রায়গঞ্জ, 15 এপ্রিল: দেশ স্বাধীন হয়েছে 77 বছর আগে ৷ সাড়ে সাত দশকের বেশি সময় কেটে গিয়েছে ৷ এখনও পর্যন্ত উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে জনসভা করতে আসেননি দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী ৷ আগামিকাল, মঙ্গলবার রায়গঞ্জবাসীর সেই অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে ৷ এই প্রথম সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সভা হতে চলেছে ৷ রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন দক্ষিণ গোয়ালপাড়া এলাকায় ওই জনসভা করবেন দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷
চলতি বছর মার্চের মাঝামাঝি লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার আগেই পশ্চিমবঙ্গে তিনটি সভা করে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ ভোট ঘোষণা হওয়ার পরও তিনি বেশ কয়েকটি সভা করেছেন ৷ তাঁর সবক’টি সভাই হয়েছে উত্তরবঙ্গে ৷ মঙ্গলবারও তাঁর কর্মসূচি রয়েছে উত্তরেই ৷ যার মধ্যে একটি জনসভা তিনি করবেন রায়গঞ্জে ৷ স্বাভাবিক এই জনসভা নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি ৷
রায়গঞ্জের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললেই সেই আগ্রহের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে ৷ গণেশ দাস নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, "আমরা খুব উৎসাহী, প্রধানমন্ত্রীকে সামনে থেকে দেখতে পাব । জন্মের পর থেকে এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রীকে রায়গঞ্জে থেকে দেখতে পাব ।" বাপ্পা সাহা নামে রায়গঞ্জের অন্য এক বাসিন্দা বলেন, "এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী রায়গঞ্জে সভা করবেন । অবশ্যই দেখতে যাব । আমরা সাধারণ মানুষ খুবই উৎসাহী ।"
প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী আসছেন, সেটা নিয়ে আগ্রহ যেমন আছে, তেমনই নরেন্দ্র মোদিকে প্রথমবার দেখতে পাওয়ার বিষয়টিও অনেককে মঙ্গলবার সভাস্থলে টেনে আনবে, সেটাও স্পষ্ট হয়েছে কয়েকজনের কথায় ৷ তাঁদেরই একজন রায়গঞ্জের বাসিন্দা তথা ছাত্রী সুস্মিতা দাস ৷ তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী রায়গঞ্জে আসছে, আমরা খুবই এক্সাইটেড । খুব ভালো লাগছে যে জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী রায়গঞ্জে আসবেন । রায়গঞ্জের উন্নয়ন হোক এটাই চাই ।"
2019 সালে রায়গঞ্জ আসনে প্রথমবার জয়ী হয় বিজেপি ৷ এবার সেই আসন ধরে রাখার লড়াই গেরুয়া শিবিরের ৷ গতবার জয়ী হয়েছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী ৷ তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও করা হয়েছিল ৷ কিন্তু তাঁকে নিয়ে ক্ষোভ ছিল স্থানীয়দের মনে ৷ সেই কারণেই সম্ভবত বিজেপি এবার এখানে প্রার্থী বদল করেছে ৷ এবার এই কেন্দ্রে পদ্ম-প্রার্থী কার্তিকচন্দ্র পাল ৷ তাঁর সমর্থনেই মঙ্গলবার সভা করবেন নরেন্দ্র মোদি ৷ সেই সভা নিয়ে মানুষের স্বতঃস্ফুর্ততা দেখে খুশি গেরুয়া শিবির ৷
বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার বলেন, "আগামিকাল লক্ষাধিক মানুষের জনসুনামি হবে । সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ, উদ্দীপনা কাজ করছে, তা কল্পনাতীত । আমাদের কর্মীরা বিভিন্ন বাজারে, দোকানে, প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর সভায় আসার নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহ লক্ষ্য করেছেন । আমরা চিন্তায় রয়েছি যে এত লোককে কোথায় জায়গা দেব ? তাই সাধারণ মানুষের যাতে কোনোরকম সমস্যা না হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর সভা যাতে সুষ্ঠভাবে হয়, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সমস্তটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।"
রায়গঞ্জ একসময় কংগ্রেসের গড় ছিল ৷ এখন অবশ্য সেখানে বিজেপি ও তৃণমূল কড়া টক্কর চলে ভোটের ময়দানে ৷ এবারও তাই চলছে ৷ যিনি তৃণমূলের প্রার্থী, সেই কৃষ্ণ কল্যাণী আবার 2021 সালে বিজেপির টিকিটে জিতে বিধায়ক হন ৷ ফলে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে তৃণমূল ও কংগ্রেসের সমালোচনা যে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য ৷ কিন্তু সেই সমালোচনাকে কার্যত উপেক্ষা করেই মঙ্গলবার গোয়ালপাড়ায় বিজেপির সভাস্থলে হাজির হতে চান কংগ্রেস ও তৃণমূলের অনেক সমর্থকই ৷ কারণ, রায়গঞ্জে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর সভা চাক্ষুষ করতে চান তাঁরা ৷
এমনই একজন কংগ্রেস কর্মী কৌশিক সরকার ৷ তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী তো কোনও দলের নয় ৷ প্রধানমন্ত্রী সবার । এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী রায়গঞ্জে আসছেন ৷ অবশ্যই ভালো । সাধুবাদ জানাই ।" রায়গঞ্জের বাসিন্দা তথা তৃণমূল সমর্থক রূপেশ সাহা বলেন, "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রায়গঞ্জে আসছে অবশ্যই ভালো । আমরাও দেখতে যাব । তবে এতদিন তার দলের সদস্য দেবশ্রী চৌধুরী ক্ষমতায় ছিলেন ৷ কিন্তু তেমন তো কোনও উন্নতি করতে পারেননি রায়গঞ্জের ।" তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল অবশ্য বলেন, "প্রধানমন্ত্রী তো প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে আসছেন ৷ তাই এ বিষয়ে তেমন কোনও মন্তব্য করব না ।"
তবে নরেন্দ্র মোদি দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি রায়গঞ্জে আসছেন ৷ এর আগে 1986 সালে দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার পথে শিলিগুড়ি মোড় এলাকায় সস্ত্রীক এসেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি । সেই সময়ও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে দেখার ব্যাপক উৎসাহ দেখা গিয়েছিল । এমনকি ওই এলাকার বিভিন্ন বাড়ি ও দোকানের ছাদে উঠে সাধারণ মানুষ ভিড় করেছিলেন । একটি ছাদ ভেঙে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন অনেকে । সেই সময় পথসভা করলেও জনসভা করেননি রাজীব ৷
সেই কারণেই নরেন্দ্র মোদিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি জনসভা করতে চলেছেন রায়গঞ্জে । আর সেই সভা নিয়ে একদিকে যেমন উৎসাহী সাধারণ মানুষ, তেমন অন্যদিকে নিরাপত্তার বিষয়টি আঁটোসাঁটো করার কাজ চলছে ৷ ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এসপিজি কমান্ডোরা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ৷ সভাস্থল-সহ, আসা যাওয়ার রাস্তা, হেলিপ্যাড ও গোটা শহরের সার্বিক অবস্থা সমস্তটাই খতিয়ে দেখছেন তাঁরা । ইতিমধ্যে বায়ুসেনার একাধিক হেলিকপ্টার এসে রায়গঞ্জ স্টেডিয়াম ও মিরুয়ালে অবস্থিত বিএসএফ ক্যাম্পের হেলিপ্যাডে এসে ট্রায়াল দিয়ে গিয়েছে ।
আরও পড়ুন: