জলপাইগুড়ি, 26 জুলাই: কংগ্রেস কর্মী মানিক রায়কে পিটিয়ে খুনের ঘটনার গ্রামছাড়া প্রতিবেশীরা । অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করার জন্য কারওকে পেল না মানিকের পরিবার । অবশেষে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করল । মানিকের তছনছ হওয়া বাড়ি বানিয়ে দেবে কংগ্রেস । কংগ্রেস কর্মীকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় ইতিমধ্যেই পাঁচজন অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে । অধরা রয়েছেন অনেকেই । দুই সন্তানকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন মৃতের স্ত্রী স্বপ্না রায় ।
গোটা এলাকায় শ্মশানের স্তব্ধতা । আজ মানিক রায়ের বাড়িতে যান কংগ্রেস নেতারা ৷ অভিযোগ, ময়নাগুড়ির খাগড়াবাড়ির হঠাৎ কলোনির বাসিন্দা মানিক রায়ের সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশীদের গণ্ডগোল ছিল । পারিবারিক বিবাদকে নিয়ে মামলাও চলছিল । প্রতিনিয়ত একে অপরের বিরুদ্ধে চলত অভিযোগ ও পালটা অভিযোগ । কয়েক বছর আগে মানিকের বাড়িতে প্রতিবেশীরা চড়াও হয়ে বাড়ি ভাঙচুর করে ভিটেমাটি ছাড়া করে মানিকের পরিবারকে । মানিকের পরিবার তখন শিলিগুড়িতে ভাড়া বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করে ।
এরপর দীর্ঘ কয়েক বছর পর ফের মানিক তাঁর পরিবারকে নিয়ে গত 21 জুলাই ময়নাগুড়ির বসত ভিটেতে ফিরে আসেন । তারপর থেকে ফের তাঁকে হুমকি দেওয়া শুরু হয় বলে অভিযোগ । এরপর মানিক তাঁর প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা করে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হন ৷ ময়নাগুড়ির বিডিওকে লিখিত অভিযোগও করেছিলেন তিনি । এরপর গত 24 তারিখ রাতে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে গণপিটুনি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । খবর পেয়ে পুলিশ মানিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় ।
এই ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে । এরপর থেকেই বাড়িছাড়া প্রতিবেশীরা ৷ সব বাড়িতে তালা ঝুলছে । ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাঁশ, বাটাম-সহ অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করেছে । মানিকের বাড়িতে হামলাকারীরা বেশকিছু নথি লুট করার চেষ্টা করেছিল বলেও অভিযোগ ।
প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক নির্মল ঘোষ দস্তিদার বলেন, "মানিক আমাদের দীর্ঘদিনের কংগ্রেস কর্মী । তাঁকে এইভাবে মারা হবে ভাবতেই পারি না ।কংগ্রেস ওর পরিবারের পাশে সবসময় থাকবে । আমরা দোষীদের শাস্তি চাই । আমরা মানিকের ঘর তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করব । পরিবারের পাশে থাকব, বাচ্চাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করব । আমি বাড়ি থাকলাম না বলে আমার বাড়ি লুট হবে, এটা তো মানা যায় না ।"
মানিকের স্ত্রী স্বপ্না রায় বলেন, "আমি এখানে থাকতে পারব কি না জানি না । আমি দোষীদের যাবজ্জীবন জেল চাই । এখন সবাই পালিয়ে আছে ৷ এক দিন না একদিন তাদের পুলিশ ধরবেই ।"
এদিকে, জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার উমেশ খান্ডবাহালে জানান, "মানিকের অন্ত্যেষ্টি করার জন্য কেউ ছিল না । আশপাশের লোকেরা কেউ নেই ৷ তাই ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবলচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হয় । শুধু তাই নয়, আর্থিক সঙ্গতি না থাকার কারণে পুলিশ সমস্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করার ব্যবস্থা করেছে । আমরা বাকি দোষীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছি । এটা কোনও রাজনৈতিক ঘটনা নয় । শুধুমাত্র এলাকায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে পুর্বের ঝামেলা থেকে ঘটনাটি ঘটেছে ।"