আসানসোল, 13 জুলাই: এলাকায় বিক্ষোভ এবং জনরোষের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়েছিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। গ্রামবাসীদের পালটা ক্ষোভ গিয়ে পড়ল পুলিশের উপরেই। ভাঙচুর করা হলো পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি। মারধর করা হল পুলিশকে। ঘটনায় এক সিভিক ভলেন্টিয়ার গুরুতরভাবে জখম হয়েছেন বলে খবর।
আসানসোল উত্তর থানার অন্তর্গত ভানোরা খোলামুখ খনি ও ব্লু ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এলাকার ঘটনা। পুলিশ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে। শুক্রবার রাতে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ খবর পায় আসানসোলের ব্লু ফ্যাক্টরি ও ভানোরা খোলামুখ খনি সংলগ্ন এলাকায় গ্রামবাসীদের মধ্যে বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এবং কোনও কারণে তারা জমায়েত হয়েছে। বিষয়টির খবর পেয়েই দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ ভ্যান সেখানে যায়। কিন্তু পুলিশ ভ্যান দেখতে পেয়েই গ্রামবাসীদের ক্ষোভ উগরে পড়ে পুলিশের উপর। পুলিশের গাড়িটিকে ভাঙচুর করা হয় এবং ওই গাড়িতে থাকা পুলিশকর্মীদের মারধর করা হয়। পুলিশের গাড়িতে থাকা এক সিভিক ভলেন্টিয়ার এই ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন বলে খবর। তাঁকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে।
ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গভীর আঘাত রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, এই ঘটনার পরেই আসানসোল উত্তর থানা থেকে প্রচুর পরিমাণে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কিন্তু গ্রামবাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়তে থাকে। গ্রামবাসীদের ইটের ঘায়ে পুলিশের অন্ততপক্ষে চার থেকে পাঁচটি গাড়ির কাচ ভেঙেছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনার পরেই নামানো হয় কমবাট ফোর্স, প্রচুর পরিমাণে পুলিশ বাহিনী গিয়ে ওই এলাকা ঘিরে ফেলে। যদিও রাত পর্যন্ত গ্রামের বাইরেই ছিল পুলিশ। ঘটনাস্থলে যান আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারের ডিসি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস, এসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ নস্কর-সহ আসানসোল উত্তর এবং দক্ষিণ থানার পুলিশ আধিকারিকরা।
কিন্তু কি কারণে এই জনরোষ তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। স্থানীয় কাউন্সিলর উৎপল সিংহের দাবি, "এলাকায় ছেলে ধরা গুজব ছড়িয়ে ছিল। সেই গুজব শুনেই পুলিশ গিয়েছিল ঘটনাস্থলে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেই গ্রামবাসী ভুল-বোঝাবুঝির কারনে পুলিশের গাড়ির উপর আক্রমণ করে।" যদিও ছেলে ধরার গুজব মানতে রাজি নন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি সেন্ট্রাল ধ্রুব দাস। তিনি বলেন, "রাত ন'টা নাগাদ এলাকায় কোনও বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়েছিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু গ্রামবাসীরা পুলিশের উপর আক্রমণ করে। আমাদের এক সিভিক ভলান্টিয়ার গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে।"
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল চাপা উত্তেজনা রয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও গ্রামের ভেতর প্রবেশ করেনি। পুলিশ গ্রামের বাইরে দাঁড়িয়েই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। এখনও পর্যন্ত পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি সেন্ট্রাল ধ্রুব দাস জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটলো তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘটনার সময়ের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। যারা পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় যুক্ত। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।