পুরুলিয়া, 19 মে: "তৃণমূল সরকার এবার সব সহ্যের সীমা পার করে গিয়েছে ৷ আজ বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসীদের খোলাখুলি ধমকাচ্ছেন।" এভাবেই তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ন্যাসীদের একাংশের রাজনীতিতে অংশ নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ৷ তাঁর সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রবিবার পুরুলিয়ার প্রচারমঞ্চ থেকে পালটা জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী ৷ এই সভা থেকে তিনি কংগ্রেস ও তৃণমূলকে একে অপরের সহযোগী বলে আক্রমণ করেন ৷ 'ইন্ডিয়া' জোট ভোটব্যাঙ্ককে খুশি রাখতে সিএএ-র বিরোধিতা করছে বলে উল্লেখ করেন ৷
গতকাল গোঘাটের প্রচারসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসীদের একাংশের রাজনীতিতে অংশ নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করেন ৷ এই মঞ্চ থেকে তিনি সন্ন্যাসীদের নামও উল্লেখ করেন ৷ দু:সময়ে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন ও ইসকনের পাশে ছিলেন, সেকথাও মনে করিয়ে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ তিনি জানান, রামকৃষ্ণ মিশন ভোট দেয় না ৷
এরপর আজ পুরুলিয়ার মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তৃণমূল সরকারকে হিংসা ছড়ানো এবং ভয় দেখানোর জন্য দায়ী করেন ৷ তিনি বলেন, "ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ তাদের সেবা ও সদাচারের জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত ৷ তারা বিশ্বে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছে ৷ কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খোলা মঞ্চ থেকে তাদের হুমকি দিচ্ছেন ৷"
কেন বাংলার সরকার এভাবে সাধু-সন্ন্যাসীদের আক্রমণ করল ? তা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এই সন্ন্যাসীদের একমাত্র লক্ষ্য মানুষের সেবা করা ৷ এদিকে বাংলার সরকার তাঁদের দিকেই আঙুল তুলছে ৷ সন্ন্যাসীদের নাম করে ধমকাচ্ছে ৷" কোনও সম্প্রদায়ের নাম উচ্চারণ না-করে প্রধানমন্ত্রী মোদি আরও বলেন, "শুধুমাত্র তাদের ভোটব্যাঙ্ককে খুশি রাখতে এত সাহস দেখাচ্ছে তৃণমূল সরকার ৷ তারা এতটাই নীচে নেমে গিয়েছে ৷"
- 18 মে হুগলির আরামবাগে গোঘাটের সভা থেকে ঠিক কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ?
"সব সাধু সমান হয় না, সব স্বজন সমান হয় না ৷ বহরমপুরের একজন মহারাজ আছেন ৷ আমি শুনছি অনেকদিন ধরে ৷ কার্তিক মহারাজ। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম ৷ কিন্তু যে লোকটা বলে আমি তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্টকে বসতে দেব না, সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না ৷ তার কারণ তিনি সরাসরি রাজনীতি করে দেশটার সর্বনাশ করছেন ৷
আসানসোলে রামকৃষ্ণ মিশন আছে ৷ সিপিএম যখন খাবার বন্ধ করে দিয়েছিল তখন আমি তাদের পাশে ছিলাম ৷ সিপিএম কিন্তু আপনাদের কাজ পর্যন্ত করতে দিত না ৷ ইসকনকে 700 একর জমি দিয়েছি ৷ দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে ৷ রামকৃষ্ণ মিশনকে সবাই শ্রদ্ধা করে ৷ রামকৃষ্ণ মিশন ভোট দেয় না ৷ এটা আমি জানি ৷ কেউ কেউ লঙ্ঘন করছে ৷" কলকাতার সিমলা স্ট্রিটে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভিটে উদ্ধার করার কৃতিত্বও দাবি করেন মমতা ৷
তৃণমূল সুপ্রিমোর এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, "এই সরকার বাংলার সংস্কৃতিকে সম্মান দেয় না ৷ এই সরকারকে নিজের মূল্যবান ভোট না দিয়ে এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে তারা আমাদের সাধু-সন্ত-মহন্ত-মহাপুরুষদের অপমান না করতে পারে ৷"
এদিন প্রধানমন্ত্রী পুরুলিয়ার বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর হয়ে প্রচার করতে আসেন ৷ বক্তৃতার শুরুতেই তিনি 'ইন্ডিয়া' জোটকে কড়া আক্রমণ করে বলেন, "'ইন্ডিয়া' জোট তাদের ভোট ব্যাঙ্ককে খুশি রাখতে সিএএ-র বিরোধিতা করছে ৷ তৃণমূল ও তার সঙ্গীরা আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির সংরক্ষণ ছিনিয়ে নিতে চায় ৷ 'ইন্ডিয়া' জোট ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ করতে চায় ৷"
সন্দেশখালির পরিস্থিতিও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ৷ তিনি সাফ বলেন, "নিজের শাহাজাহানকে বাঁচাতে তৃণমূলের লোকজন সন্দেশখালির মা-বোনেদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ৷" পুরুলিয়াতে জল সমস্যার অন্যতম কারণ তৃণমূল সরকার, অভিযোগ করেন মোদি ৷ উত্তর প্রদেশে প্রতিদিন 30 হাজার বাড়িতে জলের সংযোগের কাজ হয় ৷ কিন্তু পুরুলিয়াতে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না ৷ এর জন্য দায়ী তৃণমূল সরকার ৷ তারাই কাজ করতে দিচ্ছে না বলে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷
আরও পড়ুন: