নয়াদিল্লি, 13 এপ্রিল: পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালি কাণ্ডের প্রাথমিক তদন্তে 'মানবাধিকার লঙ্ঘন'-এর বেশ কয়েকটি উদাহরণ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সামনে উঠে এসেছে ৷ কমিশনের পর্যবেক্ষণ, এই ধরনের ঘটনা ঠেকানোর ক্ষেত্রে 'অবহেলা' করা হয়েছে । যে কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে ৷ সন্দেশখালিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বারবার উঠেছে । রাজ্যের বিরোধীদলগুলি থেকে শুরু করে সেখানকার নির্যাতিতারা বারবার এই ঘটনায় প্রশাসনিক 'মদত' বা 'গাফিলতি'র অভিযোগে সরব হয়েছেন ৷ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে এবার ওই অভিযোগগুলি মান্যতা পেল ৷
শনিবার তার বিবৃতিতে কমিশন বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে এবং রাজ্য সরকারের প্রতিটি সুপারিশে 8 সপ্তাহের মধ্যে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার রিপোর্ট (এটিআর) চেয়েছে । সন্দেশখালিকাণ্ডে গত 21 ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ নেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন । ওই এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেয় কমিশনের একটি দল । ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই মোট 12 দফা সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন । কমিশনের পর্যবেক্ষণ বলছে, সন্দেশখালি কাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে । কমিশনের এই রিপোর্ট প্রকারন্তরে সন্দেশখালিতে শাসকদলের মদতে হওয়া মানবাধিকার-বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগকেই মান্যতা দিল ৷
সন্দেশখালির ঘটনায় কমিশনের 12 দফা সুপারিশগুলির মধ্যে রয়েছে, ওই এলাকায় আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা, যৌন অপরাধের শিকার হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের কাউন্সেলিং এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, অপধারমূলক কাজের সাক্ষীদের উপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অভিযোগগুলির যথাযথ নিষ্পত্তি করা ।
কমিশনের পর্যবেক্ষণ বলছে, এই সন্ত্রাসের আবহ 'নিগ্রহের পরিস্থিতিকে স্থায়ী করা'র পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের এই বিষয়ে তাদের নিরবতা ভাঙার জন্য একটি নিরাপদ এবং সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার গুরুত্বের উপরেও জোর দেয় । কমিশনের এই প্যানেলের আরও একটি পর্যবেক্ষণ হল, এই ‘আতঙ্কের পরিবেশ’ ভুক্তভোগীদেরই প্রভাবিত করার পাশাপাশি এখানকার শিশুদের বিকাশ এবং স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে ।
এর জবাবে, 29 ফেব্রুয়ারি রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং ইনস্পেক্টর জেনারেলের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, মোট 25টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের অভিযোগে সাতটি মামলা দায়ের করা রয়েছে এবং 24 জন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় পলাতক আসামিদের গ্রেফতারেরও চেষ্টা চলছে । গোটা সন্দেশখালি থানা এলাকা ও ন্যাজাট থানা এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি ‘সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে’ বলেই জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে ।
কমিশনের পর্যবেক্ষণ বলছে, অভিযুক্তদের রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার ভয়ে অনেকেই অভিযোগ জানাতে পারেননি । জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে নবান্ন কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা নিয়ে আগামী 8 সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে ।
আরও পড়ুন: