ETV Bharat / state

রতন টাটা ভালো মানুষ, আন্দোলন টাটাদের বিরুদ্ধে ছিল না; প্রতিক্রিয়া সিঙ্গুরের শাসক নেতাদের

একরাশ আক্ষেপ নিয়ে সিঙ্গুর ছেড়েছিলেন রতন টাটা। তাঁর প্রয়াণে শাসক শিবিরের বক্তব্য, জমি আন্দোলন তাঁর বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল কৃষকের পক্ষে।

Ratan Tata
রতন টাটা ও সিঙ্গুর উপাখ্যান (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 10, 2024, 10:16 PM IST

সিঙ্গুর, 10 অক্টোবর: চেয়েছিলেন শিল্প হোক । গাড়ির কারখানা গড়ার কাজ এগিয়েও ফেলেছিলেন বেশ খানিকটা। শেষমেশ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সিঙ্গুর ছেড়েছিলেন রতন টাটা। তাঁর প্রয়াণে প্রতিক্রিয়া দিলেন সিঙ্গুরের নেতারা।

তৎকালীন বিরোধী অধুনা শাসক শিবিরের নেতাদের দাবি, তাঁদের আন্দোলন কোনওদিনই ব্যক্তি রতন টাটা অথবা টাটা গোষ্ঠির বিরুদ্ধে ছিল না । ছিল বাম সরকারের বিরুদ্ধে। কৃষকদের দাবির পক্ষে । সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন মন্ত্রী বেচারাম মান্না ও প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য-সহ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। তাঁদের আন্দোলনের পর টাটারা রাজ্য ছাডার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে আজ তাঁদের মতে, রতন টাটা ছিলেন ভালো মানুষ ।

রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া (ইটিভি ভারত)

সিঙ্গুরের তৎকালীন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, "আমাদের আন্দোলন কোনও দিনই রতন টাটার বিরুদ্ধে ছিল না। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। (প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পুলিশ অত্যাচার করে জমি কেড়ে নিয়েছিল। এই আন্দোলন তার বিরুদ্ধে ছিল। আমরা চেয়েছিলাম যাঁরা নিজেদের ইচ্ছায় জমি দিয়েছেন তাঁদের জমিতে শিল্প হোক। প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধিকে সামনে রেখে চুক্তিও হয়েছিল। টাটাদের বাংলা ছাড়ায় আমাদের কোনও ভূমিকা ছিল না।"

সিঙ্গুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, "জমি নিয়ে আন্দোলন টাটার বিরুদ্ধে ছিল না। তৎকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছিল । তারা কৃষককে না জানিয়ে গায়ের জোরে জমি অধিগ্রহণ করেছিল। আমরা সেই আচরণের প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের কোনও প্রতিবাদই রতন টাটার বিরুদ্ধে ছিল না। শিল্পপতি হিসবে ভারত গঠনে তাঁর ভূমিকা ছিল।"

সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গভীর শ্রদ্ধা জানাই । উনি ভারতবর্ষের খুবই বড় শিল্পপতি। মানুষ হিসেবেও খুবই ভালো ছিলেন। তবে সিঙ্গুরের ব্যাপারটাই সম্পূর্ণ আলাদা। জীবনে অনেক রকম মুহূর্ত আসে । তার কোনওটা ঠিক। কোনওটা বেঠিক । সেটা অন্য কথা। কিন্তু কোনও একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে সামনে রেখে কোনও মানুষকেই বিচার করা উচিত নয় ।"

অন্যদিকে, সিপিএম নেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, "তৎকালীন বিরোধী নেতাদের নৈরাজবাদী আচরণের জন্য টাটারা রাজ্য ছেড়েছিল। একটা রামধনু জোট কাজ করেছিল। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের পথে নামিয়ে রাজ্যের শিল্প সম্মেলনকে ধ্বংস করা হয়েছিল। তার ফলে গত 13 বছরে রাজ্যে কোনও শিল্প আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা দুনিয়ায় শিল্প সম্মেলন করছেন। তবু একটা কারখানাও হচ্ছে না। "

2006 সালে সপ্তম বাম সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরির উদ্যোগ নেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। গাড়ি কারখানার জন্য সিঙ্গুরের জমি পছন্দও করে টাটারা। প্রায় 997 একর জমিতে কারখানা তৈরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি নেওয়া যাবে না। এই দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলন শুরু করেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিবাদের মূলে ছিল 400 একর জমি।

লাগাতার আন্দোলন চলে। 26 দিন অনশনও করেন মমতা। শেষমেশ 2008 সালের চতুর্থীর দিন রতন টাটা সিঙ্গুর ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন। 16 বছর পর আরেক দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন প্রয়াত হলেন টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান রতন টাটা। তিনি চিরতরে বিদায় নিলেন। শেষ হল এক বর্ণময় জীবনের। অন্যদিকে, সিঙ্গুর রয়ে গেল অধরা শিল্প-স্বপ্ন নিয়ে।

সিঙ্গুর, 10 অক্টোবর: চেয়েছিলেন শিল্প হোক । গাড়ির কারখানা গড়ার কাজ এগিয়েও ফেলেছিলেন বেশ খানিকটা। শেষমেশ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সিঙ্গুর ছেড়েছিলেন রতন টাটা। তাঁর প্রয়াণে প্রতিক্রিয়া দিলেন সিঙ্গুরের নেতারা।

তৎকালীন বিরোধী অধুনা শাসক শিবিরের নেতাদের দাবি, তাঁদের আন্দোলন কোনওদিনই ব্যক্তি রতন টাটা অথবা টাটা গোষ্ঠির বিরুদ্ধে ছিল না । ছিল বাম সরকারের বিরুদ্ধে। কৃষকদের দাবির পক্ষে । সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন মন্ত্রী বেচারাম মান্না ও প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য-সহ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। তাঁদের আন্দোলনের পর টাটারা রাজ্য ছাডার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে আজ তাঁদের মতে, রতন টাটা ছিলেন ভালো মানুষ ।

রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া (ইটিভি ভারত)

সিঙ্গুরের তৎকালীন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, "আমাদের আন্দোলন কোনও দিনই রতন টাটার বিরুদ্ধে ছিল না। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। (প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পুলিশ অত্যাচার করে জমি কেড়ে নিয়েছিল। এই আন্দোলন তার বিরুদ্ধে ছিল। আমরা চেয়েছিলাম যাঁরা নিজেদের ইচ্ছায় জমি দিয়েছেন তাঁদের জমিতে শিল্প হোক। প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধিকে সামনে রেখে চুক্তিও হয়েছিল। টাটাদের বাংলা ছাড়ায় আমাদের কোনও ভূমিকা ছিল না।"

সিঙ্গুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, "জমি নিয়ে আন্দোলন টাটার বিরুদ্ধে ছিল না। তৎকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছিল । তারা কৃষককে না জানিয়ে গায়ের জোরে জমি অধিগ্রহণ করেছিল। আমরা সেই আচরণের প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের কোনও প্রতিবাদই রতন টাটার বিরুদ্ধে ছিল না। শিল্পপতি হিসবে ভারত গঠনে তাঁর ভূমিকা ছিল।"

সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গভীর শ্রদ্ধা জানাই । উনি ভারতবর্ষের খুবই বড় শিল্পপতি। মানুষ হিসেবেও খুবই ভালো ছিলেন। তবে সিঙ্গুরের ব্যাপারটাই সম্পূর্ণ আলাদা। জীবনে অনেক রকম মুহূর্ত আসে । তার কোনওটা ঠিক। কোনওটা বেঠিক । সেটা অন্য কথা। কিন্তু কোনও একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে সামনে রেখে কোনও মানুষকেই বিচার করা উচিত নয় ।"

অন্যদিকে, সিপিএম নেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, "তৎকালীন বিরোধী নেতাদের নৈরাজবাদী আচরণের জন্য টাটারা রাজ্য ছেড়েছিল। একটা রামধনু জোট কাজ করেছিল। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের পথে নামিয়ে রাজ্যের শিল্প সম্মেলনকে ধ্বংস করা হয়েছিল। তার ফলে গত 13 বছরে রাজ্যে কোনও শিল্প আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা দুনিয়ায় শিল্প সম্মেলন করছেন। তবু একটা কারখানাও হচ্ছে না। "

2006 সালে সপ্তম বাম সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরির উদ্যোগ নেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। গাড়ি কারখানার জন্য সিঙ্গুরের জমি পছন্দও করে টাটারা। প্রায় 997 একর জমিতে কারখানা তৈরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি নেওয়া যাবে না। এই দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলন শুরু করেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিবাদের মূলে ছিল 400 একর জমি।

লাগাতার আন্দোলন চলে। 26 দিন অনশনও করেন মমতা। শেষমেশ 2008 সালের চতুর্থীর দিন রতন টাটা সিঙ্গুর ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন। 16 বছর পর আরেক দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন প্রয়াত হলেন টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান রতন টাটা। তিনি চিরতরে বিদায় নিলেন। শেষ হল এক বর্ণময় জীবনের। অন্যদিকে, সিঙ্গুর রয়ে গেল অধরা শিল্প-স্বপ্ন নিয়ে।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.