সোদপুর, 15 অক্টোবর: প্রথম থেকেই পুলিশকে ব্যবহার করে মুখ্যমন্ত্রী অন্যায় কাজ করে গিয়েছেন। দ্রোহের কার্নিভালের বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভের সুরে একথাই বললেন আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মা ৷
মঙ্গলবার এক অভূতপূর্ব প্রতিবাদের সাক্ষী রইল শহর কলকাতা ৷ একদিকে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কার্নিভালের অনুষ্ঠান হল ৷ অন্যদিকে, সেই সময়েই দ্রোহ কার্নিভালে নামল নাগরিক সমাজ ৷
এদিন দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টে দ্রোহের কার্নিভাল ইস্যুতে জোর ধাক্কা খেয়েছে পুলিশ ৷ এরপরই রাস্তায় থেকে উঠেছে ব্যারিকেড, খুলেছে শিকল ৷ এই প্রসঙ্গে আরজি করের পড়ুয়া চিকিৎসকের বাবা বলেন, "আমার মেয়ে যেদিন মারা গেল, সেদিনই দেখেছি পুলিশের ভূমিকা কী ! তার আগে জানতাম না, পুলিশ সাধারণ মানুষের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ করে থাকে ৷ সেটা এখন আরও স্পষ্ট হচ্ছে । পুলিশ এই ক'দিনে যা যা পদক্ষেপ নিয়েছে তার জন্য পরবর্তীতে হাইকোর্টে গিয়ে থাপ্পড় খেতে হচ্ছে তাঁদর । আজকেও তারা থাপ্পড় খেল হাইকোর্টে ।"
আরজি করে নির্যাতিতা চিকিৎসকের মায়ের কথায়, "রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আজ যে দ্রোহের কার্নিভাল হচ্ছে, সেটা মানুষের নৈতিক জয় ৷ মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের এই কর্মসূচি বন্ধ করতে চেয়েছিলেন ৷" পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, "এই পুলিশই আমার মেয়ের মৃত্যুর যাবতীয় তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে সহযোগিতা করেছে ৷ আজকে তারা হাইকোর্টে ধাক্কা খেয়েছে ৷"
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি করের পড়ুয়া চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার ষষ্ঠতম শুনানি ছিল ৷ এই শুনানিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ রাজ্যে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ৷ হাসপাতাল ও থানায় সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন ৷
শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশ প্রসঙ্গে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা বলেন, "সিবিআই-এর প্রথম চার্জশিট জমা পড়েছে। তাতে সিভিক ভলান্টিয়ারকেই অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে ৷ তাই সুপ্রিম কোর্ট সঠিক পদক্ষেপ করেছে ৷" সুপ্রিম কোর্টের চার্জশিট নিয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, "সিবিআই নিশ্চয় পরবর্তী সময়ে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেবে কোর্টে ৷ সিবিআইকে সময় দিতেই হবে ৷ কারণ, আমাদের চোখের সামনেই তো সমস্ত তথ্য প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে ৷ ডিজিটাল তথ্য প্রমাণ জোগাড় করতে সময় লাগে ৷ ওরা সেকথা বারবার বলেছে ৷ সিবিআইয়ের উপর আমাদের ভরসা রয়েছে ৷"
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ তদন্ত প্রসঙ্গে নির্যাতিতা চিকিৎসকের মায়ের বক্তব্য, "সুপ্রিম কোর্টে আজ স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই ৷ আরও তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করে থাকতে হবে আমাদের ৷ তাছাড়া, আমার মেয়ের মৃত্যুর তথ্য প্রমাণ তো লোপাট হয়েছে আমাদের বসিয়ে রেখেই ৷"
এদিকে, রাজ্য সরকারের পুজো কার্নিভাল নিয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা বলেন, "আজকে তিনি (মুখ্যমন্ত্রী) পুজো কার্নিভাল না করলেই ভালো করতেন ৷ ডাক্তারি পড়ুয়ারা অনশন করছেন ৷ তাঁদের সঙ্গে বসে একটা বোঝাপড়া কেন তিনি করছেন না ? ছাত্ররা তো অন্যায় আন্দোলন করেননি ৷ আমাদেরও দুঃখ দিচ্ছেন ৷ তাঁরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন ৷ না খেয়ে ক'দিন থাকতে পারবেন ৷ ছাত্ররা যেন চরম সিদ্ধান্ত না নেন ৷ রিলে করে অনশন করুক ৷"