বসিরহাট, 9 অক্টোবর: চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে বুধবার ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল উত্তর 24 পরগনার বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে । মৃতের নাম সুজিত সর্দার । ঘটনার পর পুলিশের সামনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের পরিবারের লোকজন । চলে, জোর করে হাসপাতালের ভিতরে ঢোকার চেষ্টাও ।
তবে, পুলিশের বাধায় তা সম্ভব হয়নি । শেষে, পুলিশের সঙ্গে তীব্র বচসায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা । এরপর, কোনোরকমে তাঁদের বুঝিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেয় পুলিশ । যদিও এনিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও না মিললেও চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ অবশ্য মানতে চায়নি তারা, এমনটাই খবর হাসপাতাল সূত্রে ।
বছর 30-র ওই যুবকের বাড়ি বসিরহাটের উত্তর বাগুন্ডী গ্রামে । পেশায় তিনি একজন সবজি ব্যবসায়ী । বুধবার গভীর রাতে তাঁর পেটে ও বুকে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয় । যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখে শেষে ভোররাতে তাঁকে নিয়ে বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ছোটেন পরিবারের লোকজন ।
অভিযোগ, সেখানে যাওয়ার পর জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর হাতে দু’টি ইনজেকশন দিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন রোগীকে । পরিবারের দাবি, ‘‘রোগীকে ভর্তি করিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও ভর্তি করে নেননি ওই চিকিৎসক । বদলে ইনজেকশন এবং কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে বলেন, এতেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবেন ।’’
চিকিৎসকের কথায় ভরসা করে যুবককে বাড়িতে নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন । কিন্তু, ভোরবেলায় ফের বুকে যন্ত্রণা হতে শুরু করে রোগীর । দেরি না করে ফের বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে । সেই সময় তাঁকে ভর্তি করে নেওয়া হলেও এর কিছুক্ষণ বাদেই রোগীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ।
এরপরই চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবারের লোকজন । পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকায় হাসপাতালের আউটপোস্ট থেকে তড়িঘড়ি ছুটে আসেন পুলিশ কর্মীরা । পুলিশের সামনেও কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা । কোনোরকমে পরিস্থিতির সামাল দেয় পুলিশ । তবে, এখনও হাসপাতাল চত্বরে চাপা উত্তেজনা থাকায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ বাহিনী ।
মৃত যুবকের দাদা বাপ্পা সর্দার বলেন, "বারবার অনুরোধ করেছি ডাক্তারকে, ভাইয়ের চিকিৎসা শুরু করুন । পরে সমস্ত সই-সাবদ হবে ! কিন্তু, তাতেও ঘুম ভাঙেনি । যে দুটো ইনজেকশন লিখেছে, সেটাও হাসপাতালে নেই । বাইরে নায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে কিনে দিয়েছি । এই তো অবস্থা । ওরা ডাক্তার না, কসাই । চিকিৎসার গাফিলতির কারণেই মৃত্যু হয়েছে আমার ভাইয়ের । আমরা ওই ডাক্তারের শাস্তি চাই ।"
একই সুর শোনা গিয়েছে মৃত যুবকের আত্মীয় বাপি সর্দারের গলাতেও । তাঁর কথায়, "প্রথমে কেন ভর্তি নেওয়া হল না হাসপাতালে ? সেই সময় যদি ভর্তি নেওয়া হতো, তাহলে রোগী বেঁচে যেতে পারত । পরে, যখন নিয়ে যাওয়া হল, তখন সবকিছু শেষ ! এর বিহিত চাই আমরা ।"