোতে পারেনি ৷ তাঁরা দু'জন শহর ছাড়তেই ফের নাবালিকাকে উদ্ধারে লেগে পড়ে পুলিশ ৷ ফের আটক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় ৷ তখনই ধৃত যুবক নাবালিকার জ্যেঠতুতো দাদা স্বীকার করে নেয়, সে বোনকে খুন করেছে ৷ তার দেখানো জায়গা থেকে পুলিশ শহরের আম বাজার থেকে নাবালিকার গলাকাটা ধর উদ্ধার করে ৷ মুণ্ড উদ্ধার হয় ধর থেকে 50 মিটার দূরে একটি পুরোনো গুদামঘরের ছাদ থেকে ৷ উদ্ধার হাওয়া ধর ও মুণ্ড ময়নাতদন্তের জন্য রাতেই মালদা মেডিক্যালে পাঠায় পুলিশ ৷
এদিকে এই খবর চাউর হতেই ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ইংরেজবাজার থানার সামনে ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে গভীর রাতে থানায় ছুটে আসেন ডেপুটি পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ৷ গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে নাবালিকার পাড়া ৷ অন্যদিকে এই ঘটনার জেরে আজ দুপুরে ইংরেজবাজার থানা ঘেরাও করে বিজেপিও । পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে বিকেলে ময়দানে নামে বাম শিবিরও ।
পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানান, প্রাথমিক জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছে যে মৃত নাবালিকার বাবার সঙ্গে তার কিছু ঝামেলা ছিল । এর জের ধরেই নাবালিকা নিয়ে গিয়ে খুন করে ৷ যুবক ওই নাবালিকাকে আম বাজারের নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে গলায় ছুরি ধরে ভিডিয়ো করার পরিকল্পনা নিয়েছিল । কিন্তু সেই সময় ওই নাবালিকা ভয় পেয়ে নড়াচড়া করতে থাকায় তার গলা কেটে যায় । অতিরিক্ত রক্তপাত হতে থাকায় ভয়ে প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে সে দেহ থেকে গলা আলাদা করে ভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয় ।
পুলিশ সুপার বলেন, "প্রাথমিকভাবে ধৃতের এই বয়ান হলেও পরিকল্পনামাফিক খুনের বিষয়টি এখনও আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না । ওই নাবালিকাকে কোনওভাবে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে কি না, সেটাও আমরা খতিয়ে দেখছি । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে । আপাতত ধৃতকে 14 দিনের পুলিশি হেফজতের আবেদনে আমরা আজ মালদা জেলা আদালতে পেশ করেছি ।" সকাল থেকে দফায় দফায় মালদা শহর অগ্নিগর্ভ হওয়া প্রসঙ্গে পুলিশসুপার বলেন, "এটা খুব অমানবিক ঘটনা । মানুষ ঘটনার ক্ষোভে প্রতিবাদ করেছে । আমরা সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে ।"
আরও পড়ুন: