মালদা, 15 অক্টোবর: শ-ছয়েক বাড়ি ছিল গোটা গ্রামে ৷ তার মধ্যে শতাধিক বাড়ি ইতিমধ্যেই গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে ৷ তাই নদীর গর্ভে মিলিয়ে যাওয়ার আগে নিজেদের আশ্রয়স্থল ভেঙে ফেলছে আড়াইশোরও বেশি পরিবার ৷ বাকি যাঁরা আছেন, তাঁরাও সরে যাওয়ার প্রহর গুনছেন ৷ এই পরিস্থিতিতে ভাঙন রোধের নামে ঠিকাদারদের পকেট না-ভরিয়ে, পুনর্বাসনের দাবি তুলছেন দুর্গতরা ৷
উৎসবের আমেজ এবার স্পর্শ করেনি মানিকচকের কামালতিপুরের মানুষজনকে ৷ পুজোর মরশুমেই তাঁরা দেখেছেন, বিঘার পর বিঘা জমি তলিয়ে গিয়েছে গঙ্গায় ৷ গোটা এলাকার গর্ব এই গ্রামের জামে মসজিদ ৷ যে কোনও মুহূর্তে সেটাও নদীতে চলে যাবে ৷ ছুটি থাকায় প্রশাসনের কাউকে এই কঠিন সময়ে পাচ্ছেন না গ্রামবাসীরা ৷ সেচ দফতরের তরফে ভাঙন রোধে কিছু কাজ হচ্ছে বটে ৷ তবে, সেখানেও শুধু ঠিকাদারদের মুনাফা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৷
আর এসব দেখে কেন্দ্রের নীরবতাও মেনে নিতে পারছেন না ভাঙন দুর্গতরা ৷ সব মিলিয়ে গঙ্গার সঙ্গেই ফুঁসছে কামালতিপুরের মানুষজন ৷ যে কোনও মুহূর্তে সেই ক্ষোভের বারুদের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে ৷ আর তার ফল কী হবে, তা ভাঙন দুর্গতরাও হয় তো জানেন না !
চলতি বছরে গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়েছিল রতুয়া 1 নম্বর ব্লকে ৷ মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশকিছু এলাকা গ্রাস করে, গঙ্গা নদীর নজরে এবার মানিকচক ব্লক ৷ বেশ কিছুদিন ধরেই গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কামালতিপুরে ভাঙন চলছে ৷ সেই ভাঙন মাত্রা ছাড়িয়েছে দিন ছয়েক ধরে ৷ প্রতিদিন গ্রামের ভিতরে সিঁধিয়ে আসছে গঙ্গা ৷ নদীর জলস্তর যত দ্রুতগতিতে কমবে, ততই ভয়াবহ হবে ভাঙন ৷ সেটা ভালোই জানেন নদীপাড়ের মানুষরা ৷
তাই এই মুহূর্তে নিজেদের আশ্রয় অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে ব্যস্ত অধিকাংশ ৷ কিন্তু কোথায় যাবেন ? নতুন ঘর করার মতো জায়গাও অধিকাংশের কাছে নেই ৷ তাই তাঁরা এখন পুনর্বাসনের দাবিতে সরব হয়েছেন ৷ তাঁদের বক্তব্য, সরকারের আর ভাঙন রোধের কাজ করার প্রয়োজন নেই ৷ বরং, তাঁদের পুনর্বাসনের জায়গা দিক ৷
ভাঙন বিধ্বস্ত এই গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ রিয়াজুদ্দিন জানাচ্ছেন, "ভাঙন রোধের কাজ নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য যেন দড়ি টানাটানি খেলছে ৷ চোখের সামনে আমার স্থাবর, অস্থাবর, সব সম্পত্তি গঙ্গায় চলে গেল ৷ আরও অনেকের বাড়ি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে ৷ যে কোনও সময় গ্রামের জামে মসজিদটাও গঙ্গায় চলে যাবে ৷ সব নিয়ে উৎসবের মরশুমেও আমাদের চোখে ঘুম নেই ৷ সবসময় একটাই চিন্তা, কখন গোটা গ্রামকে গঙ্গা গিলে খায় ৷ আর কেউ নদীর ধারে থাকতে চাইছে না ৷ আমিও চাই না ৷"
ক্ষোভের সঙ্গেই জানালেন, "ভাঙন রোধের কাজও চাই না ৷ ওতে শুধু ঠিকাদারের পকেট ভরে, আর কিছু হয় না ৷ ঠিকাদারকে মুনাফা পাইয়ে দিতেই বালির বস্তা ফেলে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ বস্তায় সঠিক পরিমাণে বালিও ভরা হচ্ছে না ৷ তাই সরকারের তরফে আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলেই আমাদের ভালো হবে ৷"
মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শেখ সাকিরুদ্দিন জানাচ্ছেন, "গোপালপুর এলাকার সাত হাজার দুর্গত পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়াই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় কাজ ৷ কামালতিপুর থেকে বালুটোলা পর্যন্ত এলাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ী কাজেরও প্রয়োজন ৷ এসব নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্যসচিব মণীশ জৈনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে ৷ তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন ৷ পুজোর মিটলে ফের তাঁর সঙ্গে কথা বলা হবে ৷"