কলকাতা, 10 ডিসেম্বর: কলকাতার অলিগলিতে ছড়িয়ে ঐতিহ্যশালী ভবন । বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জীর্ণ হয়ে ভগ্নদশা । কারণ আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল নন মালিকেরা । আর তার জেরেই ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বহু স্মৃতি । আইনি জটিলতায় হয় না নির্মাণ কাজও । এবার সেই সমস্যার অবসান হতে চলেছে ।
শহরের হেরিটেজ রক্ষায় আসছে নতুন আইন । রক্ষিত হবে হেরিটেজ ভবন, রক্ষিত হবে মালিকের স্বার্থ । আর্থিক লাভ হবে মালিকের । নতুন আইনে হেরিটেজ মালিকরা পেতে চলেছেন নির্মাণ কাজের অধিকার বিক্রির অনুমতি । যাকে বলা হয় ট্রান্সফারেবল ডেভলপমেন্ট রাইটস (টিডিআর)।
শহর কলকাতায় বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হেরিটেজ সম্পত্তি । সংখ্যাটা দু-একটি নয়, প্রায় 1400টি । যার মধ্যে গ্রেড-1 হেরিটেজ 717টি, গ্রেড-2এ 216টি, গ্রেড-2বি 119টি । একাধিক হেরিটেজ সম্পত্তির গ্রেড পাওয়া বাকি আছে দীর্ঘদিন । ইতিমধ্যেই লন্ডনের কায়দায় এই শহরেও ব্লু প্ল্যাক লাগানো শুরু হয়েছে গ্রেড-1 তালিকাভুক্ত হেরিটেজগুলিতে । ইতিমধ্যে 170টির বেশি এমন সম্পত্তিতে লাগানো হয়েছে এই ব্লু প্ল্যাক ।
বর্তমানে হেরিটেজ সম্পত্তি নিয়ে নানা জটিলতা লক্ষ্য করা যায় । প্রথমটি হল, এখন হেরিটেজ সম্পত্তির অধিকাংশ মালিকপক্ষই আর্থিক ভাবে অসচ্ছল । ফলে হেরিটেজ সম্পত্তি বয়সের ভারে জীর্ণ ও ভগ্ন হচ্ছে । তবে সেই সম্পত্তি ভেঙে নতুন নির্মাণ কাজ করার ক্ষেত্রেও আইন নেই । ফলে ভগ্নদশা হলেও কারও কিছু করার থাকছে না ।
হেরিটেজ সম্পত্তির ক্ষেত্রে কলকাতা পুরনিগম সম্পত্তি করে ছাড় দিয়ে থাকে । শর্ত থাকে, হেরিটেজ রক্ষা করার । কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, নামমাত্র সম্পত্তি কর আর রক্ষণাবেক্ষণে খরচ বিরাট । এই সমস্ত জটিলতার জেরে একের পর এক নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় পুরনো দিনের স্মৃতি সৌধ, ঐতিহ্য । তবে লন্ডনে হেরিটেজ রক্ষায় টিডিআর চালুর মধ্যে দিয়ে সুন্দর ভাবেই রক্ষিত হচ্ছে হেরিটেজ । এবার কলকাতা পুরনিগমও সেই পথে হাঁটার পরিকল্পনা নিয়েছে । কলকাতায় দ্রুত চালু হতে পারে টিডিআর পদ্ধতি ।
কী এই পদ্ধতি ?
ট্রান্সফারেবেল ডেভলপমেন্ট রাইটস বা টিডিআর । হেরিটেজ সম্পত্তি ভেঙে নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে । তবে টিডিআরের মাধ্যমে হেরিটেজ সম্পত্তির মালিক সমপরিমাণ জায়গার ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) পাবেন । অর্থাৎ কারও হেরিটেজ সম্পত্তি যদি 5000 বর্গ ফুট জায়গার হয়, তাহলে অতিরিক্ত 5000 বর্গফুট এফএআর পাবেন তিনি । অর্থাৎ 10 হাজার বর্গ ফুট । তিনি যদি মনে করেন, তাঁর অন্য কোথাও জমি আছে, তাহলে সেই পরিমাণ অতিরিক্ত এফএআর নির্মাণ কাজ করতে পারবেন ।
যদি হেরিটেজ মালিকের দ্বিতীয় কোনও জমি বা জায়গা না থাকে, তাহলে তিনি ওই এফএআর যে কোনও প্রোমোটারকে বিক্রি করতে পারবেন । তবে শর্ত হল, হেরিটেজ সম্পত্তি ওই টাকা দিয়ে আগে সংস্কার করতে হবে । এর ফলে হেরিটেজ সম্পত্তি সংস্কার রক্ষণাবেক্ষণ হল এবং অতিরিক্ত ফ্লোর এরিয়া রেশিও বিক্রি করে আর্থিক লাভও হল । এই নয়া নিয়ম কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেই নিয়েই চলছে জোর আলোচনা ।
কলকাতা পুরনিগমের এক আধিকারিক বলেন, এই নিয়ম ইতিমধ্যেই লন্ডনে চালু । ফলে সেখানে হেরিটেজ রক্ষা করতে আর্থিক বিষয়ে কোনও পক্ষের নাভিশ্বাস ওঠে না । বরং সেখানে হেরিটেজ ভবন থেকে আয়ের পথ খুঁজেছেন অনেকেই । এখানে এই নিয়ম চালুর একটি বড় অন্তরায় আছে । তাই নিয়মে কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে । সেটা হল, আর্থিক কারণের জেরে মালিক হেরিটেজ সংস্কার করতে পারেন না । শুধু এফএআর দিলেই যে সকলে সংস্কার করবে এমন নয় । অনেকে এর অপব্যবহারও করতে পারেন ।
লন্ডনে আগে সংস্কার করলে তবেই এই এফএআর মেলে । কিন্তু এখানে তো আর্থিক সমস্যা মালিকদের । তাই ঠিক করা হচ্ছে, যে পরিমাণ এফএআর হস্তান্তর করতে অনুমতি দেওয়া হবে সেটা কয়েক ধাপে দেওয়া হবে । অর্থাৎ প্রথম ধাপে এফএআর বিক্রি করে সেই টাকায় সংস্কার কাজ করলে ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে, তবেই বাকি এফএআর বিক্রির অনুমতি দেওয়া হবে । তাহলে হেরিটেজ রক্ষা হবে । মালিক এফএআর হস্তান্তর করে আর্থিক ভাবে লাভবানও হবেন ।