সোদপুর, 9 অক্টোবর: আজ 'অভিশপ্ত' 9 তারিখ ! আজ থেকে দু'মাস আগে এই দিনেই মেয়ের মৃত্যুর খবর নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা পরিবারকে । সেদিনের ফোনে এক লহমায় ওলোট-পালট হয়ে গিয়েছে তাঁদের জীবন । তাই 'অভিশপ্ত' 9 তারিখ আর চায় না নির্যাতিতার পরিবার ৷ বদলে অসুর নিধনের ডাক দিয়ে সুস্থ সমাজ গড়ার বার্তা দিয়েছেন নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার মা ।
মহাষষ্ঠীতে নির্যাতিতার মায়ের আকুল আর্তি, "এই 9 তারিখ যেন কারও জীবনে ফিরে না আসে । এই দিনে আমাদের জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছিল । আমার 'দুর্গা' আজ নেই । কিন্তু আর কোনও 'দুর্গা'র সঙ্গে যাতে এই অঘটন না ঘটে, তার জন্য প্রত্যেক মায়ের কাছে আমার আবেদন, আজ রাত ন'টায় প্রত্যেক মায়েরা যেন তাঁর সন্তানের মঙ্গল কামনায় 9টা প্রদীপ জ্বালিয়ে মঙ্গল আরধনা করেন ।"
নির্যাতিতার মায়ের কথায়, "অভিশপ্ত 9 তারিখ যেন পৃথিবীতে আর না আসে । এই 9 তারিখে আমাদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা যেন কারও সঙ্গে না ঘটে । পুজো তো আর বাড়িতে হবে না । তাই মেয়ের স্মরণে প্রদীপ জ্বালিয়ে ধরনা অবস্থানে বসেছি । মায়ের কাছে একটাই প্রার্থনা, সমস্ত অন্ধকার ঘুচিয়ে আলোর দিশা দেখাও ৷ অসুর নিধন করে সুন্দর একটা পৃথিবী গড়ে তোল মা ।"
বাড়িতে পুজোর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ধরনা মঞ্চে চোখ ছলছল করে ওঠে নির্যাতিতা ছাত্রীর মায়ের । এই বিষয়ে তিনি বলেন, "এই দিনে ধুমধাম করে মহাষষ্ঠীর পুজো হত বাড়িতে । পুজোর জন্য আলাদা ঠাকুরমশাই আসতেন আরামবাগের গ্রাম থেকে । সকালে এবং বিকেলে । দু'বেলাতেই পুজোর চরম ব্যস্ততা থাকত পরিবারে । আমি, আমার মেয়ে ও পরিবারের বাকি সদস্যরা, সকলেই সারাদিন উপোস করে থাকতাম । আজও আমি উপোস করে রয়েছি । তবে, তা পুজোর জন্য নয় । আমার অসংখ্য প্রতিবাদী ছেলেমেয়েদের জন্য । যাঁরা অনশন করে বসে আছেন রাস্তায় । আমার দুর্গা অকালে বিসর্জন হয়ে গিয়েছে । এক মেয়েকে হারিয়েছি ঠিকই । কিন্তু, হাজার হাজার সন্তান পাশে রয়েছে আমাদের ।"
কী কারণে পুজোর আবহে বাড়ির সামনে মঞ্চ তৈরি করে ধরনা-অবস্থানে বসতে হল ? এই প্রশ্নের উত্তরে নিহত চিকিৎসক ছাত্রীর মা বলেন, "বুকে অনেক যন্ত্রণা এবং কষ্ট নিয়েই ধরনায় বসতে হয়েছে । আলোর দিশা দেখাতেই এই পদক্ষেপ করেছি আমরা ।"
এদিকে, স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা বলেন, "আমাদের বাড়ির দুর্গা আজ নেই । এই সময় বাড়িতে দুর্গা পুজোর সময় সকলে মিলে আনন্দ করতাম । সেই আনন্দ দূরে সরিয়ে রেখে এখানে বসেছি সকলের সঙ্গে দেখা করার জন্য । অভিশপ্ত 9 তারিখের ঘটনা আমাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে । স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি এরকম একটা অভিশপ্ত দিন আমাদের জীবনে আসবে । এই সময়ে বাড়ির পুজোয় আনন্দ করার কথা । কিন্তু, মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে ধরনায় বসতে হচ্ছে আমাদের ।"
অন্যদিকে, মহাষষ্ঠীর দুপুরে সোদপুরের নাটাগড়ে ধরনা মঞ্চে গিয়ে নিহত চিকিৎসকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-সহ সংগঠনের অন্যান্য নেতারা । এদিন নির্যাতিতার মায়ের সঙ্গে একান্তে কথা বলতেও দেখা যায় মীনাক্ষীকে । পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নির্যাতিতার পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দেন তিনি ।