মালদা, 12 নভেম্বর: আবাস দুর্নীতির ছায়া মালদায় ৷ আবাসের তালিকায় মালদার তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের একজনেরও নাম নেই ৷ মানিকচকের দক্ষিণ চণ্ডিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি বুথেও একই ছবি ৷ এই ঘটনায় শুধু পঞ্চায়েত নয়, প্রশ্ন উঠেছে ব্লক প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও ৷ এই ঘটনায় ক্ষোভে সরব বিজেপি ৷ যদিও বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন ৷
বাংলা আবাস যোজনার তালিকায় দেখা যাচ্ছে, পুরাতন মালদার মহিষবাথানি, মুচিয়া ও সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কারও নাম নেই ৷ এই ব্লকে মোট ছ'টি গ্রাম পঞ্চায়েত ৷ বাকি তিনটি পঞ্চায়েত মঙ্গলবাড়ি, ভাবুক ও যাত্রাডাঙা এলাকার কিছু মানুষের নাম আবাসের তালিকায় থাকলেও তা নেহাতই হাতে গোনা ৷ তিনটি পঞ্চায়েত মিলিয়ে রয়েছে মাত্র 229টি নাম ৷
এই তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে গোটা ব্লক জুড়ে ৷ তাহলে কি এই ব্লকে বিজেপি শক্তিশালী হওয়ার জন্যই গরিব মানুষের নাম আবাসের তালিকায় নেই ? নাকি ব্লকে গরিব মানুষের সংখ্যা প্রকৃত অর্থেই কম ৷ অথচ আদিবাসী অধ্যুষিত এই ব্লকের গ্রামেগঞ্জে প্রচুর মানুষের পাকা ঘর নেই ৷ অনেকের ইটের দেওয়াল থাকলেও মাথার উপর পাকা ছাদ নেই ৷
সাহাপুর এলাকার সুরেশ মণ্ডল জানাচ্ছেন, "যাত্রাডাঙা, মহিষবাথানি আর ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আদিবাসী মানুষের বাস বেশি ৷ রয়েছেন সংখ্যালঘু মানুষজনও ৷ বাকি তিনটি পঞ্চায়েত তফশিলি জাতি অধ্যুষিত ৷ ব্লকের বড় সংখ্যক মানুষ পেশায় শ্রমিক ৷ অনেকেরই পাকা ঘর নেই ৷ আমার নিজেরই টিনের ভাঙাচোরা বাড়ি ৷ বৃষ্টি হলে ছাদের টিনের ফুটো দিয়ে ঘরে জল পড়ে ৷ অথচ সাহাপুর পঞ্চায়েত এলাকার একজনের নামও আবাসের তালিকায় নেই ৷ এটা কী করে হয় !"
মঙ্গলবাড়ি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা জাহিদা খাতুনের বক্তব্য, "আমাদের এলাকার যে ক’জনের নাম তালিকায় দেখা যাচ্ছে, তাঁরা সবাই তৃণমূলের সমর্থক ৷ এমনকি তৃণমূলের সক্রিয় এক কর্মীর নামও ওই তালিকায় দেখা যাচ্ছে ৷ অথচ যাঁরা সত্যিই গরিব, পাকা ঘর নেই, তাঁদের নাম তালিকায় নেই ৷ এখানে বিজেপির বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন ৷ লোকসভা ভোটেও বিজেপির ফল ভালো হয়েছিল ৷ সে কারণেই কি এই বঞ্চনা ?"
এনিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন পুরাতন মালদার বিধায়ক গোপালচন্দ্র সাহা ৷ তিনি জানান, "মানবিক এই প্রকল্প নিয়ে রাজনীতি করছে তৃণমূল ৷ আবাস প্রকল্পে ব্লকের ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেই অনেক গরিব মানুষের নাম দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু পরবর্তীতে সেসব নাম কেটে দেওয়া হয়েছে ৷ তৃণমূল এখানে জনসমর্থন হারিয়েছে ৷ তারা গরিব মানুষকে বঞ্চিত করে তারই বদলা নিচ্ছে ৷"
যদিও পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভানেত্রী তথা মহিলা তৃণমূল নেত্রী মৃণালিনী মণ্ডল মাইতির কথায়, "গরিব মানুষের কথা ভেবেই এই প্রকল্প চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এখানে কে কোন দল করেন তা দেখা হয় না ৷ তাছাড়া পুরাতন মালদার কয়েকটি পঞ্চায়েতে তো বিজেপিই রয়েছে ৷ তারা কেন গরিব মানুষের তালিকা তৈরি করে পাঠায়নি ? আসলে বিজেপির আসল চরিত্র মানুষ বুঝতে পেরেছে ৷ মানুষ আর তাদের পাশে নেই ৷ তাই তারা ভুল বকছে ৷"
এ প্রসঙ্গে পুরাতন মালদার বিডিও সেঁজুতি পাল মাইতি বলেন, "বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে ৷ আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি ৷ গোটা ঘটনা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে ৷"