কলকাতা, 11 জুন: যে ঘটনা কর্ণাটকে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল, এবার তারই আঁচ পড়ল আমাদের রাজ্যে । খোদ কলকাতায় নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিয়ে ৷ শহরে আইনের কলেজে এক অধ্যাপিকাকে হিজাব পরতে কর্তৃপক্ষ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ ৷ হিজাব পরতে না-দেওয়ায়, চলতি মাসের 5 তারিখ কলেজ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন অভিযোগকারী অধ্যাপিকা । এই ঘটনা গড়িয়েছে সংখ্যালঘু কমিশন পর্যন্ত ৷ তৃণমূল বিধায়কের উপস্থিতি বৈঠকে বসেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ ৷
টালিগঞ্জের কাছে লক্ষ্মী জিতেন্দ্রনাথ দাস ল কলেজের ঘটনা । কলেজের অধ্যাপিকা সানজিদা কাদিরের অভিযোগ, রমজান মাস থেকেই হিজাব পরে তিনি কলেজে আসছেন । প্রথমে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি ৷ তবে আচমকাই গত মে মাসে তাঁকে হিজাব পরে কলেজে যেতে বারণ করা হয় কর্তৃপক্ষের তরফে । কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ড্রেস-কোড মেনে তাঁকে পোশাক পরতে বলা হয় ৷ এতেই আপত্তি ওই অধ্যাপিকার ৷ নানা তদ্বিরের পরেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে হিজাব পরার অনুমতি না-দেওয়ায়, অবশেষে অধ্যাপিকার পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি ৷
ইটিভি ভারতকে সানজিদা কাদির জানান, "আমার ধর্মে হিজাব পরার কথা আছে । সংবিধানে এই নিয়ে কোনও নিষেধ নেই । আমি আমার কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষদের সঙ্গেও এই নিয়ে কথা বলি । কিন্তু তাতেও কোনও সদুত্তর মেলেনি । অবশেষে 5 জুন আমি ইস্তফা দিয়েছি ।"
এই পুরো ঘটনা সমাজমাধ্যমে তুলে ধরেন সানজিদা কাদির । বিষয়টি নিয়ে সংখ্যালঘু কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি ৷ এই সমস্যা মেটানোর জন্য গতকাল দুপুরে কলেজে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয় । সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের বিধায়ক হুমায়ুণ কবীর । বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে বৈঠক । বৈঠক শেষে ওই শিক্ষিকাকে ফের কলেজে যোগ দিতে বলা হয়েছে ৷ সানজিদা জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে বলেছে, অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের জন্য নির্ধারিত পোশাকই তাঁকে পরতে হবে ৷ তবে তিনি চাইলে তাঁর ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকতে পারেন, অর্থাৎ সেটি হেড-স্কার্ফের মতো করে ব্যবহার করতে পারেন ৷
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান গোপাল দাস জানান, "আমাদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল । তা বৈঠকে মিটে গিয়েছে । আমাদের একটা ইউনিফর্ম রয়েছে ৷ সেই কারণে আমরা বারণ করেছিলাম । তবে দু'জনেরই কোথাও বুঝতে সমস্যা হয়েছিল । তাই আমরা গতকাল বৈঠক করেছি । এমনকি বৈঠকের শেষে আমরা ওঁকে আবারও কলেজে যোগদানের কথা বলেছি ।"
তবে ইটিভি ভারতকে অভিযোগকারী অধ্যাপিকা জানিয়েছেন, এখনই তিনি কলেজে যোগদান করবেন না । এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাতদিন সময় চেয়েছেন তিনি । পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ওই ঘটনার সময় কলেজে অধ্যাপক এবং অধ্যাপিকাদের জন্য আলাদা করে কোনও ইউনিফর্ম ছিল না ।
যদিও এই পুরো বিষয়টিতে যেন কোনওভাবেই রাজনীতি বা সাম্প্রদায়িকতার রং না-লাগে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেয়েছেন ওই অধ্যাপিকা ৷ তাঁর দাবি, তিনি কোনও ধর্মীয় বিভেদের কথা বলেননি ৷ সংবিধানে লিখে দেওয়া প্রতিটি ধর্মের অধিকারের কথা বলতে চেয়েছেন । তাঁর কথায়, "আমি মুসলিম বলে আমার কথা বলছি তা নয় । যিনি বৈষ্ণব, যিনি পাঞ্জাবি, তাঁরাও যেন ধর্মনিরপেক্ষ দেশে তাঁদের জন্য বর্ণিত ধর্মীয় আচরণ নির্দ্বিধায় পালন করতে পারেন ৷ এটা সংবিধানে বলা আছে । আমি আইনের শিক্ষিকা, তাই আমি কী করে দেশের আইনে বলে দেওয়া কথাগুলো অস্বীকার করব ।"