কলকাতা, 9 সেপ্টেম্বর: আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ এ প্রসঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মন্তব্য, আদালতে নির্দেশে কাজে যোগ দিলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া উচিত জুনিয়র ডাক্তারদের ৷
আজ সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকেই ছিল সারা দেশের মানুষের নজর । সেই শুনানিতে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ আগামিকাল বিকেল পাঁচটার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের ৷ নইলে ভবিষ্যতে তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হতে পারে, আর সেক্ষেত্রে রাজ্যকে বাধা দেবে না সুপ্রিম কোর্ট । এই নির্দেশিকায় জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে কিছুটা হতাশা দেখা গিয়েছে ৷ তাঁদের প্রশ্ন, সুরক্ষা না-পেলে, সুবিচার না-হলে তাঁরা কীভাবে কাজের যোগ দেবেন ?
শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের বিষয়ে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন যে, "মানবিকতার দিক থেকে চিকিৎসা তো বন্ধ রাখা যায় না । যাতে চিকিৎসা পরিষেবা দ্রুত শুরু হয় সেই আবেদন বিজেপির পক্ষ থেকেও করা হয়েছে । কিন্তু তার পাশাপাশি চিকিৎসকের দাবিগুলো পূরণ করা এবং তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সুনিশ্চিত করতে হবে । যাতে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা আর না-ঘটে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে । এর আগেও, চিকিৎসকরা ধরনা ও ধর্মঘট করেছেন ৷ কিন্তু তাঁরা কাজে থেকেছেন এবং পরিষেবা দিয়েছেন । কিন্তু এবার যে ঘটনা ঘটেছে তা খুবই জঘন্য এবং নিন্দনীয় । তাই কাজে ফিরলেও তাঁদের আন্দোলন জারি রাখা উচিত ।"
অন্যদিকে, বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন যে, "এতে আন্দোলনের ধার কমবে না ৷ সুপ্রিম কোর্টের যেটা আদেশ তার তো অবমাননা করা যায় না ৷ তবে আন্দোলন আন্দোলনের মতোই চলবে । আর শুধু জুনিয়ার চিকিৎসকরাই নন, সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ আন্দোলন করছেন । গতকাল স্কুল কলেজের প্রাক্তনীরাও আন্দোলন করলেন এবং চিকিৎসকদের আহ্বানে সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ এই আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন ৷ অতএব জুনিয়র চিকিৎসকরা যদি কাজেও ফেরেন, তাহলেও আন্দোলন চালিয়ে যেতে তো কোনও অসুবিধা নেই । তাই প্রতিবাদ যেমন চলছে তেমনই চলবে ।"
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায় বলেন, "আজ সুপ্রিম কোর্ট যে অবজারভেশন দিয়েছে তার উপরে বলার কিছু নেই ৷ তবুও জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছে আবেদন, তাঁরা পুরো বিষয়টিকে বিবেচনা করে পরিষেবা শুরু করতে পারেন তবে পরিষেবার পাশাপাশি আন্দোলনও চলুক । মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকে ভয় পেয়েছেন, তাই তিনি আন্দোলনকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে উৎসবে ফিরে যেতে বলছেন । বাংলায় তথা বাংলার বাইরে সবার মধ্যেই কন্যাহারার শোক । তাই মুখ্যমন্ত্রীকে একটাই কথা বলার যে, তিনি তাঁর তৃণমূল পরিবারকে নিয়ে উৎসবে ফিরে যান । বাংলার মানুষের উৎসবে মন নেই ।"
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সিপিআইএম নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্য়ায়ও ৷ মুখ্য়মন্ত্রীর উৎসবে ফেরার আহ্বানকে তীব্র কটাক্ষ করে তিনি এদিন বলেন, "উনি তো উৎসবে ফিরতে বলছেন, তাঁর তো শবের উপরে দাঁড়িয়ে উৎসব করার স্বভাব আছে ৷ আমরা বলছি, উৎসব হবে ৷ প্রতিবাদের, লড়াইয়ের, আন্দোলনের, বিক্ষোভের উৎসব হবে ৷ যতক্ষণ না আসল মাথা ধরা পড়বে, ততক্ষণ বিক্ষোভ চলবে ৷ আর ডাক্তারবাবুরাও আন্দোলন করছেন ৷ তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন কী করবেন ৷ আদালতের নির্দেশের বিষয়ে কিছু বলব না ৷ তবে আন্দোলন স্তিমিত করা যাবে না ৷ এই বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার জন্য রাজ্য সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছে ৷"
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের শুনানি শেষ হওয়ার পরই আজ নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আগে কাজে যোগ দিন । দাবিদাওয়া পরে হবে ৷ পুজোতে ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন ৷"