রামপুরহাট, 26 ডিসেম্বর: ভুল অস্ত্রোপচারে স্ত্রীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলে দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানালেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী। অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় ওই চিকিৎসক বিধায়ক অস্ত্রোপচার করার ফলেই মৃত্যু হয়েছে পঞ্চায়েত সদস্যার। অবিলম্বে ওই বিধায়কের চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি নার্সিংহোমের পরিকাঠামো, এবং কর্মীদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী তারাময় মুখোপাধ্যায়।
ঘটনাটি ঠিক কী?
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত গৃহবধূর নাম সুজাতা মুখোপাধ্যায় (43)। বাড়ি বীরভূমের তারাপীঠে। তিনি সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা ছিলেন। তাঁর স্বামী তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি। তাঁর স্ত্রী একমাসের অন্তঃসত্ত্বা হন। কিন্তু দুই সন্তানের মা হওয়ায় তৃতীয় সন্তান নিতে চাননি সুজাতা। তাই রামপুরহাটের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তথা হাঁসন কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূলের অশোক চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এ ব্যাপারে যান।
মৃত্যুর অভিযোগ
চিকিৎসকের পরামর্শে গত শনিবার সকালে বিধায়কের 'আশা' নার্সিংহোমে স্ত্রীকে ভর্তি করান তারাময় মুখোপাধ্যায়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ভ্রূণ নষ্ট করেন চিকিৎসক অশোক চট্টোপাধ্যায়। অস্ত্রোপচারের পরেই সুজাতার মৃত্যু হয়। অভিযোগ, অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসক নিজেই নার্সিংহোমে পুলিশ ডাকেন। এরপর নার্সিংহোমের পিছন দরজা দিয়ে দেহ নিয়ে যেতে বাধ্য করেন। এমনকী ময়নাতদন্তও করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি কী বলছেন?
- তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, "চিকিৎসক মদ্যপ অবস্থায় অস্ত্রোপচার করেছিলেন। তার ফলেই ভুল চিকিৎসায় স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। স্ত্রীর মৃত্যুর পরও হাসপাতালের এক মহিলাকর্মী আমার কাছ থেকে 10 হাজার টাকা নিয়ে যায়। শুধু আমার স্ত্রী নয়, ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রোগী মৃত্যুর একাধিক অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ সময় মস্তান দিয়ে মৃতদের পরিবারকে ভয় দেখিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করেন।"
- তিনি আরও বলেন, "আমরা ওই চিকিৎসক তথা বিধায়ককে বয়কট করছি। তার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি জেলাশাসক, মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক, মহকুমা শাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। আমরা চাই ওই নার্সিংহোমের পরিকাঠামো তদন্ত করে দেখা হোক। যে সব কর্মীরা কাজ করছেন তাদের যোগ্যতাও পরীক্ষা করা হোক।" এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার তারাপীঠ মন্দিরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন সেবাইতরা। তাঁদের দাবি অবিলম্বে চিকিৎসককে শাস্তি দিতে হবে।
পালটা অভিযুক্ত চিকিৎসক ও তৃণমূল বিধায়কের অভিযোগ
এদিকে চিকিৎসক অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ছোট্ট একটা অস্ত্রোপচার। কিন্তু রোগী নিতে পারেননি। ফলে বারবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি।" তবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। মদ্যপ অবস্থায় চিকিৎসা করার অভিযোগ উড়িয়ে অশোকবাবু বলেন, "যিনি বলছেন তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন তো ?"